ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, আসামসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের বিস্কুট, কেক, চিপস, ফলের ড্রিংকস—এসব পণ্য বেশ জনপ্রিয়। ওই অঞ্চলে বাংলাদেশি ব্র্যান্ড প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এসব পণ্য বেশ চলে। দিন দিন রপ্তানিও বাড়ছে।

কিন্তু গতকাল শনিবার ভারত সরকার বাংলাদেশের ফলের ড্রিংকস, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, বিস্কুট, কেক, চিপস, স্ন্যাক্সের আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম সীমান্তের সব শুল্কস্টেশন এবং পশ্চিমবঙ্গের চেংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী দিয়ে এসব পণ্য আমদানি বন্ধ করা হয়।

এতে বিপাকে পড়বেন সেভেন স্টার নামে খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে রপ্তানিকারকেরা। কারণ, ওই সব রাজ্যে এসব পণ্য পাঠাতে প্রথমে কলকাতা পাঠাতে হবে। পরে পুরো বাংলাদেশের সীমান্ত ঘুরে আসাম, মেঘালয়, করিমগঞ্জ ও আগরতলায় যাবে পণ্যের চালান।

প্রথমে কলকাতা, পরে আগরতলা

প্রাণের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এত দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, মৌলভীবাজারের চাতলাপুর, সিলেটের শেওলা ও তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম, মেঘালয়ে ফলের ড্রিংকস, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, বিস্কুট, কেক, চিপস, স্ন্যাকস রপ্তানি করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল যেমন শিলিগুড়ি ও কুচবিহারের মতো এলাকায় লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে। প্রাণের কারখানা থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওই পাড়ে আমদানিকারকের গুদামে পৌঁছাতে এক দিনের মতো সময় লাগে। তবে কোনো পণ্যের চালান যদি পরীক্ষা করতে হয়, তাহলে পাঁচ থেকে ছয় দিন লাগে।

নতুন ব্যবস্থায় সেভেন সিস্টারে ওই সব পণ্য স্থলপথে পাঠাতে হলে সাতক্ষীরার ভোমরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরই ভরসা। এর মানে, ফলের ড্রিংকস, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, বিস্কুট, কেক, চিপস, স্ন্যাকস এসব পণ্য আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ে পাঠাতে হলে প্রথমে পণ্যের চালান পশ্চিমবঙ্গে তথা কলকাতা যাবে। পরে কলকাতা থেকে সড়ক বা রেলপথে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ওই পণ্য যেতে হবে ত্রিপুরার আগরতলায়। অবশ্য আসামের গুয়াহাটি, করিমগঞ্জ কিংবা মেঘালয়ের শিলংয়ে পণ্যের চালান পাঠাতে আরও কম পথ পাড়ি দিতে হবে।

এ ছাড়া সমুদ্রপথে পণ্য পাঠাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দর বা মোংলা বন্দর থেকে কলকাতার হলদিয়া বন্দরে পাঠাতে হবে। তারপর সেখান থেকে সেভেন সিস্টার রাজ্যে নিয়ে যেতে হবে।

এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, কলকাতা হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পাঠাতে কমপক্ষে ১০ দিন সময় লাগবে। এতে আগরতলার আমদানিকারকেরা এত ঘোরা পথে পণ্য নেবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, সীমান্তের ওপারে পণ্য পৌঁছানোর পর সব খরচ আমদানিকারকের। ফলে ওই আমদানিকারকেরা এত পরিবহন খরচ দিয়ে কতটা প্রতিযোগীসক্ষম থাকতে পারবেন, তা নিয়ে শঙ্কা আছে।

জানা যায়, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ প্রতিবছর ভারতে পাঁচ কোটি ডলারের ফলের ড্রিংকস, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, বিস্কুট, কেক, চিপস, স্ন্যাকস রপ্তানি করে থাকে। এর মধ্য প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ রপ্তানি হয় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে। এখন পুরো বাজারটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ণ আরএফএল গ র প ফল র ড র কলক ত প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পোশাকের চালান এখন চট্টগ্রাম থেকে মুম্বাই বন্দরে যেতে হবে

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যে স্থলপথে আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে—তা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন নিট পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

পোশাক রপ্তানিতে কী ধরনের ক্ষতি হবে?

স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় খরচ ও সময়—দুইই বাড়বে। স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সমুদ্রবন্দর দিয়ে ভারতের চেন্নাই ও মুম্বাই বন্দরে পণ্য খালাস করে স্থলপথে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে হবে।

আগে সময় কত লাগত, এখন কত সময় লাগবে?

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের দায়িত্ব হলো, ভারতীয় সীমান্তের স্থলবন্দর পর্যন্ত পণ্যের চালান পৌঁছে দেওয়া। এত দিন ৩–৪ দিন সময় লাগত বেনাপোল হয়ে পেট্রাপোল সীমান্তে পৌঁছে দিতে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজে ওঠা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। সব মিলিয়ে সময় লাগবে এক সপ্তাহের মতো। খরচও একটু বাড়বে।

এখন তাহলে পণ্য কীভাবে যাবে?

এখন তৈরি পোশাকের চালান প্রথমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতের মুম্বাই বন্দর (নভ সেবা বন্দর) যাবে। তারপর সেই বন্দর থেকে আমদানিকারক পণ্য খালাস করে নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাবেন। সড়ক বা রেলপথে তিনি পণ্য নিতে পারেন। এতে আমদানিকারকেরও সময় ও ব্যয় বেশি হবে।

তৈরি পোশাকের চালান কলকাতায় যাবে কীভাবে?

নতুন বিধিনিষেধ আরোপের ফলে কলকাতার নিকটবর্তী বেনাপোল বন্দর দিয়ে পোশাকের চালান নেওয়া যাবে না। তাই এখন তৈরি পোশাকের চালান প্রথম চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ভারতের মুম্বাই বন্দরে যাবে। সেখান থেকে কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে আনতে হবে। কিন্তু এটি বেশ সময় ও খরচসাপেক্ষ। এর বিকল্প রুট আছে। বাংলাদেশের পানগাঁও বা মোংলা বন্দর থেকে ভারতের কলকাতার হলদিয়া বন্দর পর্যন্ত পণ্য আনা-নেওয়ার সুযোগ আছে। ছোট ছোট বার্জে করে ১০-২০ কনটেইনারে পোশাক রপ্তানি করা যাবে।

ভারতের এমন নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আপনার মত কী?

আমি মনে করি, এটি দুই দেশের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের অংশ। এর আগে ভারত বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করেছে। পরে বাংলাদেশ স্থলপথে সুতা আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করল। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে স্থলপথে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত।

এতে পোশাক খাতের বড় কোনো ক্ষতি হবে না। কারণ, বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানিতে ভারতের অংশীদারত্ব খুব কম। তবে এই ধরনের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দুই দেশের নাগরিকেরা। দুই দেশের সরকার আলোচনার মাধ্যমে এই ধরনের সমস্যার সমাধান করতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের বিধিনিষেধে বন্দরে বন্দরে আটকা বাংলাদেশি পণ্যের ট্রাক
  • তৈরি পোশাকবোঝাই ৩৬টি ট্রাক বেনাপোল বন্দরে আটকে আছে
  • বেনাপোল বন্দরে আটকা গার্মেন্টস পণ্য বোঝাই ৩৬ ট্রাক
  • বুড়িমারী সীমান্তে আটকে গেল প্রাণের ১৭ ট্রাক পণ্য
  • পোশাকের চালান এখন চট্টগ্রাম থেকে মুম্বাই বন্দরে যেতে হবে
  • স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করল ভারত
  • স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের কিছু পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত
  • ত্রিপুরা সীমান্তে জড়ো ৭৫০ জন ঠেলে দিতে পারে বাংলাদেশে
  • ত্রিপুরা সীমান্তে আটক ৭৫০ জন, হতে পারে পুশইন