Prothomalo:
2025-12-07@07:06:10 GMT

হজ, কলেরা ও কোয়ারেন্টিন

Published: 21st, May 2025 GMT

হজ পবিত্র ধর্মীয় আচার হলেও ইতিহাসে এটি বারবার মহামারির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আরব উপদ্বীপের হেজাজ অঞ্চল, বিশেষ করে মক্কা ও মদিনায়, বিভিন্ন সময়ে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, যার মধ্যে কলেরা ছিল অন্যতম। এই মহামারিগুলো রোধে কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

মক্কায় মহামারি

মক্কায় মহামারির প্রথম লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় ইবনে কাসিরের আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে। ৯৬৮ সালে ‘আল-মাশরি’ নামক একটি মহামারি মক্কায় আঘাত হানে, যার ফলে অসংখ্য হজযাত্রী এবং তাঁদের বহনকারী উটের মৃত্যু হয়। এমনকি যাঁরা হজ পালন করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁরাও অল্প সময়ের মধ্যে মারা যান। এ ঘটনা মক্কার ইতিহাসে মহামারির প্রাথমিক প্রভাবের একটি উদাহরণ।

কলেরার প্রাদুর্ভাব

ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞান ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির ফলে হজযাত্রা আরও সহজ ও ব্যাপক হয়। বাষ্পীয় জাহাজের প্রচলনের কারণে অধিক সংখ্যক হজযাত্রী স্বল্প সময়ে মক্কায় পৌঁছাতে শুরু করেন। তবে এটি সংক্রামক রোগের দ্রুত বিস্তারের সুযোগও তৈরি করে। এই সময়ে কলেরা বিশ্বব্যাপী মহামারি হিসেবে আবির্ভূত হয়, এবং হেজাজ অঞ্চলও এর প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল না।

কলেরা প্রথম ১৮১৭ সালে বাংলার যশোর অঞ্চলে (বর্তমান বাংলাদেশ) দেখা দেয় এবং দ্রুত ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়ে। ১৮৩৩ সালের মধ্যে এটি এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকায় মহামারি হিসেবে প্রভাব ফেলে, যার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আরব উপদ্বীপে কলেরার প্রথম প্রাদুর্ভাব ঘটে ১৮২১ সালে। ১৮৩১ সালে মক্কায় এই রোগ প্রথম আঘাত হানে, যার ফলে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বা অন্তত ২০ হাজার হজযাত্রীর মৃত্যু হয়। এই মহামারি ভারতীয় হজযাত্রীদের মাধ্যমে মক্কায় ছড়ায় এবং অভূতপূর্ব দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করে। পরবর্তী সময়ে ১৮৪১, ১৮৪৭, ১৮৫১, ১৮৫৬-৫৭ ও ১৮৫৯ সালে কলেরা মক্কায় বহু হজযাত্রীর প্রাণ কেড়ে নেয়।

আরও পড়ুনবদর যুদ্ধক্ষেত্রে একটি দিন২০ জুলাই ২০২৩

কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা

তৎকালীন ওসমানিয়া সাম্রাজ্য, যারা হেজাজ অঞ্চলের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে ছিল, কলেরার বিস্তার রোধে ১৮৪০ সাল থেকে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা প্রয়োগ শুরু করে। হেজাজের সীমান্ত এবং মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন স্থানে কোয়ারেন্টিন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হতো এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করা হতো।

ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আগত হজযাত্রীদের জন্য কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়া বিশেষভাবে কঠোর ছিল। এডেনে যাত্রাবিরতির পর, হজযাত্রীদের ইয়েমেনের উপকূলীয় কামারান দ্বীপে কোয়ারেন্টিন ক্যাম্পে নামানো হতো। স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত হতে পারত। কোয়ারেন্টিন শেষে জাহাজ জেদ্দায় পৌঁছাত এবং পথে ইয়ালামলাম নামক স্থানে হজযাত্রীরা ইহরাম বাঁধতেন, যা ভারতীয় উপমহাদেশের মিকাত (হজের নিয়ত ও ইহরাম বাঁধার নির্ধারিত স্থান) হিসেবে পরিচিত।

আন্তর্জাতিক কলেরা সম্মেলন

কলেরা মহামারির বিশ্বব্যাপী বিস্তার এবং ব্যাপক প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে ১৮৬৬ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো একটি আন্তর্জাতিক স্যানিটারি কনফারেন্সের আয়োজন করে, যা পরে ‘কলেরা কনফারেন্স’ নামে পরিচিত হয়। এই কনফারেন্সে ভারতীয় উপমহাদেশকে কলেরার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত থেকে আগত হজযাত্রীদের ওপর কঠোর স্বাস্থ্য নজরদারি ও কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা আরোপ করা হয়।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে কলেরা মক্কায় ব্যাপক প্রাণহানির কারণ হলেও ওসমানীয় সালতানাতের কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় উপমহাদেশের হজযাত্রীদের মাধ্যমে কলেরার বিস্তার হলেও কোয়ারেন্টিন ক্যাম্প এবং স্বাস্থ্যবিধি প্রয়োগের মাধ্যমে এর প্রভাব কমানোর চেষ্টা করা হয়।

আরও পড়ুনবিরে শিফা: একটি অলৌকিক কুয়ার গল্প০৫ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক য় র ন ট ন ব যবস থ হজয ত র দ র কল র র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

কান ধরে কেন ক্ষমা চাইলেন অভিনেত্রী?

কান ধরে ক্ষমা চাইলেন ভারতীয় বাংলা টিভি ও চলচ্চিত্রাভিনেত্রী স্বস্তিকা দত্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে নেটিজেনদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ৩১ বছরের আলোচিত এই অভিনেত্রী। কিন্তু হঠাৎ কেন ক্ষমা চাইলেন স্বস্তিকা? 

ঘটনার সূত্রপাত, স্বস্তিকা অভিনীত জনপ্রিয় টিভি ধারাবাহিক ‘প্রফেসর বিদ্যা ব্যানার্জি’-কে কেন্দ্র করে। ধারাবাহিকটির একটি এপিসোডের একাংশ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। কয়েক সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওটিতে দেখা যায়, ক্লাসের ব্ল্যাক বোর্ডে ইংরেজি হরফে লেখা— ‘Knowlege is power’। সবকিছু ঠিকই ছিল। কিন্তু ‘Knowledge’ বানান নিয়ে যত বিপত্তি। কারণ বানানটি হওয়ার কথা ছিল ‘Knowledge’, সেখানে লেখা হয় ‘Knowledge’। ভুলবশত ‘d’ বর্ণটি বাদ পড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই এই ভুল দর্শক-নেটিজেনদের চোখ এড়ায়নি। শিক্ষাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত একটি ধারাবাহিকে এমন ভুল হওয়ায় শুরু হয় সমালোচনা। ভুল বানান নিয়ে কটাক্ষের শিকার হন ধারাবাহিকটির শিল্পী ও কলাকুশলীরা। 

আরো পড়ুন:

গায়িকা ফারিণের নাচ-গান নিয়ে নেটিজেনদের পোস্টমর্টেম

কাটপিসের ভয়েই সিনেমা করা হয়নি: দীপা খন্দকার

সময়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। পরে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে এসে কান ধরে ভুল স্বীকার করেন স্বস্তিকা দত্ত। কারণ এই বানানটি তারই হাতে লেখা। এ অভিনেত্রী বলেন, “এটা সম্পূর্ণ আমার দোষ, সেই ভুল স্বীকার আমরা করে নিচ্ছি। আসলে ২১ মিনিটের এপিসোডের জন্য যে পরিমাণ ব্যস্ততা থাকে, তাতে এরকম ভুল হয়ে যায়। তবে ভুল তো ভুলই, এর ক্ষমা হয় না। কিন্তু সকলে আমাদেরকে যতটা অশিক্ষিত ভাবছেন, আমরা ততটাও অশিক্ষিত নই। তাড়াহুড়ো করে ব্ল্যাকবোর্ডে বানানটি লিখতে গিয়ে আমি ভুল করে ফেলি। এজন্য আমি হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি, কান ধরেও ক্ষমা চাইছি।” 

কারণ ব্যাখ্যা করে স্বস্তিকা দত্ত বলেন, “কারণ শিক্ষিকা বিদ্যা ব্যানার্জি যেমন তার ছাত্র-ছাত্রীকে ভুল করলে শাস্তি দেন, ঠিক তেমনই আমি ভুল করেছি তাই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। অবশ্যই সমালোচনা করুন এবং ভুল ধরুন। আপনাদের সমালোচনা আমি মাথায় করে রাখি, যাতে পরবর্তীতে আর ভুল না হয়। দাদা স্নেহাশিস চক্রবর্তীও নানা ব্যস্ততার মধ্যে থাকেন, তবে আবার বলছি এই ভুলটা আমার।” 

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাগ করে নিয়ে স্বস্তিকা লিখেছেন, “আমাদের প্রজেক্টটা সবে নিঃশ্বাস নেওয়া শুরু করেছে। আমরা প্রত্যেকে ভীষণভাবে ‘KNOWLEDGEABLE’। আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছি, যাতে আপনাদের প্রত্যেকের ঘরে এবং মনে স্থান পেয়ে যায় ‘প্রফেসর বিদ্যা ব্যানার্জি’। তার মাঝে ঘটে গেছে একটা ‘Silly Mistake by Me and My Team’। আপনারা তো বুঝতেই পারছেন বাচ্চাটা এখন সবে নিঃশ্বাস নেওয়া শুরু করেছে, অর্থাৎ প্রজেক্টটা জাস্ট স্টার্ট হয়েছে। অনুরোধ রইল লাইভটা প্লিজ একবার শুনবেন। দাদা এবং ব্লুজ প্রোডাকশন, রূপসা চক্রবর্তী দিদি একটি খুব ডিফিকাল্ট এবং মারাত্মক টপিক উপহার দিচ্ছেন আপনাদের ‘প্রফেসর বিদ্যা ব্যানার্জি’। আপনাদের ভালোবাসায় প্রথম সপ্তাহের টিআরপি চার্টে আমরা চ্যানেল টপার হয়েছি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহেও তাই। কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা এই স্থান পেয়েছি আমাদের দর্শক, আপনাদের জন্যই। তাই আমি একটা ভুল করেছি, আমাদের টিম একটা ভুল করেছে। সেই নিয়ে আমরা ট্রোলড হচ্ছি।”  

নাটকটি স্টার জলসায় প্রচার হচ্ছে। শুটিং সেটে কাজের চাপ ব্যাখ্যা করে স্বস্তিকা দত্ত লেখেন, “প্রত্যেক দিনের ১৪ ঘণ্টার শুটিংয়ের মধ্যে অনেক প্রেসার থাকে সবার। প্রযোজক, পরিচালক, সহ প্রযোজক, ক্যামেরা পরিচালক, আর্টিস্টদের সিন মুখস্ত করা, কীভাবে তারা হাসবেন, কাঁদবেন, গাইবেন, নাচবেন... সব কিছুর মধ্যে যাতে নতুনত্ব থাকে, অডিয়েন্স যাতে এন্টারটেইনমেন্টটা সঠিকভাবে খুঁজে পান সেটার চেষ্টা করি। তার মাঝেই গত সপ্তাহের একটা ক্লাসরুমের সিনে ‘KNOWLEDGE’ বানান ভুল লিখে ফেলেছি আমি। ভীষণ হাই ড্রামা সিন থাকার ফলে আমরা কেউ লক্ষ্য করে উঠতে পারিনি। শুধু ‘D’ অক্ষরটি ছিল মিসিং। আমি, আমরা ক্ষমা চাইছি আপনাদের কাছে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ