ঢাকার মৌসুমী গার্মেন্টস ও স্কয়ার ফ্যাশন নামের দুটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের দুই ট্রাক তৈরি পোশাক ভারতে রপ্তানির উদ্দেশ্যে আজ রোববার সকালে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রবেশ করে। কিন্তু গতকাল শনিবার রাতে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে পণ্যের চালান ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

শুধু এই দুটি প্রতিষ্ঠান নয়, এমন বেশ কিছু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ৩৬টি ট্রাক তৈরি পোশাক নিয়ে বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে আছে। এসব পণ্যের রপ্তানির ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও পণ্যের চালানগুলো বেনাপোল থেকে ফিরিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের দিকে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান।

রপ্তানিকারকেরা বলেন, ‘ভারতের এই প্রজ্ঞাপনে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা ক্ষতির মুখে পড়বে। বেনাপোল স্থলবন্দরের তুলনায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য ভারতে পাঠাতে দ্বিগুণ খরচ হবে। একই সঙ্গে পণ্য পৌঁছাতেও কয়েক গুণ বেশি সময় লেগে যাবে। এতে ক্রয়াদেশ কমে যাবে।’

এদিকে আজ সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করেন। যে কারণে সকাল থেকে নতুন কোনো চালান ফাইলে সই হয়নি। এর মধ্যে গতকাল রাতে স্থলপথে তৈরি পোশাক আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার।

ঢাকার তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জেকে এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে এক ট্রাক তৈরি পোশাক কলকাতায় পৌঁছাতে শুল্কায়ন, জিএসটি, ট্রাকভাড়া, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট খরচ—সব মিলিয়ে ৬ লাখ টাকা খরচ হয়। সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যেই পণ্যের চালান গন্তব্যে পৌঁছে যায়। সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এক ট্রাক পণ্য কলকাতায় পাঠাতে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ হবে। সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ দিন। এতে ছোট ছোট উদ্যোক্তারা মার খাবেন।’

এই নিষেধাজ্ঞার আগেই পণ্যবোঝাই ট্রাক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বেনাপোল বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। সেগুলো সকালে এসে পৌঁছায়। রপ্তানিকারক ও ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টরা ভারতের পেট্টাপোল বন্দরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও পণ্য ভারতে পাঠাতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার শরিফ হাসান বলেন, ‘ভারতের চিঠির আলোকে তৈরি পোশাকের ট্রাক স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। দুপুর একটা পর্যন্ত ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় ৩৬টি ট্রাক তৈরি পোশাক নিয়ে বেনাপোল বন্দরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।’

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, শুধু ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে স্থল কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাবপত্র রপ্তানি করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।

পণ্য ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট সোহান ট্রেড সেন্টারের স্বত্বাধিকারী আহসান হাবিব বলেন, ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের তৈরি পোশাক খাত হুমকির মুখে পড়বে। এতে বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের কর্মচারীরা কাজ হারাবেন।

তৈরি পোশাক রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন কম দামের ২০ থেকে ২৫ ট্রাক তৈরি পোশাক ভারতে পাঠানো হতো। ভারতের এই বিধিনিষেধে দেশের রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি প্লাস্টিক পণ্য ও আসবাব রপ্তানি করে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স অ য ন ডএফ প রব শ আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আগরতলায় কেক–বিস্কুট–চিপস রপ্তানি করতে প্রথমে কলকাতায় পাঠাতে হবে

ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম, আসামসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের বিস্কুট, কেক, চিপস, ফলের ড্রিংকস—এসব পণ্য বেশ জনপ্রিয়। ওই অঞ্চলে বাংলাদেশি ব্র্যান্ড প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এসব পণ্য বেশ চলে। দিন দিন রপ্তানিও বাড়ছে।

কিন্তু গতকাল শনিবার ভারত সরকার বাংলাদেশের ফলের ড্রিংকস, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, বিস্কুট, কেক, চিপস, স্ন্যাক্সের আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম সীমান্তের সব শুল্কস্টেশন এবং পশ্চিমবঙ্গের চেংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী দিয়ে এসব পণ্য আমদানি বন্ধ করা হয়।

এতে বিপাকে পড়বেন সেভেন স্টার নামে খ্যাত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে রপ্তানিকারকেরা। কারণ, ওই সব রাজ্যে এসব পণ্য পাঠাতে প্রথমে কলকাতা পাঠাতে হবে। পরে পুরো বাংলাদেশের সীমান্ত ঘুরে আসাম, মেঘালয়, করিমগঞ্জ ও আগরতলায় যাবে পণ্যের চালান।

প্রথমে কলকাতা, পরে আগরতলা

প্রাণের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এত দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, মৌলভীবাজারের চাতলাপুর, সিলেটের শেওলা ও তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম, মেঘালয়ে ফলের ড্রিংকস, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, বিস্কুট, কেক, চিপস, স্ন্যাকস রপ্তানি করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল যেমন শিলিগুড়ি ও কুচবিহারের মতো এলাকায় লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছে। প্রাণের কারখানা থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওই পাড়ে আমদানিকারকের গুদামে পৌঁছাতে এক দিনের মতো সময় লাগে। তবে কোনো পণ্যের চালান যদি পরীক্ষা করতে হয়, তাহলে পাঁচ থেকে ছয় দিন লাগে।

নতুন ব্যবস্থায় সেভেন সিস্টারে ওই সব পণ্য স্থলপথে পাঠাতে হলে সাতক্ষীরার ভোমরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরই ভরসা। এর মানে, ফলের ড্রিংকস, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, বিস্কুট, কেক, চিপস, স্ন্যাকস এসব পণ্য আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ে পাঠাতে হলে প্রথমে পণ্যের চালান পশ্চিমবঙ্গে তথা কলকাতা যাবে। পরে কলকাতা থেকে সড়ক বা রেলপথে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ওই পণ্য যেতে হবে ত্রিপুরার আগরতলায়। অবশ্য আসামের গুয়াহাটি, করিমগঞ্জ কিংবা মেঘালয়ের শিলংয়ে পণ্যের চালান পাঠাতে আরও কম পথ পাড়ি দিতে হবে।

এ ছাড়া সমুদ্রপথে পণ্য পাঠাতে হলে চট্টগ্রাম বন্দর বা মোংলা বন্দর থেকে কলকাতার হলদিয়া বন্দরে পাঠাতে হবে। তারপর সেখান থেকে সেভেন সিস্টার রাজ্যে নিয়ে যেতে হবে।

এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, কলকাতা হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে পণ্য পাঠাতে কমপক্ষে ১০ দিন সময় লাগবে। এতে আগরতলার আমদানিকারকেরা এত ঘোরা পথে পণ্য নেবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, সীমান্তের ওপারে পণ্য পৌঁছানোর পর সব খরচ আমদানিকারকের। ফলে ওই আমদানিকারকেরা এত পরিবহন খরচ দিয়ে কতটা প্রতিযোগীসক্ষম থাকতে পারবেন, তা নিয়ে শঙ্কা আছে।

জানা যায়, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ প্রতিবছর ভারতে পাঁচ কোটি ডলারের ফলের ড্রিংকস, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, বিস্কুট, কেক, চিপস, স্ন্যাকস রপ্তানি করে থাকে। এর মধ্য প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ রপ্তানি হয় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে। এখন পুরো বাজারটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাবান্ধায় আটকে গেছে প্লাস্টিক পণ্যের ট্রাক
  • ভারতের বিধিনিষেধে বন্দরে বন্দরে আটকা বাংলাদেশি পণ্যের ট্রাক
  • ভারতে রপ্তানি কত, বিধিনিষেধের কী প্রভাব পড়বে, বাংলাদেশ ভারতের কত বড় বাজার
  • বেনাপোল বন্দরে আটকা গার্মেন্টস পণ্য বোঝাই ৩৬ ট্রাক
  • আগরতলায় কেক–বিস্কুট–চিপস রপ্তানি করতে প্রথমে কলকাতায় পাঠাতে হবে
  • পোশাকের চালান এখন চট্টগ্রাম থেকে মুম্বাই বন্দরে যেতে হবে
  • স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করল ভারত
  • স্থলপথে বাংলাদেশি কিছু পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করল ভারত
  • স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের কিছু পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত