বাংলাদেশ থেকে কিছু পণ্য আমদানিতে ভারত সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে। সোমবার (১৯ মে) মাত্র ১৯ ট্রাক হিমায়িত মাছ ও ভোজ্যতেল রপ্তানি হয় ভারতে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। 

এদিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাবারসহ ছয় ধরনের কোনো পণ্যই রপ্তানি হয়নি। ভারত সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য অন্তত ৩০ শতাংশ কমবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হবে বলে ধারণা তাদের।

যে ছয় ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে চার ধরনের পণ্য আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে নিয়মিত রপ্তানি হয়, যা এই বন্দরের রপ্তানি আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 

আরো পড়ুন:

কনটেইনার টার্মিনালে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা

ভারত থেকে এল ১২ টন কচুরমুখি 

সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি শুরু হয়। শুরু থেকেই আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি হওয়ায় রপ্তানিমুখী বন্দর হিসেবে পরিচিতি পায় আখাউড়া স্থলবন্দর। মূলত ভারতের সেভেন সিস্টার্সের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। ধীরে ধীরে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে কমতে থাকে রপ্তানি বাণিজ্য।

বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় দেড় কোটি টাকার হিমায়িত মাছ, প্লাস্টিক, ভোজ্যতেল, তুলা, পিভিসি সামগ্রী, রড ও সিমেন্টসহ কয়েকটি পণ্য নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যায় হিমায়িত মাছ। তবে, শনিবার (১৭ মে) বাংলাদেশ থেকে কিছু পণ্য আমদানিতে ভারত সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই স্থলবন্দরে। 

মূলত, ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় ও মিজোরামের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কাঠের ফার্নিচার, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত জুস, প্লাস্টিক ও পিভিসি সামগ্রী এবং তুলা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও কাঠের ফার্নিচার ছাড়া বাকি সবকটি পণ্যই নিয়মিত রপ্তানি হয় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে।

আখাউড়া স্থল শুল্কস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই বন্দর দিয়ে ভারতে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। আর চলতি অর্থবছরে গত এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয় ৪৫৩ কোটি ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৩ টাকার পণ্য। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, ভোজ্যতেল, তুলা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মেলামাইন সামগ্রী ও শুটকি।

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, হিমায়িত মাছের পর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় প্লাস্টিক পণ্য, পিভিসি সামগ্রী, চিপস, বিস্কুট, ফলের স্বাদযুক্ত জুস ও তুলা। প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের এসব পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে। ফলে এ পণ্যগুলো আমদানি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ায় রপ্তানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মূলত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতের সঙ্গে চলা কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই দেশটির সরকার আমদানির সুযোগ সীমিত করেছে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের, যা দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার দাবি তাদের।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নিসার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, “ভারত সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য অন্তত ৩০ শতাংশ কমবে। এর ফলে প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হবে।”

তিনি বলেন, “রপ্তানিকৃত পণ্যের তালিকা খুবই সীমিত। ফলে এমনিতেই সংকুচি রপ্তানি বাণিজ্য। এ অবস্থায় যেসব পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে রপ্তানি আয় অনেকাংশে নির্ভর করে, সেগুলোতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে রপ্তানি আয় কমে যাবে।” দ্রুত বিষয়টি ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মো.

মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রপ্তানি আয় কমবে, বন্দরের রাজস্বও কমবে। তবে, এ বিষয়ে এখনো কোনো চিঠি আমাদের কাছে আসেনি।”

ঢাকা/মনিরুজ্জামান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আমদ ন ত ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ডিসেম্বরে ১০ দিনে প্রবাসী আয় ১২৯ কোটি ডলার

চলতি ডিসেম্বর মাসের ১০ দিনে দেশে বৈধ পথে ১২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যা ১৫ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা) অতিক্রম করেছে। প্রতিদিন গড়ে দেশে আসছে ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা এক হাজার ৫৭৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার প্রবাসী আয়।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থপাচারে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।এ কারণে হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো কমে গেছে। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, আগস্ট মাসে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার, জুলাই মাসে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলার, ডিসেম্বর মাসে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার, জানুয়ারি মাসে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ২৩ লাখ ডলার, মে মাসে ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার এবং জুন মাসে ২৮২ কোটি ১২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

ঢাকা/নাজমুল/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ড্রাগন ফল বিক্রি করে কারও আয় ১০ লাখ, কারও ১৫ লাখ টাকা
  • ডিসেম্বরে ১০ দিনে প্রবাসী আয় ১২৯ কোটি ডলার