মে মাসের অর্ধেক পার হয়েছে। এপ্রিলের বেতন এখনও পাননি সারাদেশের পৌনে ৫ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী। এরা সবাই মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও)ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যাচ্ছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক কর্মকর্তার অসুস্থতার কথা। এমন অবস্থায় আজ মাউশি ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা।

মাউশি সূত্র জানায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রস্তুত করে এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেল। এই সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান অসুস্থ। তাই বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রস্তুত করা যায়নি।

জানা গেছে, আজিজুর রহমান অসুস্থ। বিকল্প জনবল না থাকায় বেতন বিল তৈরির কাজ সম্পূর্ণ থমকে আছে। ফলে শিক্ষকরা তাদের ড্যাশবোর্ডে প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে পাচ্ছেন না। অনেকের আশঙ্কা, বড় কোনো সংকট ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

সূত্র বলছে, ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) পদ্ধতিতে বেতন দেওয়ার জন্য মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করলেও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি। একজন কর্মকর্তার ওপর নির্ভরশীল এ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠেছে।

শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, দেশে অনেক আইটি বিশেষজ্ঞ থাকলেও মাউশি তাদের সাহায্য নিচ্ছে না। মার্চে যারা ইএফটির মাধ্যমে বেতন পেয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ অবসরে গেলে, মারা গেলে বা চাকরি ছাড়লে সফটওয়্যারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন স্থগিত হওয়ার কথা। তাহলে অন্যদের বেতন বিলম্বিত হওয়ার কারণ গ্রহণযোগ্য নয়।

বেসরকারি শিক্ষকদের অভিযোগ, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যথাসময়ে বেতন পেলেও এমপিওভুক্তরা বারবার বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।

জানা গেছে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এক লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটির আওতায় আসেন। এর পর ধাপে ধাপে আরও প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক ইএফটিতে যুক্ত হন। তবে বহু শিক্ষক এখনও এ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি।

শিক্ষকদের তথ্যভিত্তিক নানা ত্রুটি (এনআইডি, এমপিওশিট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা জন্মতারিখ ও নামের বানানগত অসংগতি) দূর করা যায়নি। ফলে তাদের বেতন আটকে আছে। কেউ সংশোধনের আবেদন করলেও তা নিষ্পত্তি হয়নি।

ইএমআইএস সেলের প্রোগ্রামার মো.

জহির উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘কাজ এখনও শেষ হয়নি। তবে দ্রুত শেষ হবে।’

মাউশির কর্মকর্তারা জানান, কাজ শেষ হলেও শিক্ষকদের বেতন পেতে আরও চার-পাঁচ দিন লাগবে। ফলে এ সপ্তাহে কাজ শেষ না হলে এপ্রিলের বেতন পৌঁছতে পারে মে মাসের শেষ সপ্তাহে।

এই সংকট নিরসনে দ্রুত ও দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং আইটি সহযোগিতা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ সমকালকে বলেন, একজন কর্মকর্তার অসুস্থতার কারণে পাঁচ লাখ 
শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ থাকতে পারে না। এটি বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর প্রতি অবহেলা ও ষড়যন্ত্র। ঈদুল আজহার আগে পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতাসহ মে মাসের বেতন না দেওয়ার জন্য এটি ষড়যন্ত্র হতে পারে। 

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান ও পরিচালক (মাধ্যমিক) কে এম এ এম সোহেল সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। গত বৃহস্পতিবার দফায় দফায় কল করলেও তারা ফোন ধরেননি।

আজ মাউশি ঘেরাও

শনিবারের মধ্যে এপ্রিল মাসের বেতন ছাড় না হলে আজ রোববার সকাল ১০টায় মাউশি ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করার দাবিতে পরিষদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি থেকে গতকাল শনিবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

কর্মসূচি থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে ঈদুল আজহার আগে পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার দাবি জানানো হয়েছে।

অবস্থান কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব শিক্ষক নেতারা অংশ নেন, তারা নানা বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন। শিক্ষকরা বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে। বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করতে হবে। আর্থিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সব বাধা ঘুচিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র শ ক ষকদ র শ ক ষকর ব সরক র এমপ ও

এছাড়াও পড়ুন:

সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামীকাল সোমবার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাজা দিলে ‘রেড নোটিশ’ জারি করতে ইন্টারপোলের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ (দণ্ডাদেশের পরোয়ানা) আবেদন করা হবে।

আজ রোববার সকালে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম এ কথা বলেন। তাঁকে ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছিল প্রসিকিউশন। ইন্টারপোল কোনো রকম সাড়া দেয়নি।

এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে প্রসিকিউশন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছিল। কালকে (সোমবার) যদি রায় হয় এবং রায়ে যদি ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদান করেন, তাহলে ইন্টারপোলে আরেকটি ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ (দণ্ডাদেশের পরোয়ানা) আবেদন করবে প্রসিকিউশন তাঁর বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের (অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী) বিরুদ্ধে করা একটি মামলার রায় দেওয়া হবে আগামীকাল সোমবার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় দেবেন।

একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শেখ হাসিনা সম্প্রতি বেশ কিছু সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি সরাসরি হত্যার নির্দেশ কাউকেই দেননি। যেটা আইনজীবী বোধ হয় এই আদালতে খানিকটা বলেছিলেন।

এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, এই ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে তিনি সব কথা বলতে পারবেন। হাজির না হয়ে তিনি যেসব কথা বলবেন, সেটা আইনের দৃষ্টিতে কোনো বক্তব্যই নয়। সামাজিক দৃষ্টিতে বক্তব্য। প্রসিকিউশন মনে করে, এখানে যে মামলা হয়েছে, এটা তিনি জানেন না বা জানতেন না, এটা বলার আর সুযোগ থাকছে না শেখ হাসিনার। তাঁর ভয়েস রেকর্ড (কণ্ঠস্বর) বাজিয়ে শোনানো হয়েছে উন্মুক্ত আদালতে, যা সম্প্রচার হয়েছে। সেখানে শোনা গেছে, শেখ হাসিনা নিজ মুখে এই আদেশটা দিয়েছেন কথোপকথনের মাধ্যমে। অপরাধী পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, কেউই স্বীকার করেনি যে তারা অপরাধী। তারই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন যে শেখ হাসিনা আদৌ অপরাধী, কি অপরাধী নন।

ভারতে বসে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকার দেওয়ার যে সুযোগ পাচ্ছেন, সেটি কি শুধু শেখ হাসিনার বিষয়ই থেকে যাচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, বিষয়টি প্রসিকিউশন সম্পূর্ণভাবে সরকারের ও কূটনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখছে। প্রসিকিউশন বা বিচারব্যবস্থা এটাকে (শেখ হাসিনার বক্তব্যকে) কোনো আমলে নিচ্ছে না।

ট্রাইব্যুনালের আদেশ মেনে নেবে প্রসিকিউশন

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, ট্রাইব্যুনালের কাছে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রার্থনা করেছে প্রসিকিউশন। শুধু তা–ই নয়, এই আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে এই মামলায় বা এই ঘটনায় যাঁরা ভুক্তভোগী আছেন, শহীদ আছেন, আহত পরিবার আছে, তাঁদের বরাবর হস্তান্তরের প্রার্থনাও জানানো হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল ন্যায়বিচারের স্বার্থে যে আদেশই দেবেন, প্রসিকিউশন তা মেনে নেবে।

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, চব্বিশের আগের ট্রাইব্যুনালের নাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হলেও সেখানে আন্তর্জাতিক আইনের কোনো প্রযোজ্যতা ছিল না। গণ-অভ্যুত্থানের পর আইন সংশোধন করে আন্তর্জাতিক আইন, অর্থাৎ রোম স্ট্যাটিউটে যে আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞা এবং অ্যাপ্লিক্যাবিলিটি (প্রযোজ্যতা) আছে, সেটা এখানে প্রযোজ্য করা হয়েছে।

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে যে কয়েকটি অভিযোগ এই তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে, একই অভিযোগ যদি দেশের অন্য কোনো আদালতে কোনো মামলা থেকে থাকে, সেগুলো আর চলবে না। কারণ, সাংবিধানিক অধিকার হলো একই অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে দুবার শাস্তি বা দুবার বিচার করা যাবে না। এর বাইরে যদি অন্য কোনো অভিযোগ থেকে থাকে, সেটি চলতে পারে।

পলাতক অবস্থায় শেখ হাসিনা আপিল করতে পারবেন না

এ মামলার আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক। তাঁদের সাজা হলে আপিল করার সুযোগ থাকবে কি না, এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, অবশ্যই না। এ মামলার যেসব আসামি পলাতক আছেন, তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়া ছাড়া আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবেন না।

মামলার প্রধান আসামি একজন নারী। নারী হওয়ার কারণে আইনে বিশেষ কোনো সুবিধা তিনি পাবেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিআরপিসিতে জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে নারী, অসুস্থ, কিশোর, বালক, শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে সাধারণ আইনেও কোনো আলাদা প্রিভিলেজ (অগ্রাধিকার) দেওয়া হয় না। ট্রাইব্যুনাল আইনেও কোনো আলাদা প্রিভিলেজ নেই। অতএব রায় প্রদানের ক্ষেত্রে আসামি নারী হোক, পুরুষ হোক, তিনি তাঁর অবস্থানে থেকে কী অপরাধ করেছেন, সেই অপরাধের গ্র্যাভিটি বিবেচনা করে শাস্তি প্রদান করা হবে বা মামলা প্রমাণ না হলে খালাস প্রদান করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘১৫ হাজার সেফটিপিন শাড়িতে লাগালেও, তারা খুঁত বের করবে’
  • এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প
  • এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী কারা, কীসের ব্যবসা তাঁদের
  • করদাতা মারা গেলেও যে কারণে কর দিতে হয়, কীভাবে দেওয়া হয়
  • ৩ কোটি টাকা, ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ আরও যা যা পান একজন মিস ইউনিভার্স
  • গায়িকা থেকে বিধায়ক, মৈথিলীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী চমকে ওঠার মতো
  • সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলেন উপদেষ্টার এপিএস
  • বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’
  • সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে
  • ভয়াবহ আগুন কলকাতার বড়বাজারে, ঘটনাস্থলে দমকলের ২০ ইঞ্জিন