রাখাইনের আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নতুন করে বিমান হামলা, আতঙ্ক
Published: 20th, May 2025 GMT
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি আবারও অশান্ত হয়ে উঠছে। আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে চলতি মাসের শুরু থেকে নতুন করে বিমান হামলা শুরু করেছে জান্তা বাহিনী। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি রাখাইনের অন্যান্য সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদেরও নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মিয়ানমারের নির্বাসিত সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতীর খবর অনুযায়ী, ২ মে থেকে পরবর্তী দুই সপ্তাহে জান্তা বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮৬ জন নিহত ও ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। বোমা হামলায় বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ধর্মীয় উপাসনালয়সহ লোকজনের বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরেক গণমাধ্যম নিরিনজারার গতকাল সোমবারের এক খবরে বলা হয়েছে, আরাকান আর্মির অধিকৃত মংডু টাউনশিপে ঘনঘন বিমান হামলা ও স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি মংডু অঞ্চলে ঘন ঘন বিমানে বোমা হামলা পরিচালনা করে আসছে জান্তা বাহিনী। তাতে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মংডু টাউনশিপে ভূমিমাইন ও বিমান হামলার ঝুঁকির কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের খাবার সংগ্রহে সমস্যা হচ্ছে। ভূমিমাইন ঝুঁকির কারণে স্থানীয় লোকজন নাফ নদীতে মাছও ধরতে পারছেন না। বিমান হামলার কারণে শহর ও গ্রামের দোকানপাট খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ৮ মে মংডু টাউনশিপের অদূরে চার মাইল এলাকায় একটি গ্রেনেড বিস্ফোরণে দুই শিশু নিহত ও এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর মংডু টাউনশিপসহ আশপাশের ২৭১ কিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর মংডু অঞ্চল থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক মাস ধরে বাস্তুচ্যুত লোকজনকে পুনরায় প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে আরাকান আর্মি।
মিয়ানমারের গণমাধ্যম ও সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, সংকটের নিরসন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। ‘যুদ্ধবন্দী’ হিসেবে আটকে রাখা লোকজনকেও নানা শর্তে মুক্তি দেওয়ার খবর মিলেছে। তারা রাখাইনের বন্ধ হাসপাতাল চালু এবং ধর্ষণসহ সংঘটিত নানা অপরাধের বিচারের চেষ্টা করছে। তবে নতুন করে বিমান হামলা শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আবারও জটিল হয়ে উঠছে।
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মংডু, বুচিডং, রাচিডং টাউনশিপসহ রাখাইন রাজ্যে ৮০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে অঞ্চলটি পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয় আরাকান আর্মি। তিন মাসের মাথায় অধিকৃত অঞ্চলটিকে স্বাধীন ‘আরাকান রাষ্ট্র’ ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল। তবে জান্তা বাহিনীর হামলাসহ নানা সংকটে এখনো স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা সম্ভব হয়নি।
রাখাইনের সহিংস পরিস্থিতির মুখে গত এক বছরে ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন। বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। দীর্ঘ আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সভাপতি মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করেনি আরাকান আর্মি। প্রায় প্রতিদিন আরাকান আর্মির হামলায় রোহিঙ্গারা ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হচ্ছেন। খুন-ধর্ষণসহ অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উখিয়ার পালংখালীর ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দিন দিন উত্তপ্ত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি সেখানকার অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনও উখিয়াতে পালিয়ে আসছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র র খ ইন র জ য পর স থ ত ট উনশ প
এছাড়াও পড়ুন:
মুখে অস্ত্র ঢুকিয়ে হত্যার হুমকি ঠিকাদারকে
চট্টগ্রামের রাউজানে একটি খাল খননকাজ বন্ধের পর জানা গেছে, চাঁদা না পেয়ে ঠিকাদার ও তাঁর লোকজনকে মারধর করেছে দুর্বৃত্তরা। তারা মুখে অস্ত্র ঢুকিয়ে ঠিকাদারকে হত্যার হুমকিও দেয়। প্রাণভয়ে তিনি যন্ত্রপাতি ও শ্রমিকদের নিয়ে কাজ গুটিয়ে চলে গেছেন। ১২ মে উপজেলার কাঁশখালী খালের খননকাজ চলার সময় এ ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় সূত্র ও বিএডিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সোমবার বিষয়টি জানা গেছে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের নাম কেউ জানাতে পারেননি।
সূত্র জানায়, স্থানীয় কৃষকের সুবিধার জন্য বিএডিসি কাঁশখালী খালের চার কিলোমিটার খননে দরপত্র আহ্বান করে। কার্যাদেশ পেয়ে গত এপ্রিলে কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমডি সোহেল এন্টারপ্রাইজ। প্রতি কিলোমিটারে খনন ব্যয় ধরা হয় ১০ লাখ টাকা।
কাঁশখালী এলাকার কৃষক সমিতির সভাপতি আব্দুর শুক্কুর বলেন, কাঁশখালী খালের দুই পাড়ে প্রায় ৫০ একরের বেশি কৃষিজমি। শুকনো মৌসুমে পানি প্রবাহ কমে গেলে তাদের সেচসংকটে পড়তে হয়। বিএডিসির খাল খননের কাজ জারুলতলা থেকে শুরু হয়েছিল। কাঁশখালীকুল, শরীফপাড়ায় খননকাজ শেষে হাজীপাড়া এলাকায় এসে কাজ থেমে গেছে। এখনও দেড় কিলোমিটার খনন বাকি। কিন্তু খননযন্ত্র নিয়ে চলে গেছে ঠিকাদারের লোকজন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এমডি সোহেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেলের মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিয়েও সংযোগ মেলেনি।
উপজেলা বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, কাঁশখালী খাল খননের কাজ প্রায় তিন কিলোমিটার শেষ হয়েছে। শেষ পর্যায়ে এসে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তারা জানতে পেরেছেন, হেলমেট পরা তিন-চার সন্ত্রাসী ১২ মে ঠিকাদারের লোকজনকে মারধর করে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিয়ে কাজ করলে হত্যা করা হবে বলে ঠিকাদারকে মুখে অস্ত্র ঢুকিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। তারা ভয়ে কাজ বন্ধ করে খননযন্ত্রসহ সরঞ্জাম নিয়ে চলে গেছেন।