আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হারানো অস্ত্রের সন্ধান দিলে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)।

রবিবার (১০ আগস্ট) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হারানো অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে আমরা একটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হারানো অস্ত্রের সন্ধান দিতে পারবে, তাদের পুরস্কৃত করা হবে। দ্রুত এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হবে যা পরবর্তীতে মিডিয়ায় জানিয়ে দেওয়া হবে।’’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনুমানিক ৭০০ অস্ত্র উদ্ধার এখনো বাকি রয়েছে বলেও তিনি এ সময় জানান। 

গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা ঘটুক সমাজে কেউ চিন্তাও করতে পারে না। জাতি হিসেবে আমরা খুব অসহিষ্ণু হয়ে গেছি। আগে সমাজে কোন খারাপ কাজ ঘটলে লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়তো সেটা প্রতিহত করার জন্য, আজকাল সেটা খুব কমে গেছে। এখন সবাই ভিডিও করে। অপরাধ প্রতিহত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘সবসময় সব জায়গায় তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকেন না। সে সময় উপস্থিত জনতারই প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রতিরোধ বা প্রতিহত করা উচিত।’’

নিউমার্কেট থেকে ১১০০ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.

) বলেন, ‘‘এসব অস্ত্র যারা তৈরি করেন, তাদের আরো সতর্ক হতে হবে। তারা জানে কারা এসব ব্যবহার করছে। যারা এগুলো করছে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’’

সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দায়িত্ব শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নয়। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সর্বোপরি জনগণ। আশাকরি, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবো।’’

উপদেষ্টা এ সময় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের নিরাপত্তার জন্য অস্ত্রসহ একজন বাড়তি আনসার সদস্য (গানম্যান) নিয়োজিত থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান।

উপদেষ্টা আরো জানান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর মধ্যে ৪ দিনব্যাপী (২৫-২৮ আগস্ট) মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলন আগামী ২৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ঢাকার পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরে শুরু হবে।

ব্রিফিংকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মোঃ খোদা বখস চৌধুরী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, পিএসসি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স বর ষ ট উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে

এ দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এ–সম্পর্কিত পরিসংখ্যান একটি ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরছে—অনেক ক্ষেত্রে মানুষের জীবন-মৃত্যু নির্ধারণ করছে মব বা উচ্ছৃঙ্খল জনতা। অপরাধ প্রমাণের তো প্রশ্নই নেই, অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়েরও প্রয়োজন দেখা হচ্ছে না; শুধু সন্দেহবশত মব তৈরি করে কিংবা গণপিটুনি দিয়ে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

মাগুরার মহম্মদপুরে মো. ইসরাফিলকে মুঠোফোন ও টাকা চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার ভাই মামলা করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। পুলিশ বলছে, ঘটনা ‘জটিল’ ও ‘স্পর্শকাতর’। প্রশ্ন হলো, একজন মানুষ হত্যার পর জটিলতার অজুহাত কেন? অপরাধী শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত ‘নীরব’ থাকা কি আদৌ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ?

প্রথম আলোর বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৩ মাসে গণপিটুনিতে ৬৭ জন নিহত হয়েছেন। ৪৬টি ঘটনায় মামলা হলেও গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র ১.২৭ শতাংশ আসামি। অর্থাৎ প্রায় ৯৯ শতাংশ হত্যাকারী নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বিচারব্যবস্থা যখন এমনভাবে ব্যর্থ হয়, তখন নাগরিকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, রাষ্ট্র কোথায়?

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর মব বা গণপিটুনির মতো সহিংসতা আগের চেয়ে বেড়েছে। মানুষের ক্ষোভ ও প্রতিশোধের রাজনীতি যেখানে বিচার-বিবেচনাকে গ্রাস করে, সেখানে গণপিটুনি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। মব সহিংসতার শিকারদের মধ্যে শিশুও যেমন আছে, তেমনি মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষও রয়েছে। আরও ভয়ংকর হলো, কেউ কেউ এসব ঘটনাকে ‘মব জাস্টিস’ বলে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী, অপরাধীও আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাও ন্যায়বিচারের পূর্বশর্ত হিসেবে আদালতের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার কথা বলেছে। তাহলে উচ্ছৃঙ্খল জনতা কীভাবে রাস্তায় ‘বিচার’ চালানোর অধিকার পেল?

পুলিশ কর্মকর্তাদের যুক্তি হলো, গুজব বা তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় ঘটনাগুলো ঘটে এবং জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যখন ঘটনাগুলো সংবাদমাধ্যমের নজরে পড়ে, তখনই কেন গ্রেপ্তার হয়? রংপুরের একটি ঘটনায় দলিত সম্প্রদায়ের দুজনকে হত্যার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যে ঘটনাগুলো আলোচিত নয়, সেখানে তদন্ত ও গ্রেপ্তার শূন্যের কোঠায়। এর মানে স্পষ্ট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ‘সিলেকটিভ’ তৎপরতা চালায়। কিছু ঘটনায় মামলা শেষ পর্যন্ত হয়ই না। পরিবারের সদস্যরা মামলা করতে ভয় পান—শত্রু তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করেন। 

গণপিটুনি শুধু আইন ভাঙা নয়, এটি বর্বরতার চূড়ান্ত। একটি সমাজ তখনই বর্বর হয়, যখন অভিযোগ প্রমাণের আগেই শাস্তি দেওয়া হয়। এ রকম অবস্থায় রাষ্ট্রকে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে: কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন হাতে তুলে নিলে শাস্তি হবেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত প্রতিটি গণপিটুনি মামলার অগ্রগতি কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ এবং অভিযুক্তদের দ্রুত শনাক্তে প্রযুক্তির ব্যবহার করা।

অন্যায়ের বিচার না হলে সেই অন্যায় চলতেই থাকে। শুধু মামলা নেওয়া বা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা নয়; রাষ্ট্রের কর্তব্য ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসন করাও। এর পাশাপাশি ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং মনস্তাত্ত্বিক ও আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। সমাজেরও উপলব্ধি জরুরি—গণপিটুনি ন্যায়বিচার নয়; এটি হত্যাকাণ্ড। ন্যায়বিচার আদালতে হয়, রাস্তায় নয়।

অন্যায় থামাতে হলে একটা মাত্র উদাহরণ দরকার—প্রতিটি মামলায় দ্রুত ও যথাযথ শাস্তি। যখন মনে হবে অপরাধ করলে পার পাওয়া যাবে না, তখনই থামবে এই উন্মাদনা। বিচারহীনতার সংস্কৃতির এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আশুলিয়ার বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলার দাবিতে ৪ কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ
  • আশুলিয়ার সড়কে ৪ কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ
  • উখিয়ায় ভাড়া বাসা থেকে ১৮ রোহিঙ্গা আটক
  • যমুনার আশপাশে ১ লাখ গ্যাস বেলুন ওড়ানোর পরিকল্পনা, গ্রেপ্তার ২৫
  • আ. লীগের ডাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচিতে কেউ মাঠে নামলেই গ্রেপ্তারের নির্দেশ
  • শেখ হাসিনার বিষয়ে রায়ের তারিখ ঘিরে অনিরাপদ বোধ করছে না প্রসিকিউশন
  • সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে, প্রত্যাহারের খবর গুজব: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও মনোনীত প্রার্থীর শোডাউন, প্রশাসনের ১৪৪ ধারা
  • সুনামগঞ্জে ধোপাজান নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা
  • বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে