নগদের সিইও জালিয়াত, পদে থাকতে পারবে না: গভর্নর
Published: 18th, May 2025 GMT
জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নগদ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে মো. সাফায়েত আলম নিজেকে বহাল রেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, অবশ্যই উনি (নগদের সিইও) জালিয়াতি করেছেন। অবশ্যই উনি দোষি এবং উনার এই পদ পাওয়ার কোনো অধিকার নেই। উনি দায়িত্ব নিতে পারেন না।
রবিবার (১৮ মে) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড.
বাংলাদেশ ব্যাংক যার নামে মামলা করেছে তাকেই আবার নগদের সিইও করা হয়েছে, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে গভর্নর বলেন, ‘‘সরকার তো সেটা মানবে না। এটা তো সরকারের পজিশন না। সরকারের পজিশন বাংলাদেশ ব্যাংক যেটা বলেছে, সেটাই। তবে যেহেতু বিষয়টি এখনো আদালতে বিচারধীন রয়েছে এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বলা ঠিক নয়।’’
তাহলে কি ডাক বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরোধ সৃষ্টি হবে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কোনো বিরোধ হবে না। ডাক বিভাগ কেন বিরোধ করবে? এখন আর কোনো বিরোধ পাবেন না।’’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তার কোনো অধিকার নেই সিইও পদে থাকার। আমাদের অবস্থান উনি দায়িত্ব নিতে পারেন না। অবশ্যই উনি জালিয়াতি করেছেন। অবশ্যই উনি দোষি এবং উনার এই পদ পাওয়ার কোনো অধিকার নেই।’’
বাংলাদেশ ব্যাংকের যিনি আইনজীবি ছিলেন তিনি শুনানির দিন উপস্থিত হননি। এর কারণ জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘‘কারণ বাংলাদেশ ব্যাংককে এ বিষয়ে জানানো হয়নি এবং এটা হাতে লিখে করা হয়েছে। অরিজিনাল যে রেকর্ড কোটে আছে এবং যেটা আমাদের ও এজি অফিসকে দেওয়া হয়েছিলো সেটা এক নয়। ওখানে হাতে লেখা আছে। যেটা আমাদের এবং অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে নেই।’’
তাহলে কি উনি নগদের সিইও থাকবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে একজন জালিয়াত। সে কিভাবে সিইও থাকে? আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
এর আগে গতকাল শনিবার আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘‘নগদের আগের বোর্ডে যারা ছিলেন তারা বিপুল আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কোটি কোটি জনগণের স্বার্থ সম্পৃক্ততা আছে এবং শত শত কোটি টাকার আমানত এখানে জড়িত তাই বাংলাদেশ ব্যাংক সাময়িকভাবে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্তে আট সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। এর ওপর ভিত্তি করে বেআইনিভাবে এমন একজনকে প্রতিষ্ঠানটির সিইও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার আসামি।’’
তিনি বলেন, ‘‘নগদের আইটি বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুষ্কৃতিকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সব ধরনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটিতে এই মুহূর্তে কি হচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কিত বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ তছরুপ ও বেআইনি কর্মকাণ্ড হওয়ার আশঙ্কা করছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘আগামী ১৯ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চে প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার আসামিদের পুলিশ কেন খুঁজে পাচ্ছে না সে প্রশ্নও রাখেন মুখপাত্র।
ঢাকা/হাসনাত//
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চিন্ময় দাসসহ ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট
চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসসহ ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকেলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম আদালত পুলিশের কাছে চার্জশটটি জমা দেন। চিন্ময়ের উসকানি ও নির্দেশে আইনজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি সার্কেল) মাহফুজুর রহমান।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, প্রধান আসামি চিন্ময় দাসসহ ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আইনজীবী খুনের মামলায় আমাদের কাছে চার্জশিট জমা দিয়েছে থানা পুলিশ। মামলার ধার্য্য তারিখে তা ম্যাজিস্ট্রেট আাদলতে জমা দেওয়া হবে। এখন এটি মামলার নথির সঙ্গে রাখা হয়েছে।
গত ৫ মে থানা পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত চিন্ময় দাসকে আইনজীবী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখান। এর আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাতে তারা উল্লেখ করেন, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে নগরের কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে একটি মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।