বছরজুড়ে ভাঙছে কুশিয়ারা বিলীন বসতঘর, ফসলি জমি
Published: 13th, May 2025 GMT
শুকনো মৌসুমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে ভাঙছে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী জনপদ। যাতায়াতের সড়ক, হাট-বাজার, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাড়িঘর ও কবরস্থানসহ বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি।
অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ নষ্ট হওয়ায় বছরজুড়ে ভাঙন অব্যাহত থাকে কুশিয়ারা নদীতে। বিয়ানীবাজার উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ জনপদ এতে ঝুঁকির মধ্যে।
এদিকে নদীর ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর জেলার সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর অববাহিকতায় পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে দুই নদীর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এসব যাচাই নিরূপণ শেষে মন্ত্রণালয়ে সিলেট জেলা সুরমা-কুশিয়ারা নদীর অববাহিকায় সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের নামে চার হাজার কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রেরণ করা হয়েছিল। বিশাল বাজেট হওয়ায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি ফেরত আসে।
এরপর এ প্রকল্পকে তিনটি ফেজে (ধাপে) ভাগ করে প্রথম ফেজের (ধাপের) জন্য এক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানান দায়িত্বশীলরা।
কুশিয়ারা নদীর প্রবল ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে উপমহাদেশের প্রাচীন ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর কওমি মাদ্রাসা। কুড়ারবাজার ইউনিয়নে অবস্থিত এ মাদ্রাসাসহ আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর ও আশপাশের গ্রাম নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে গ্রামবাসী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছের পৃথকভাবে স্মারকলিপি দেন। উপজেলার শতবর্ষের পুরোনো হাট বৈরাগীবাজারও ভাঙনের মুখে রয়েছে। দেশ স্বাধীনের পূর্ব থেকে এখন পর্যন্ত ভাঙনরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয়রা জানান, দায়িত্বশীলরা অনেকবার ভাঙনপ্রবণ এলাকা পরিদর্শন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। অথচ এ বাজার থেকে প্রতি বছর সরকার রাজস্ব আয় করে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা।
সরেজমিন নদী ভাঙনকবলিত বৈরাগীবাজার অংশে গিয়ে দেখা যায়, নদী তীরবর্তী গ্রামীণ সড়ক বিলীন হওয়ার পথে। এর আগে বাজারের পাকা ভবন ভাঙনে বিলীন হয়েছে। চলাচলের রাস্তা ভেঙে বাজারের দোকানপাটের সামনের অংশ ধসে গেছে।
একই অবস্থা আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকা। কবরস্থানসহ মসজিদ, মাদ্রাসা, সড়ক, স্থানীয় ফাঁড়ির বাজার, বসতঘর ও ফসলিজমি ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। নদী ভাঙনরোধে আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও বেগ ফেলে রাখা হয়েছে। গ্রামবাসী জানান, কয়েক মাস ধরে এসব ব্যাগ এভাবে ফেলে রাখা। কিছু শ্রমিক কয়েক দিন কাজ করার পর তারাও চলে গেছে। ব্যাগগুলো পড়ে আছে নদীর পাড়ে।
শুধু কুড়ারবাজার ইউনিয়ন নয়, কুশিয়ারা নদীর ভাঙনের কবলে বিলীন হচ্ছে বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের নয়াদুবাগ, দক্ষিণ চরিয়া, শেওলা ইউনিয়নের বালিঙ্গা, শেওলা, দিঘলবাগ, তেরাদল, কাকরদিয়া, শালেশ্বও, কোনা শালেশ্বরসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। ভাঙনে এসব গ্রামের স্কুল, মসজিদ, বাজার, গ্রামীণ সড়ক, ফসলি জমি ও বসতঘর বিলীন হয়েছে।
বৈরাগীবাজার থেকে প্রতি বছর রাজস্ব আদায় হলেও বাজারটি রক্ষায় দায়িত্বশীলদের কোনো উদ্যোগ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা। স্থানীয় মুরব্বি আক্তারুজ্জামান আজব আলী বলেন, ব্রিটিশ শাসন আলম থেকে বৈরাগীবাজার নদী ভাঙনের মুখে। প্রতি বছর প্রশাসনের লোকজন ভাঙন এলাকা দেখে যান কিন্তু কোনো পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর বৈরাগী বাজার থেকে সরকার রাজস্ব আয় করে ২০ লাখ টাকার বেশি। কুশিয়ারা নদীর ভাঙন থেকে বাজার রক্ষা করতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
অপরিকল্পিতভাবে আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে পৃথক স্মারকলিপি দিয়েছেন আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর কওমি মাদ্রাসা ও গ্রামবাসী। গ্রামের যুবক জুয়েল আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এই এলাকা নদী ভাঙনকবলিত। তিন বছর ধরে এখান থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে এবং নদীতে অস্বাভাবিক গর্ত হওয়ায় গোসল করতে যাওয়া এক কিশোর ডুবে মারাও গেছে।
প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভাঙ্গনের বিষয়টি অবহিত করছেন জানিয়ে কুড়ারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তুতিউর রহমান তুতা বলেন, শতবর্ষী বৈরাগীবাজার রক্ষা করতে এলাকাবাসীর পক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ইউনিয়নের আঙ্গুরা মোহাম্মদপুরসহ ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঝুঁকির মুখে আতঙ্কে রয়েছেন ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা।
ইউএনও গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, গ্রামবাসী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের স্মারকলিপি পেয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দিপক রঞ্জণ দাস বলেন, কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা নিরূপণ করে সিলেট জেলা সুরমা-কুশিয়ারা নদী অববাহিকায় সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রথম ধাপের জন্য এক হাজার ৩০০ কোটির টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের প্রেরণ করা হয়েছে। এ প্রকল্প অনুমোদন পেলে নদী ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নদ ম হ ম মদপ র গ র মব স প রকল প উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে ত্রিপুরা কিশোরীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে বসতঘরে ঢুকে এক ত্রিপুরা কিশোরীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই যুবদল নেতার নাম মো. আবুল কাশেম (৩৭)। গতকাল রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ওই কিশোরীর পরিবারকে থানায় যেতে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
আবুল কাশেম মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা মধ্যম টিলা এলাকার মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে। তিনি করেরহাট ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর পদবির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী কিশোরীর মা ও স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল বিকেলে আবুল কাশেম বাড়ির উঠোনে এসে ওই কিশোরীর কাছে পানি খেতে চান। পানি খাওয়ার পর আবুল কাশেম অতর্কিতে কিশোরীর বসতঘরে ঢুকে পড়েন। এরপর ওই কিশোরীকে শ্লীলতাহানি করেন। একপর্যায়ে কিশোরী আবুল কাশেমের হাত থেকে ছুটে ঘরের বাইরে দৌড় দেয়। তার চিৎকারে আশপাশের বাসিন্দারা জড়ো হলে আবুল কাশেম মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। সন্ধ্যায় কিশোরীর মা–বাবা ও স্থানীয় লোকজন জোরারগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিতে যাওয়ার পথে কয়লা বাজার এলাকায় স্থানীয় একদল লোক তাঁদের থানায় যেতে নিষেধ করেন। আগামী বৃহস্পতিবার তারা এ ঘটনার বিচার করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন।
ভুক্তভোগী কিশোরীর মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বসতঘরে ঢুকে আবুল কাশেম আমার মেয়ের শ্লীলতাহানি করেছে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করতে বের হলে সন্ধ্যায় কয়লা বাজারে কিছু লোক স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দেবে বলে থানায় যেতে দেয়নি। আমি এ ঘটনায় নারী নির্যাতনের মামলা করতে চাই।’
অভিযুক্ত আবুল কাশেম করেরহাট ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বলে নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক জামশেদ আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল কাশেম স্থানীয় এক ত্রিপুরা কিশোরীকে শ্লীলতাহানি করেছেন মর্মে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে আমরা কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। কে বা কারা ওই কিশোরীর পরিবারকে থানায় যেতে বাধা দিয়েছে, সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’
অভিযুক্ত আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি ওই কিশোরীর বাবার কাছে টাকা পাই। সেই টাকা উদ্ধার করতে তার বাড়িতে গেলে মেয়েটির বাবার সঙ্গে আমার কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আমি তাদের বাড়ি থেকে চলে আসি। শ্লীলতাহানির অভিযোগ সত্য নয়। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা আমার পেছনে লেগেছে। তার ইন্ধনে এই ঘটনা সাজানো হয়েছে।’
জানতে চাইলে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, খবর পেয়ে গতকাল রাতেই পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। প্রাথমিকভাবে ওই কিশোরীকে শ্লীলতাহানির সত্যতা পাওয়া গেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।