আকাশ কালো হয়ে আসছিল। বাতাস, সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। সবাই নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটলেও শেফালী বেগম (৩৮) ছল ছল চোখে তাকাচ্ছিলেন যমুনার দিকে। যেখানে দাঁড়িয়ে ভাঙন দেখছেন, সেই স্থানটিও ভেঙে গেল কিছুক্ষণ পর। পাশেই মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল ১৩ বছর বয়সী মেয়ে শামিমা। বারবার নদীভাঙনের শিকার শেফালী বলছিলেন এক ছেলে ও দুই যমজ মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাওয়ার সংগ্রামের কথা। বৃষ্টি চলে এলে শেফালী আশ্রয় নেন পাশের গ্রামের এক বাড়িতে। সেখানেই বলছিলেন সন্তানদের নিয়ে তাঁর সংগ্রামের গল্প।

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার তেঘরিয়া বাজারে শেফালীর বাড়ি গত বছরে দুইবার নদীতে ডুবে গেছে। শেফালী বলছিলেন, ‘গতবার এপ্রিল মাসে একবার বাড়ি ডুবে নদীতে চলে গেছে পরে কিছু দূরে নতুন করে ঘর বাঁধি। আর তা–ও দুই মাস যেতে না যেতে নদীতে চলে গেল।’ চোখের পানি মুছতে মুছতে শেফালী আরও বলেন, ‘চোর কিছু নিলে কিছু রেখে যায়। আগুন লাগলে কিছু বাঁচানো যায়, কিন্তু নদীতে ঘর ডুবলে আর কিছু থাকে না। জমি–ফসল কিচ্ছুই থাকে না।’

এক ছেলে মো.

শামিম বালিজুড়ি মির্জা আবদুল হামিদ ডিগ্রি কলেজে এবং দুই যমজ মেয়ে সোনার বাংলা মডেল হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন শেফালী। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী আবদুল মজিদ (৪০) দিনমজুরের কাজ করেন। সব সময় কাজ পাওয়া যায় না। বছরে ছয়–সাত মাস বইসাই থাকতে হয়। আর আমি টুকটাক কাজ করি। ছাগল পালি। বেসরকারি সংস্থা কেয়ারের সুফল প্রকল্প থেকে কিছু টাকা পেয়ে ছাগল কিনেছি আর বাচ্চা বিক্রি করেও চলেছি। এটাতে পড়াশোনায় কিছুটা হলেও সাহায্য হয়েছে।’

আরও পড়ুনআইডিবি মুসলিমদের দেবে ৭২০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ, মিলবে মাসিক হাতখরচও৬ ঘণ্টা আগে

শেফলী আরও বলেন, ‘আমি উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছি। আমার বাপে যৌতুক দেয় নাই বইলা ভালো ঘরে আমার বিয়া হয় নাই। পড়াশোনা আছিলো বইলা অখনো পোলা–মাইয়াগো পড়াইতেছি। কষ্ট হয়। কিন্তু ওরা পড়াশোনা না করলে মানুষের দাস হইয়া থাকব, এটা আমি হইতে দিব না। নদীতে বাড়ি ডুবে গেলে সাথে সাথে ছেলে–মেয়ের পড়ার বইও ডুবে যায়, তখন বিপদে পড়ে যাই। আবার ধারকর্য করে ছেলের বই কিনি। মেয়েদের বই আবার স্কুলের শিক্ষকদের অনুরোধ করলে পাওয়া যায়। আমি ওগো থামতে দিমু না। কেউ যদি আমাদের দিকে তাকায় একটু, তাইলে কষ্টটা কমতো কিছু। তয় হাত পাতি না, যতটা পারি নিজেই কষ্ট করি।’

ছবি: প্রথম আলো

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠের অভাবে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার চর্চা নেই : সুমন

মাঠের অভাবে, সুস্থ পরিবেশের অভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার চর্চা নেই বলে মন্তব্য করে জাতীয়তাবাদী জিয়া সৈনিক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ন সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলার আহবায়ক গোলাম মোস্তফা সুমন বলেন-সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দময় জীবনের জন্য খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য প্রয়োজন ভালো পরিবেশ। একটা সময় ছিল যখন ফাঁকা জায়গা, খেলার মাঠ এবং স্কুল-কলেজের খেলার চত্বর খেলাধুলার কর্মকাণ্ডে মুখর থাকত। 

মাঠ দখল, মাঠে স্থাপনা নির্মাণ, স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজের মাঠ খেলাধুলা ছাড়া বাণিজ্যিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার না করার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছার অভাবে এর বাস্তবায়ন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। 

বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকেলে নাসিক ৪ নং ওয়ার্ডের আটি মনোয়ারা জুট মিল মাঠে নিউ শাপলা স্পোর্টিং ক্লাব আয়োজিত এলইডি টিভি কাপ ক্রিকেট টুনামেন্ট ফাইনাল পুরুস্কার বিতরনী এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের জিলানী হিরা।

এ সময় গোলাম মোস্তফা সুমন আরও বলেন, খেলাধুলা হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম যার ধারা আমাদের সমাজ ও জাতীকে বিশ্বের দরবারে দ্রুত পরিচিত লাভ করা যায়। খেলাধুলার মাঝে কোনো রাজনীতি থাকতে পারবে না। কারণ খেলাধুলাটা ফেয়ার থাকতে হবে। যদি খেলা ফেয়ার থাকে রাজনীতিমুক্ত থাকে তাহলে এখান থেকে আমাদের ভবিষ্যতের ক্রিড়াবীদ তৈরি হবে। 

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয়তাবাদী জাতীয়তাবাদী জিয়া সৈনিক দলের নারায়ণগঞ্জ জেলার যুগ্ন-আহবায়ক আসাদুজ্জমান মিঠু প্রধান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জাতীয়তাবাদী জিয়া সৈনিক দলের সহ-সভাপতি আল-আমিন, মো. জাকির হোসেন, জিয়া সৈনিক দলের নাসিক ১নং ওয়ার্ডের সভাপতি মো. ওমর ফারুক জয়, আব্দুর রহিমসহ জিয়া সৈনিক দলের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মী এবং এলাকার গণ্যামান্য ব্যাক্তিবর্গ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ