করোনায় ফুসফুসের শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলা সেই মানুষটাই যেভাবে হলেন পর্বতারোহী
Published: 5th, July 2025 GMT
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছিল তখন। বনানীর একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। লকডাউনের মধ্যেই অফিসে যাই। এই করতে গিয়ে আমার শরীরে করোনা হানা দিল। কয়েক দিন রুমে বন্দী থাকলাম। আমার সেবা করতে গিয়ে মা–ও করোনা পজিটিভ হলেন। শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলাম। অবস্থা খারাপ হতে থাকলে ২০২১ সালের ২৭ মার্চ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হলাম। মাকেও আমার সঙ্গে ভর্তি করানো হলো।
প্রতিদিনই ওয়ার্ডের কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন। আমি একেবারেই শ্বাস নিতে পারছিলাম না। দিন–রাত অক্সিজেন সাপোর্টে থাকি। তিন-চার দিন পর টেস্ট করে দেখা গেল আমার ফুসফুসের ৮০ শতাংশই সংক্রমিত হয়েছে। ভয় পেয়ে গেলাম। হাসপাতালের ২৪ ঘণ্টাকে মনে হচ্ছিল ২৪ দিন। মাথায় সব সময় মৃত্যুচিন্তা—জীবনে কী করতে পারতাম, কী করিনি। একদিন মনে পড়ে গেল ২০০৭ সালের একটা প্রতিজ্ঞার কথা। মজা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের বলেছিলাম, ২০২০ সালের মধ্যে এভারেস্ট অভিযানে যাব। কিন্তু পড়াশোনা, চাকরি আর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ায় সে পথে আর হাঁটাই হয়নি।
হাসপাতালে ভর্তির সপ্তম কি অষ্টম দিনে আবার শারীরিক অবস্থা ভীষণ খারাপ হলো। মাকে একপাশে ডেকে নিয়ে ডাক্তার যখন বলল, তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, কথাটা তখন আমার কানেও এল। দেখলাম, কথাটা শুনে মা ভেঙে পড়েছেন। তারপরও আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘তোর কিছু হবে না।’
আমিও মাকে বললাম, ‘হ্যাঁ মা, আমাকে বাড়ি যেতেই হবে।’
মনে মনে সারাটা সময় নিজেকে আবিষ্কার করতাম কোন পাহাড়চূড়ায়, ঝিরিপথে। নিজে নিজেই নতুন করে বাঁচার জন্য পণ করতাম। এভাবেই নবমতম দিনে একটু ভালো বোধ করলাম। মনের জোর এতটাই বৃদ্ধি পেল যে সকালে মাকে বললাম, আমার অক্সিজেন মাস্কটা খুলে দাও!
মা ভয়ে ভয়ে খুললেন। অক্সিজেন ছাড়াও আর অসুবিধা হলো না।
১১ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে মনে হচ্ছিল, নতুন জীবন নিয়ে বাসায় ফিরছি।
প্রতিজ্ঞা করলাম, এই জীবনকে আর হেলায় হারাব না।
বান্দরবানের গহিন পাহাড়ে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চিকিৎসার অভাবে শ্রমিক মৃত্যুর অভিযোগ, বন্দরে মহাসড়ক অবরোধ
অসুস্থ শ্রমিককে ছুটি না দেওয়া, চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এতে মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনে যানজটের সৃষ্টি হয়। সোমবার (৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহাসড়কের মদনপুর অংশে তারা এ অবরোধ করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারের আশ্বাসে এগারোটায় মহাসড়ক থেকে সরে যায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা জানান, 'লারিস ফ্যাশন' নামে একটি রপ্তানিমুখি গার্মেন্টসের নারী শ্রমিক রিনা (৩০) অসুস্থ অবস্থায় ডিউটি করে যাচ্ছিলেন। গতকাল তিনি অসুস্থতা বোধ করলে কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেন। তবে কর্তৃপক্ষ তার আবেদনে কোনো সাড়া না দিয়ে কাজ করে যেতে বাধ্য করেন। পরে অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে সহকর্মীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শ্রমিক রিনা কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার দুলালের মেয়ে। অবরোধকারী শ্রমিকদের অভিযোগ এ মৃত্যুর জন্য মালিকপক্ষ দায়ী।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলী জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সড়িয়ে দেন। সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ও পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।