একজনের অসুস্থতায় আটকা ৪ লাখ শিক্ষকের বেতন, আজ মাউশি ঘেরাওয়ের ঘোষণা
Published: 18th, May 2025 GMT
মে মাসের অর্ধেক পার হয়েছে। এপ্রিলের বেতন এখনও পাননি সারাদেশের পৌনে ৫ লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী। এরা সবাই মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও)ভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যাচ্ছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক কর্মকর্তার অসুস্থতার কথা। এমন অবস্থায় আজ মাউশি ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা।
মাউশি সূত্র জানায়, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রস্তুত করে এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেল। এই সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান অসুস্থ। তাই বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রস্তুত করা যায়নি।
জানা গেছে, আজিজুর রহমান অসুস্থ। বিকল্প জনবল না থাকায় বেতন বিল তৈরির কাজ সম্পূর্ণ থমকে আছে। ফলে শিক্ষকরা তাদের ড্যাশবোর্ডে প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে পাচ্ছেন না। অনেকের আশঙ্কা, বড় কোনো সংকট ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
সূত্র বলছে, ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) পদ্ধতিতে বেতন দেওয়ার জন্য মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করলেও কার্যকর কোনো সমাধান আসেনি। একজন কর্মকর্তার ওপর নির্ভরশীল এ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠেছে।
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, দেশে অনেক আইটি বিশেষজ্ঞ থাকলেও মাউশি তাদের সাহায্য নিচ্ছে না। মার্চে যারা ইএফটির মাধ্যমে বেতন পেয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ অবসরে গেলে, মারা গেলে বা চাকরি ছাড়লে সফটওয়্যারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন স্থগিত হওয়ার কথা। তাহলে অন্যদের বেতন বিলম্বিত হওয়ার কারণ গ্রহণযোগ্য নয়।
বেসরকারি শিক্ষকদের অভিযোগ, সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যথাসময়ে বেতন পেলেও এমপিওভুক্তরা বারবার বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন।
জানা গেছে, এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এক লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ইএফটির আওতায় আসেন। এর পর ধাপে ধাপে আরও প্রায় দেড় লাখ শিক্ষক ইএফটিতে যুক্ত হন। তবে বহু শিক্ষক এখনও এ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি।
শিক্ষকদের তথ্যভিত্তিক নানা ত্রুটি (এনআইডি, এমপিওশিট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা জন্মতারিখ ও নামের বানানগত অসংগতি) দূর করা যায়নি। ফলে তাদের বেতন আটকে আছে। কেউ সংশোধনের আবেদন করলেও তা নিষ্পত্তি হয়নি।
ইএমআইএস সেলের প্রোগ্রামার মো.
মাউশির কর্মকর্তারা জানান, কাজ শেষ হলেও শিক্ষকদের বেতন পেতে আরও চার-পাঁচ দিন লাগবে। ফলে এ সপ্তাহে কাজ শেষ না হলে এপ্রিলের বেতন পৌঁছতে পারে মে মাসের শেষ সপ্তাহে।
এই সংকট নিরসনে দ্রুত ও দক্ষ জনবল নিয়োগ এবং আইটি সহযোগিতা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা।
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ সমকালকে বলেন, একজন কর্মকর্তার অসুস্থতার কারণে পাঁচ লাখ
শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ থাকতে পারে না। এটি বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর প্রতি অবহেলা ও ষড়যন্ত্র। ঈদুল আজহার আগে পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতাসহ মে মাসের বেতন না দেওয়ার জন্য এটি ষড়যন্ত্র হতে পারে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান ও পরিচালক (মাধ্যমিক) কে এম এ এম সোহেল সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। গত বৃহস্পতিবার দফায় দফায় কল করলেও তারা ফোন ধরেননি।
আজ মাউশি ঘেরাও
শনিবারের মধ্যে এপ্রিল মাসের বেতন ছাড় না হলে আজ রোববার সকাল ১০টায় মাউশি ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করার দাবিতে পরিষদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি থেকে গতকাল শনিবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
কর্মসূচি থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে ঈদুল আজহার আগে পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার দাবি জানানো হয়েছে।
অবস্থান কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যেসব শিক্ষক নেতারা অংশ নেন, তারা নানা বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন। শিক্ষকরা বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে। বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করতে হবে। আর্থিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সব বাধা ঘুচিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র শ ক ষকদ র শ ক ষকর ব সরক র এমপ ও
এছাড়াও পড়ুন:
হোটেলে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের লাশ: প্রশ্ন অনেক, উত্তর খুঁজছে পুলিশ
রাজধানীর মগবাজারের আবাসিক হোটেলে স্ত্রী-সন্তানকে রেখে ওই রাতে বাইরে গিয়েছিলেন প্রবাসী মনির হোসেন। এর আগে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। ফোন পেয়েই বাইরে যান মনির। ঘণ্টাখানেক পর রাত ১১টার দিকে পাঁচ লিটার পানির বোতল ও খাবার নিয়ে হোটেলে ফিরে আসেন। এই এক ঘণ্টা কার সঙ্গে ছিলেন, যে খাবার সবার জন্য নিয়ে আসেন, সেগুলো তাঁর নিজের কেনা নাকি কেউ দিয়েছিলেন? হোটেলে ফিরেও বিভিন্নজনের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তাঁর। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন পুলিশের তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।
হোটেলে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের ধারণা– মনির, স্ত্রী নাসরিন আক্তার স্বপ্না ও ছেলে নাঈম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে বিষক্রিয়ায়। তবে সাধারণত ‘ফুড পয়জনিং’ বলতে যা বোঝায়, তেমন কিছু হলে প্রায় একই সময় তিনজনের মৃত্যু হওয়ার কথা না। এ ছাড়া যদি রেস্তোরাঁর খাবারে বিষক্রিয়া থাকত, তাহলে আরও অসুস্থ কিংবা মৃত্যুর খবর পাওয়া যেত। সন্দেহ করা হচ্ছে খাবারের সঙ্গে বিষ মেশানো হতে পারে। তবে কে বা কারা এই কাজটি করেছেন তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম সমকালকে বলেন, আদ্-দ্বীন হাসপাতালে দু’জনকে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয়েছিল। হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার পরই মারা যান মনির হোসেন।
প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, বিষক্রিয়ায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে এটি খাবারের সঙ্গে ছিল, নাকি কেউ মিশিয়ে দিয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। রেস্তোরাঁ ও আবাসিক হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত মনিরের সঙ্গে ফোনে একাধিক ব্যক্তির কথা হয়। এই তালিকায় স্বজন রয়েছে। পরিবহন ব্যবসা ছাড়াও বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাঁর। বাস কিংবা অন্য কোনো সম্পদ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কারও ঝামেলা আছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। সন্দেহজনক জায়গায় কাজ করছে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনির নব্বইয়ের দশকে শ্রমিক ভিসায় সৌদি আরবে যান। পরে দেশটিতে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন তিনি। সেই অর্থ দিয়ে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দেহলায় এবং ঢাকা কেরানীগঞ্জে সম্পদ গড়েন। রামগঞ্জ-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে তার মালিকানায় পাঁচটি যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে ২০১২-১৩ সালে তিনতলা ও পাঁচতলা দুটি বাড়ি কেনেন।
এই বাড়ি থেকে প্রতি মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা ভাড়া ওঠে। বাড়ি দুটি দেখভাল করেন তাঁর দূর সম্পর্কের চাচা একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম। এই বাড়ি কেনার জন্য সে সময় এক কোটি টাকা বিদেশ থেকে রফিকুলের ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়েছিলেন তিনি। চাচা তাঁর খুব বিশ্বস্ত ছিলেন। দেশে তাঁর সব সম্পদের হিসাব তিনি ছাড়াও স্ত্রী স্বপ্না এবং কেয়ারটেকার রফিকুল জানতেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈমের চিকিৎসা করানোর জন্য তাকে নিয়ে মনির ও স্ত্রী স্বপ্না শনিবার গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন। ওই দিন চিকিৎসকের দেখা না পাওয়ায় মগবাজার মোড়-সংলগ্ন সুইট স্লিপ আবাসিক হোটেলে ওঠেন। তাঁর ঘনিষ্ঠজন এবং বাড়ি দেখভালের দায়িত্বে থাকা রফিকুল রাত ৮টা পর্যন্ত হোটেলে অবস্থান করেন। তাদের খাবার কিনে এনে দেন তিনি। রাত ৮টার পর চলে যান। রাত ১০টায় ফোন পেয়ে মনির বাইরে বের হন। ঘণ্টাখানেক পর পানি এবং আবারও খাবার নিয়ে হোটেলে আসেন। সেই খাবার খান তারা। রাতেই স্ত্রী-সন্তানসহ মনির অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমি করেন সবাই।
পরদিন সকাল ৬টা ৩৬ মিনিটে তিনি রফিকুলকে ফোন করে অসুস্থতার কথা জানিয়ে তাঁকে দ্রুত হোটেল আসতে বলেন। সাড়ে ৭টায় রফিকুল সেখানে আসেন এবং মগবাজার মোড় এলাকার একটি ফার্মেসির এক কর্মচারীকে হোটেলে নিয়ে যান। ফার্মেসির ওই ব্যক্তি তাদের ওষুধ দিয়ে বের হয়ে যান। অসুস্থতার খবর শুনে রফিকুলের মেয়ে হোটেলে আসেন। স্ত্রী-সন্তানসহ মনির অসুস্থ হলেও সে খবর হোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জানাননি তিনি এবং রফিকুল। বেলা ১১টার পর যখন প্রথমে অসুস্থ স্বপ্নাকে রফিকুল ও তাঁর মেয়ে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যান, তখন হোটেলের কর্মচারীরা বিষয়টি জানতে পারেন। পরে নেওয়া হয় মনির ও তাঁর ছেলে নাঈমকে।
খবর পেয়ে পুলিশ আদ্-দ্বীন হাসপাতাল থেকে রোববার রাতে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। সোমবার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। রাতে তিনজনের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্বজন।
সোমবার রাতে রমনা থানার এক কর্মকর্তা জানান, মামলা হয়নি, তবে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রোববার রফিকুল, তাঁর মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে রফিকুলকে থানায় রেখে অপর দু’জনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
মনিরের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন বলেন, মনির প্রায় ৩০ বছর সৌদিপ্রবাসী ছিলেন। তাঁর তিন ভাইও প্রবাসী। বড় ভাই নুরুল আমিন ইতালি থেকে সোমবার সন্ধ্যায় দেশে ফেরেন।