বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার বিষয় অনেকটা নিশ্চিত করেছে সরকার। গতকাল বুধবার বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এই ঋণের বিষয়ে সম্মতি পাওয়া গেছে। চলতি মাসে বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদনের পর দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি হবে। জুনের পর ঋণ পাবে সরকার। অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইআরডির বিশ্বব্যাংক অনুবিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) এ কে এম শাহাবুদ্দিন। অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, সদ্য বিলুপ্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের প্রতিনিধি এবং বিশ্বব্যাংকের ১২ সদস্য বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এতে ভার্চুয়ালি যোগ দেন ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর। সংস্থাটির যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের প্রধান কার্যালয় থেকে যুক্ত ছিলেন তাদের আইন বিভাগের প্রতিনিধিরা।
বৈঠক শেষে ইআরডির বিশ্বব্যাংক অনুবিভাগের প্রধান এ কে এম শাহাবুদ্দিন সমকালকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। এখন বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদন হলে মে মাসের মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হবে। এর পর জুনের দিকে ঋণ পাওয়া যাবে। ঋণের সুদের হার ও পরিশোধের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বোর্ড সভায় অনুমোদনের আগে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না।
জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সামষ্টিক অর্থনীতি-১) জিয়াউল আবেদীন সমকালকে বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে বিশ্বব্যাংক ৯টি শর্ত দিয়েছিল। আমরা সব শর্ত পূরণ করেছি। সর্বশেষ এনবিআর বিলুপ্ত করে আমরা শর্ত পূরণ করেছি। ফলে গতকাল শুধু ঋণ পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, জুনের শেষ দিকে ঋণ পাওয়া যাবে। আগামী বাজেটে এই টাকা যুক্ত হবে।’
গত সোমবার গভীর রাতে জাতীয় রাজস্ব বিভাগ (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার আগে সরকারকে আরও আটটি শর্ত পূরণ করতে হয়েছে। এর মধ্যে ছিল– অডিট অধ্যাদেশ জারি, প্রকিউরমেন্ট আইন সংশোধন, স্বাধীনভাবে পরিসংখ্যান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ক্ষমতা প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তার সব তথ্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের উদ্যোগ, ভালো ও খারাপ ঋণ চিহ্নিত করা, করছাড় যৌক্তিকীকরণ, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব আহরণ কৌশল, দুর্বল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা এবং অবসায়নের জন্য ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ জারি।
কলম বিরতিতে সারাদেশে রাজস্ব কর্মকাণ্ড প্রায় অচল
এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা– এ দুই ভাগে ভাগ করা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সারাদেশে গতকাল কলম বিরতি পালন করছেন এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, বাজেট ও রপ্তানি-সংক্রান্ত কার্যক্রম এ কর্মসূচির বাইরে ছিল।
মঙ্গলবার এনবিআরের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ থেকে তিন দিনের এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, কর্মকর্তারা যথারীতি নিজ নিজ দপ্তরে ছিলেন। তবে তারা কোনো কাজ করেননি। রাজস্ব ভবনের প্রায় সবগুলো ফ্লোর ফাঁকা দেখা গেছে। এনবিআরের ভবিষ্যৎ কী হবে, পদায়ন কীভাবে হবে, তারা কে কার নিয়ন্ত্রণে যাবেন– এসব নিয়েই আলোচনা ছিল নিজেদের মধ্যে। তবে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনবিআরের কর, শুল্ক ও মূসক নীতি বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।
কলম বিরতির ঘোষণার কারণে সেবাপ্রত্যাশী গ্রাহকেরও তেমন আনাগোনা দেখা যায়নি এনবিআরে। ফলে দুপুর ১টার পর তারা কর্মে ফিরলেও গতকাল এক প্রকার নিষ্প্রাণ ছিল রাজস্ব ভবন।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, শুধু ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় এনবিআরের অধীন প্রতিটি কর, কাস্টসম ও ভ্যাট অফিসেও কলমবিরতি পালন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতি ও আগামী শনিবার একইভাবে এই কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
অতিরিক্ত কমিশনার (কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট) সাধন কুমার কুণ্ডু বলেন, এই আন্দোলন একটা প্রতীকী বার্তা। এর অর্থ সরকারের কাছে কর্মকর্তাদের কিছু বলার আছে। দেশের ও দশের ভালোর জন্য সবার অংশগ্রহণ ও মতামতের ভিত্তিতে যে উদ্যোগ নেওয়া হবে তা সবাই মেনে নেবে। এ ক্ষেত্রে সবার দাবি, এই অধ্যাদেশ বাতিল করে অংশীজন নিয়ে নতুন করে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে হবে। আন্দোলের কারণে রাজস্ব আদায় বিঘ্নিত হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৮ ঘণ্টার বদলে ৩ ঘণ্টা কাজ করলে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ হবে না। এটাই স্বাভাবিক।
তবে রাজস্ব বোর্ডের একজন সদস্য দাবি করেছেন, এনবিআরের কোথাও কর্মবিরতি চলছে না। বিশেষ করে তাঁর অধীনের কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন বলে জানান তিনি। এই সদস্য বলেন, নতুন অধ্যাদেশে কর্মকর্তাদের স্বার্থে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। কর, কাস্টম ও ভ্যাট– এই তিন বিভাগে পদায়ন ও পদোন্নতির বিষয়ে আইন রয়েছে। আইন অনুযায়ী সব কিছু হবে। বিষয়গুলো স্পষ্ট হলে অচিরেই আন্দোলন থেমে যাবে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের স্বার্থে রাজস্ব ব্যবস্থার একটি যুগোপযোগী ও টেকসই সংস্কার অত্যন্ত প্রয়োজন। রাজস্বসেবা বিঘ্নিত হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করে এতে বলা হয়, এই সাময়িক ত্যাগ দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও রাজস্ব ব্যবস্থার টেকসই সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।
অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কর ও শুল্ক ক্যাডারের দুই সংগঠন শুরুতে থেকেই অনড় ছিল। তবে এখন দুই সংগঠনের শীর্ষ নেতারা পিছু হটছেন। তারা নিজেদের পদোন্নতির সুযোগ নিয়ে চুপসে গেছেন বলে সংগঠনের অন্য নেতাদের অভিযোগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে সমিতির পদে থাকা অনেক কর্মকর্তা গতকাল পদত্যাগও করেছেন।
৫১ সদস্যের কর ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের ১৮ জন ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। আর কাস্টমস ও ভ্যাট ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের ২১ সদস্যের কমিটি হওয়ার পরই ৫ জন কর্মকর্তা অবসরে চলে যান। বাকি ১৬ জনের মধ্যে ১২ জনই পদত্যাগ করেছেন। এদের মধ্যে সমিতির সহসভাপতি, মহাসচিব, ট্রেজারার, যুগ্ম মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা রয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ বব য ক র কর মকর ত র কর ম কর ছ ন সরক র গতক ল সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
জাল নোট ও তৈরির সরঞ্জামসহ চক্রের ছয় সদস্য গ্রেপ্তার
বনানী থানার মহাখালীতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাল নোট ও জাল নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামসহ সংঘবদ্ধ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৩ মে) সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ এই চক্রকে গ্রেপ্তার করে।
মহাখালী পুলিশ বক্সের সামনে তিনজন ব্যক্তি জাল নোট ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য অবস্থান করছে জানতে পেরে উল্লেখিত দিন সকালে অভিযান চালায় ডিবির টিম। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সংঘবদ্ধ চক্র কৌশলে পালানোর চেষ্টাকালে ডিবির টিম মোঃ সাইফুল ইসলাম ও রেজাউল করিম রেজাকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে চার হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোট উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতে পঞ্চগড় সদর থানাধীন ব্যারিস্টার বাজার এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মোঃ সাইদুর রহমান ওরফে সবুজ, মোঃ সোহেল মাহামুদ, মোঃ সোহেল ও মোঃ শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত সবুজ ও সোহেল মাহামুদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক তাদের বাড়িতে তল্লাশী করে প্রায় ৭৮ হাজার টাকা মূল্যমানের জাল নোট, জাল নোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ও জাল নোট বিক্রির নগদ দুই লাখ ১৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে জাল নোট তৈরি করে রাজধানীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছিল। তারা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ জাল নোট তৈরি ও সরবরাহের পরিকল্পনা করছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ঢাকা/এম/আর