দুই লেগ মিলিয়ে রোমাঞ্চকর ২১০ মিনিটের খেলা হলো; সঙ্গে ১৩টি গোল। তবে শেষ হাসিটা ইন্টার মিলানের। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মঙ্গলবার (৬ মে) দিবাগত রাতে বার্সালোনাকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়েছে সিমিওনে ইনজাগির দল। দুই লেগেই বার্সার অবিশ্বাস্য দুটা প্রত্যাবর্তন স্বত্তেও ৭-৬ গোলের অ্যাগ্রিগেটে তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে পৌঁছাল নেরাজ্জুরিরা।
অতিরিক্ত সময়ে দাভিদে ফ্রাত্তেসির জয়সূচক গোল ৪-৩ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে ইন্টার। ঠিক সেই মুহুর্তে তাদের ঘরের মাঠ সান সিরোতে আনন্দের বৃষ্টি নামতে শুরু করে, গোটা স্টেডিয়াম উল্লাসে ফেটে পড়ে। ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের যে গল্পে, তার খুব ক্ষুদ্র অংশ এই মুহুর্ত। তার আগে হইয়েছে রীতিমতো একটা থ্রিলার।
বার্সা প্রথম লেগে ২-০ এবং ৩-২ ব্যবধান থেকে ফিরে এসে ৩-৩ সমতায় ম্যাচ শেষ করে। মঙ্গলবার রাতে দ্বিতীয় লেগেও আরেকটি দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করে। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল ২০১৫ সালের পর প্রথম ফাইনালের উঠেই গিয়েছে কাতালান জায়ান্টরা।
আরো পড়ুন:
ইন্টার-বার্সা সেমিফাইনালে ফিরে আসছে ২০১০ সালের স্মৃতি
স্টেগেনের ফেরার ম্যাচে পিছিয়ে পড়েও জিতল ‘কামব্যাক কিং’ বার্সা
প্রথমার্ধে লাওতারো মার্তিনেজ ও হাকান চালহানোয়লুর গোলে ২–০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পরও অবিশ্বাস্যভাবে ফিরে এসেছিল বার্সা। বিরতির পর খেলার নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা এবং ১৫ মিনিটের মধ্যে এরিক গার্সিয়া ও দানি ওলমো গোলে ম্যাচে সমতা আনে অতিথী দলটি। ম্যাচের ৮৮ মিনিটে রাফিনিয়ার গোলে ৩–২ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ফ্লিকের দল। মনে হচ্ছিল ২০১৬-১৭ সালের পর আরেকটি ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য গল্প লিখে ফেলেছে বার্সা।
কিন্তু যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ডেনজেল ডামফ্রিসের ক্রস থেকে গোল করে বার্সাকে স্তব্ধ করে দেন সেন্টারব্যাক ফ্রান্সেসকো আচেরবি। ৩–৩!
অতিরিক্ত সময়ে, ৯৯ মিনিটে ফ্রাত্তেসি ইন্টারকে আবার এগিয়ে নেন। এরপর বাকি দায়িত্ব পালন করেন সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমার। ইয়ামালের দুটি দুর্দান্ত প্রচেষ্টা রুখে দেন তিনি এবং শেষ পর্যন্ত ইন্টার বার্সেলোনার সমস্ত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে ফাইনালে উঠে যায়।
তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ইন্টার এখন ৩১ মে মিউনিখে পিএসজি বা আর্সেনালের বিপক্ষে ফাইনালে খেলবে, যেখানে তারা ২০২৩ সালে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হারের স্মৃতি ভুলে নতুন ইতিহাস গড়ার সুযোগ পাবে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ য ম প য়নস ল গ ইন ট র ম ল ন ম ফ ইন ল ব যবধ ন ইন ট র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিবেশী দেশগুলোয় বড় প্রভাবের শঙ্কা
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এই অঞ্চলের শক্তিশালী দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতা অব্যাহত থাকলে অন্য দেশগুলোতে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে আঞ্চলিক সংহতি আরও বিনষ্ট হবে। বিশেষ করে সার্ক আরও বেশি অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। আটলান্টিক কাউন্সিলের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে বাংলাদেশে। দিল্লির সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক এখন তলানিতে। পারস্পরিক সহযোগিতা ভেঙে পড়তে পারে। বিশেষ করে ভারতপন্থি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে নতুন মেরূকরণ ঘটেছে। ভারতবিরোধী অবস্থানের কারণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার আরও চাপে পড়তে পারে। ঢাকাকে একটি অনিশ্চিত অবস্থানে ফেলে দিতে পারে দিল্লি। পাশাপাশি সার্কভুক্ত শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান এবং মালদ্বীপের মতো দেশগুলোর ভূরাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মীর সংঘাতের তীব্রতা শ্রীলঙ্কার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তাগত অবস্থান নিয়ে দেশটিতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। ছেদ ঘটাতে পারে অভ্যন্তরীণ গতিশীলতায়।
এদিকে নেপাল ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করবে ভারত ও চীনের মধ্যে। নেপালের এই নিরপেক্ষতাকে আরও সন্দেহের চোখে দেখতে পারে ভারত। ইতোমধ্যে বৃহত্তর সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভারতের সঙ্গে নেপালের উত্তেজনা আছে। বিষয়টি দুই দেশের কূটনীতিতে চাপ সৃষ্টি করেছে।
তাছাড়া ঘনিষ্ঠ কৌশলগত সম্পর্কের কারণে ভারতের সঙ্গে ভুটানের নীরবে জোট বাঁধার সম্ভাবনা বেশি। তবে ভারতের যে কোনো বিতর্কিত সামরিক পদক্ষেপ দেশটির উত্তর সীমান্তে চীনা তৎপরতাকে উৎসাহিত করতে পারে। কাশ্মীরে অস্থিরতা মালদ্বীপের ইসলামপন্থি জনগণের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত বাড়লে তা যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চীনের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানকে আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষায় কাজে লাগাতে চায় যুক্তরাস্ট্র। কোয়াড জোটে যা প্রভাব ফেলে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের কৌশলগত মনোযোগ আরও বাড়বে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, কাশ্মীরের উগ্রপন্থি গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে পাকিস্তানের উচিত নিজেদের স্বচ্ছতা প্রমাণ করা। একইভাবে ভারতেরও উচিত বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক বলয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করা, যাতে কাশ্মীরে শান্তি রক্ষায় একটি কার্যকর পথ খোলা থাকে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারে, যাতে সিন্ধুর পানি চুক্তি পুনর্বহাল করা সম্ভব হয় এবং দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি নেওয়া পদক্ষেপগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো যায়।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতে বেসামরিক লোকজন সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ বছরের পর বছর ধরে দুই দেশের চাপ সহ্য করে আসছে। একদিকে দিল্লির নীতির কারণে চাপ, অন্যদিকে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতায় তাদের জীবন চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান সবসময় পারস্পরিক দোষারোপের খেলায় মত্ত থাকে। ভারত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন কাশ্মীরের জনগণ।
গত ২২ এপ্রিল ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হন। নিহতদের অধিকাংশই ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে যাওয়া পর্যটক। এ ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে সেখানে মঙ্গলবার গভীর রাতে বিমান হামলা চালায় ভারত। এতে দেশটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে।