করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছিল তখন। বনানীর একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। লকডাউনের মধ্যেই অফিসে যাই। এই করতে গিয়ে আমার শরীরে করোনা হানা দিল। কয়েক দিন রুমে বন্দী থাকলাম। আমার সেবা করতে গিয়ে মা–ও করোনা পজিটিভ হলেন। শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলাম। অবস্থা খারাপ হতে থাকলে ২০২১ সালের ২৭ মার্চ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হলাম। মাকেও আমার সঙ্গে ভর্তি করানো হলো।

প্রতিদিনই ওয়ার্ডের কেউ না কেউ মারা যাচ্ছেন। আমি একেবারেই শ্বাস নিতে পারছিলাম না। দিন–রাত অক্সিজেন সাপোর্টে থাকি। তিন-চার দিন পর টেস্ট করে দেখা গেল আমার ফুসফুসের ৮০ শতাংশই সংক্রমিত হয়েছে। ভয় পেয়ে গেলাম। হাসপাতালের ২৪ ঘণ্টাকে মনে হচ্ছিল ২৪ দিন। মাথায় সব সময় মৃত্যুচিন্তা—জীবনে কী করতে পারতাম, কী করিনি। একদিন মনে পড়ে গেল ২০০৭ সালের একটা প্রতিজ্ঞার কথা। মজা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের বলেছিলাম, ২০২০ সালের মধ্যে এভারেস্ট অভিযানে যাব। কিন্তু পড়াশোনা, চাকরি আর সংসারের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ায় সে পথে আর হাঁটাই হয়নি।

হাসপাতালে ভর্তির সপ্তম কি অষ্টম দিনে আবার শারীরিক অবস্থা ভীষণ খারাপ হলো। মাকে একপাশে ডেকে নিয়ে ডাক্তার যখন বলল, তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, কথাটা তখন আমার কানেও এল। দেখলাম, কথাটা শুনে মা ভেঙে পড়েছেন। তারপরও আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ‘তোর কিছু হবে না।’

আমিও মাকে বললাম, ‘হ্যাঁ মা, আমাকে বাড়ি যেতেই হবে।’

মনে মনে সারাটা সময় নিজেকে আবিষ্কার করতাম কোন পাহাড়চূড়ায়, ঝিরিপথে। নিজে নিজেই নতুন করে বাঁচার জন্য পণ করতাম। এভাবেই নবমতম দিনে একটু ভালো বোধ করলাম। মনের জোর এতটাই বৃদ্ধি পেল যে সকালে মাকে বললাম, আমার অক্সিজেন মাস্কটা খুলে দাও!

মা ভয়ে ভয়ে খুললেন। অক্সিজেন ছাড়াও আর অসুবিধা হলো না।

১১ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে মনে হচ্ছিল, নতুন জীবন নিয়ে বাসায় ফিরছি।

প্রতিজ্ঞা করলাম, এই জীবনকে আর হেলায় হারাব না।

বান্দরবানের গহিন পাহাড়ে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

উখিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে হাতির মৃত্যুতে মামলা

কক্সবাজারের উখিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩০ বছর বয়সী একটি পুরুষ হাতির মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের দুছড়ি এলাকায় রফিকের ঘোনা গ্রামের আবু তাহেরের বাড়ির পাশে ওই হাতির মৃত্যু হয়। বন বিভাগের অভিযোগ, পরিকল্পিতভাবে সেখানে বিদ্যুতের ফাঁদ পাতানো হয়েছিল।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বন বিভাগের কর্মকর্তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরে মৃত হাতির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়।

বন বিভাগের উখিয়া রেঞ্জের কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেছেন, “আমরা খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির সুরতহাল করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে পাতানো বিদ্যুতের ফাঁদে স্পৃষ্ট হয়েই হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বাড়ির মালিক আবু তাহেরসহ দুজনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে মৃত হাতিটির সৎকার করা হয়েছে।”

ঢাকা/তারেকুর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ