সাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের হিলিতে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে মা ও নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে নির্যাতন করা হয়েছে। উপজেলার নয়ানগর গ্রামে তাদের নির্যাতন করা হয়।   

অভিযুক্ত ফারুক হোসেনের ভয়ে নির্যাতনের শিকার পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দুইপক্ষ থানায় অভিযোগ করেছেন।

আজ মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে উপজেলার নয়ানগর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, গত শনিবার (১৭ মে) ফারুক হোসেনের বাড়ি থেকে একটি সাইকেল চুরি হয়। পরের দিন প্রতিবেশী সিদ্দিক হোসেনের বাড়িতে সেটি পাওয়া যায়। গ্রামের লোকজন সাইকেলটি উদ্ধার করে বিষয়টি মিমাংসা করে দেয়। পরে ফারুকের স্ত্রী ও সিদ্দিকের স্ত্রীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় সিদ্দিক এসে ফারুকের স্ত্রীকে চাকু দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ফারুক থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।

আরো পড়ুন:

শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রতিবাদ পাবিপ্রবি শিক্ষকের

নরসিংদী কারাগারে কয়েদির মৃত্যু, নির্যাতনের অভিযোগ পরিবারের

সোমবার (১৯ মে) বিকেলে ফারুক, তার শ্যালক লোকজন নিয়ে সিদ্দিকের স্ত্রী ও স্কুলে পড়ুয়া মেয়েকে বাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে। মা-মেয়েকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। বর্তমান নির্যাতনের শিকার পরিবার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

সিদ্দিক হোসেনের মা জরিনা বেগম বলেন, ‘‘আমার ছেলে সাইকেল চুরি করছে, তার শাস্তি হবে। কিন্তু আমার ছেলের বউ আর নাতনি তো অপরাধ করেনি। তাহলে কেন তারা মা-মেয়েকে জোর করে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করল? আমি এর বিচার চাই।’’

প্রতিবেশী সূর্য বেগম বলেন, ‘‘যিনি সাইকেল চুরি করেছেন, তিনি অপরাধী। চুরি হওয়া সাইকেল তো তিনি ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু তার বউ ও মেয়ে তো অপরাধ করেননি। তাদের খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।’’

ফারুক হোসেনের স্ত্রী এলেন বেগম বলেন, ‘‘আমার ছেলের একটি সাইকেল সিদ্দিক চুরি করেন। আমরা জানতে পেরে তার বাড়ি থেকে সাইকেলটি উদ্ধার করি এবং বিষয়টি মিমাংসা করা হয়। পরে এ বিষয়ে সিদ্দিকের স্ত্রী ও তার মেয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এক পর্যায় সিদ্দিক আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করেন।’’  

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে আমাকে এ অবস্থায় দেখে আমার ভাই বাড়িতে এসে তারা যেন পালিয়ে না যেতে পারেন, সেই কারণে তাদের মা-মেয়েকে খুঁটিতে বাঁধেন এবং গ্রামের লোকজন বলাতে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।’’ 

স্থানীয় প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমি লোকমুখে বিষয়টি শুনেছি। তবে ঘটনা যায় ঘটুক, দেশে আইন আছে। মা-মেয়েকে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা ঠিক হয়নি।’’

এ বিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নাজমুল হক জানান, উপজেলার নয়ানগর গ্রামে সাইকেল চুরি, মারামারি এবং মা-মেয়েকে খুঁটিতে বেঁধে রাখা নিয়ে উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ করেছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

ঢাকা/মোসলেম/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙল ভারতের আত্রাই নদীর বাঁধ, প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে

মাত্র চার মাস আগে নির্মিত পশ্চিমবঙ্গের বালুরঘাটের আত্রাই নদীর বাঁধ আবারও ভেঙে পড়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন নদীর পাড়ের বাসিন্দারা। মঙ্গলবার সকালে পানির চাপে ভেঙে যায় আত্রাই ড্যামের ভারতীয় অংশ। 

উত্তরের আত্রাই নদী বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে আবার বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের অভিযোগ, নদীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাবার ড্যাম দেওয়ার কারণে ভারতীয় অংশ বারবার বন্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত বছর থেকে আত্রাই নদীতে ছোট আকারে বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করে ভারত। কিন্তু বাঁধের কাজ চলাকালীন গত ফেব্রুয়ারিতেই বন্যার পানির চাপে ড্যাম ভেঙে যায়। সেই ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরেশোরে চলছিল মেরামতের কাজ। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে ওই মেরামত অংশ ফের ভেঙে পড়ায় নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে আত্রাই নদীর পানির স্তর বেড়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, এভাবে পানি বাড়লে ড্যামের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুরোপুরি ধসে পড়তে পারে। এতে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো তলিয়ে যাবে। নদীটি যেহেতু ভারত হয়ে বাংলাদেশে আবারও প্রবেশ করেছে, সেক্ষেত্রে নদীতে হঠাৎ পানি প্রবাহ বাড়ায় বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে এক বছর আগে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মিত এই বাঁধ বর্ষার শুরুতেই ভেঙে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। ঘটনার পরই ড্যামটি পরিদর্শনে আসেন দক্ষিণ দিনাজপুরের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। 

ড্যাম নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘বাড়ি তৈরির টিএমটি রড ব্যবহার করে ড্যাম তৈরি হয়েছে। এটি চরম দুর্নীতির ফল। আমি চাই প্রশাসনিক স্তরে এই বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত হোক। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, ‘ড্যাম নির্মাণে প্রচুর টাকা নেতাদের ঘুষ হিসেবে দেওয়া হয়েছে, যার ফলেই আজ এই বিপর্যয়।’

অন্যদিকে বালুরঘাট মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান অশোক মিত্র এই ভাঙনকে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘এই ভাঙনের পেছনে কোনো মানুষের হাত নেই। দুর্নীতির অভিযোগ তোলার আগে বিজেপিকে নিজের ঘরে নজর দিতে হবে। বালুরঘাট রেলস্টেশনে তৃতীয় শ্রেণির লিড ব্যবহার করে যে কাজ হচ্ছে, সেটি কি দুর্নীতি নয়?’

তিনি আরও বলেন, ‘রাম মন্দির তৈরির পরই ছাদ থেকে জল পড়ছে—এটাও তো দুর্নীতি। সেখানেও তো বিজেপি চোখ বুজে আছে।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের মাঝে চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন আত্রাই নদী পারের গ্রামবাসীরা। ড্যামের দ্রুত সংস্কার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না মেলায় ক্ষোভও বাড়ছে জনমনে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ