গত কিছুদিন ধরিয়া ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী–বিএসএফ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়া দলে দলে মানুষকে বাংলাদেশে যে ‘পুশইন’ করিয়া চলিয়াছে, উহা অনাকাঙ্ক্ষিত তো বটেই; সৎ প্রতিবেশীসুলভও নহে। শনিবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৪ হইতে ১৫ মে পর্যন্ত মেহেরপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরা– বাংলাদেশের এই পাঁচ জেলার সীমান্ত দিয়া বিএসএফ অন্তত ৩১৮ জনকে ঠেলিয়া দিয়াছে। অধিকতর উদ্বেগজনক হইল, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার এহেন চূড়ান্ত অকূটনৈতিক আচরণের প্রতিবাদ জানাইবার পরও ভারত সরকার পুশইন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখিয়াছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী প্রবেশপথের নিকট প্রায় ১৫০ জনকে জড়ো করা হয়, যদিও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি অবগত হইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকায় বিজিবি রাতভর টহল জোরদার করিলে উক্ত পুশইন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। শুধু উহা নহে, বৃহস্পতিবার রাত্রি ২টার দিকে উক্ত জেলার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়া ৭৫০ নারী-পুরুষকে পুশইন করিবার চেষ্টা চালায় বিএসএফ। এই ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থান গ্রহণকারী বিজিবির সহিত স্থানীয় জনতাও যোগ দেয়। পরিস্থিতি বুঝিতে পারিয়া বিএসএফ অকুস্থল হইতে সরিয়া যায়। এই অবস্থায় বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় উদ্বেগ-উত্তেজনা সৃষ্টি হইয়াছে। এলাকাবাসী আতঙ্কের সহিত নিরাপত্তহীনতায়ও ভুগিতেছে। এমনিতেই সীমান্ত হত্যা, আন্তঃনদীর পানি সমস্যাসহ দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত নানা সংকটের কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে একটা শীতল ভাব চলিতেছে, যাহা উভয় দেশেরই জনগণের জন্য নানাবিধ কষ্টের কারণ হইয়া রহিয়াছে। এই অবস্থায় পুশইন সমস্যা নিশ্চিতভাবে দুই দেশের সম্পর্কে অধিকতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে।
আমরা জানি, ভারতের কিছু বিশেষ মহল দীর্ঘদিন ধরিয়া বাংলাদেশ হইতে সেই দেশে অনুপ্রবেশ ঘটিবার অভিযোগ করিয়া আসিতেছে, বিশেষত দিল্লিতে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হইবার পর তাহা নূতন মাত্রা পায়। আমরা ইহাও জানি, ভারতেরই বহু পর্যবেক্ষক মনে করেন, এহেন অভিযোগের সহিত দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির একটা সংযোগ রহিয়াছে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের জনমত নিজেদের পক্ষে টানিবার লক্ষ্যেই বিজেপি নেতৃবৃন্দ এই ইস্যুটি ব্যবহার করেন বলিয়া অভিযোগ রহিয়াছে। তাহাদের নিকট বাংলাভাষী মাত্রই বাংলাদেশি, আর এই অভিযোগে রাজ্যটির বর্তমান সরকারকে কথিত অনুপ্রবেশের দায়ে দাগাইয়া দেওয়া যায়। যেই কারণে কোনো যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে বিভিন্ন বিজেপিশাসিত রাজ্য হইতে বাংলাভাষীদের আটক করিয়া বাংলাদেশে পুশইন করা হইতেছে। বাংলাদেশ সরকার বরাবরই বলিয়া আসিতেছে, প্রকৃত কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে বেআইনিভাবে অবস্থান করিলে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁহার প্রত্যাবাসনে কোনো বাধা নাই। উপরন্তু, বাংলাদেশের তো বটেই, ভারতেরও আইন অনুযায়ী পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেপ্তার করিলে তাঁহাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করিতে হয়। এই নিয়ম বিদেশিদের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। ভারতের মানবাধিকার সংগঠন ‘মাসুম’-এর প্রধান কিরীটী রায় বিবিসি বাংলাকে বলিয়াছেন, ‘বিদেশ হইতে কেহ যদি পাসপোর্ট-ভিসা ব্যতিরেকে ভারতে আসেন, তাহা হইলে তাঁহাকে চিহ্নিত করিয়া গ্রেপ্তার করিয়া ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে হাজির করিতে হয়। উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিদেশি আইনের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী মামলা হয়। মামলায় সেই ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হইলে তাঁহার সাজা হইবে। সাজার মেয়াদ উত্তীর্ণ হইলে আদালতের মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেই দেশ হইতে আসিয়াছেন, তথায় ফেরত পাঠাইতে হইবে।’ কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বরাবরই সেই আইন উপেক্ষা করিয়াছে, অদ্যাবধি যাহা অব্যাহত আছে। জানা গিয়াছে, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারতের নানা রাজ্যে অনুপ্রবেশকারী খুঁজিবার অভিযান শুরু হয়। সেই অভিযানে আটককৃতদেরই অনেককে বাংলাদেশে ঠেলিয়া দিতেছে বিএসএফ। এমনকি পুশইনের শিকার অনেকে নির্যাতনের অভিযোগও করিয়াছেন, যাহা মানবাধিকারের চূড়ান্ত লঙ্ঘন।
আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারকে ভারতের সহিত সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে কূটনৈতিক প্রয়াস জোরদার করিতে হইবে। এই ক্ষেত্রে দুই দেশের মানবাধিকার সংগঠন এবং জনগণকেও সোচ্চার হইবার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যায়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এসএফ র সহ ত অন য য় প রব শ প শইন অবস থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সীমান্তে পুশইনের খবরে রাতে মসজিদে মাইকিং, বিজিবির টহল জোরদার
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) পুশইন করতে পারে এমন আশঙ্কায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর সীমান্তের সিংগারবিল ইউনিয়নের নলগড়িয়া ও নোয়াবাদী এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে টহল জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
ভারতীয় নাগরিকদের বিএসএফের পুশইনের খবরে রাতে স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করে লোকজনদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অনুপ্রবেশ ঘটেনি বলে নিশ্চিত করে বিজিবি জানিয়েছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
জানা গেছে, আগরতলা বিমানবন্দরের পাশের গেটের কাছে প্রায় ১৫০ জন ভারতীয় নাগরিককে জড়ো করা হয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি রাতজুড়ে সীমান্তে টহল জোরদার করে।
নোয়াবাদী গ্রামের আনিস মিয়া ও নলগড়িয়া গ্রামের ফজলুল হক জানান, বিজিবির টহল তৎপরতা বেড়ে গেলে সীমান্ত এলাকায় গ্রামবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় কয়েকটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘটনাস্থলের ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে, যা আরও আতঙ্ক বাড়িয়ে দেয়।
২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহমেদ বলেন, বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে আমরা সীমান্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছি। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় নাগরিকদের পুশইনের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে ওই এলাকায় টহল জোরদার করা হয়।