অবরোধের সঙ্গে যোগ হয়েছে বৃষ্টি, ঢাকায় তীব্র যানজট
Published: 22nd, May 2025 GMT
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপে একজন লিখেছেন, ‘কেউ ভুলেও ফার্মগেট-বিজয় সরণি আইসেন না, আর আসলেও আমার জন্য লাঞ্চ নিয়ে আইসেন।’ পোস্টদাতা এই দুই এলাকার ভয়াবহ যানজট পরিস্থিতি বোঝাতে তাঁর পোস্টে একটি ভিডিও যুক্ত করে দিয়েছেন। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, সড়কে থাকা গাড়িগুলো স্থির দাঁড়িয়ে আছে।
শুধু বিজয় সরণি ও ফার্মগেট এলাকা নয়, আজ সকাল থেকেই পল্টন, গুলিস্তান, কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরা, মহাখালী, মগবাজার, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, ধানমন্ডিসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। ঘর থেকে বের হওয়া মানুষেরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। বিকেলে যানজট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়।
ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বলছেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদ বুঝিয়ে দেওয়া ও দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আজ ভোর থেকেই কাকরাইল মসজিদের সামনের সড়ক ও মৎসভবন মোড় এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন। পাশাপাশি সকাল ১০টার দিকে ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের সড়ক অবরোধ করে ছাত্রদল অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। এতে কাকরাইল, মৎসভবন এবং শাহবাগ মোড়ের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে এসব এলাকার আশপাশে সকাল থেকেই তীব্র যানজট তৈরি হয়। এর মধ্যে সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে অনেক সড়কে পানি জমে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গাড়ির গতি অনেক কমে যায়। যানজটের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়।
বিজয় সরণি, ফার্মগেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মহাখালী, বাংলামোটর ও আসাদ গেট এলাকায় বেলা ২ থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব এলাকায় তীব্র যানজট। এর মধ্যে ফার্মগেট, বিজয় সরণি ও বাংলামোটর এলাকার সড়ক পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে। একই পরিস্থিতি ছিল আসাদ গেট এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকাতেও। এসব সড়কে গাড়ি যেন চলছেই না। সড়কের দুই পাশেই তীব্র যানজট।
বিজয় সরণি থেকে ফার্মগেট-কারওয়ান বাজার হয়ে বাংলামোটর সড়কে আটকে থাকা বাস, পিকআপ এবং প্রাইভেটকারের ১০ জন চালকের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা জানিয়েছেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সড়কে আটকে আছেন তাঁরা। তাঁদের একজন গুলিস্তান-এয়ারপোর্ট পরিবহনের চালক আনারুল ইসলাম। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কারওয়ান বাজার মোড়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিজয় সরণি থেকে কারওয়ান বাজার আসতেই তাঁর সময় লেগেছ আড়াই ঘণ্টার বেশি। অনেক যাত্রী বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন।
ফার্মগেট এলাকায় কথা হয় আব্দুল গফুর নামে একজন পিকআপ চালকের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গাজীপুর থেকে বেলা ১১টায় গুলিস্তানের উদ্দেশে রওনা দেন। বেলা ১টার মধ্যে তিনি মহাখালী পর্যন্ত আসেন। আর দুই ঘণ্টায় তিনি মহাখালীর আমতলী থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এসেছেন। গন্তব্যে কখন পৌঁছবেন তা অনিশ্চিত।
বাংলামোটর এলাকায় কথা হয় মিরপুর থেকে গুলিস্তান রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের চালক মো.
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ইমাম হাসানের সঙ্গে। তিনি রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে একটি মোটরসাইকেলে কারওয়ান বাজারে যাচ্ছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আসাদ গেট থেকে খামারবাড়ির দূরত্ব দেড় কিলোমিটার হতে পারে। এইটুকু পথ আসতেই ৪৫ মিনিট চলে গেছে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে চরম যানজট। গাড়ি যেন নড়ছেই না।
ট্রাফিক পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) অনীশ কীর্ত্তনীয়া বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক অবরোধ এবং বৃষ্টির কারণে সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। কারওয়ান বাজারের যানজট মহাখালী পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে।
রামপুরা থেকে মালিবাগ, কাকরাইল হয়ে পল্টন পর্যন্ত সড়কেও দিনভর তীব্র যানজট। বেলা দেড়টার দিকে মালিবাগের আবুল হোটেল এলাকায় দেখা গেছে, সড়কের উভয় পাশে তীব্র যানজট। অনেক মানুষ হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা গেছে, ধানমন্ডি ৩২সহ আশপাশ এলাকায়। প্রথম আলোর একজন প্রতিবেদক বেলা ১১টায় ধানমন্ডির ৮/এ থেকে কারওয়ান বাজারের কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। প্রথম আলোর কার্যালয়ে আসতে তাঁর দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। তিনি জানান, মিরপুর রোডে সকাল থেকে তীব্র যানজট ছিল।
এদিকে পল্টন, গুলিস্তান ও মতিঝিল এলাকাতেও সকাল থেকেই যানজট ছিল। ট্রাফিক পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) দেওয়ান জালাল উদ্দিন চৌধুরী বিকেল সোয়া ৩টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মতিঝিলের বিভিন্ন এলাকায় যানজট ছিল। তবে দুপুরের পর থেকে যানজট কমতে থাকে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রওয় ন ব জ র ত ব র য নজট প রথম আল ক সড়ক অবর ধ পর স থ ত ক অবর ধ এল ক য় র সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াশিংটন ডিসিতে গুলিতে দুই ইসরায়েলি দূতাবাস কর্মী নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটাল জিউইশ মিউজিয়ামের বাইরে গতকাল বুধবার রাতে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে গুলিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন ডিসির তৃতীয় ও এফ স্ট্রিট এলাকায় একজন পুরুষ ও একজন নারী গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থল জাদুঘরের কাছেই অবস্থিত। এ এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই) ও মার্কিন অ্যাটর্নির অফিস রয়েছে।
ওয়াশিংটন পুলিশের প্রধান পামেলা স্মিথ বলেন, অনুষ্ঠান শুরুর আগে জাদুঘরের বাইরে এক ব্যক্তি হাঁটাহাঁটি করছিলেন। সন্দেহভাজন হিসেবে ওই ব্যক্তিকে পরে আটক করা হয়েছে। তাঁকে আটক করার পর তিনি ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি প্যালেস্টাইন’ (ফিলিস্তিন মুক্ত করো, ফিলিস্তিন মুক্ত করো) বলে স্লোগান দেন।
ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের মুখপাত্র তাল নাইম কোহেন বলেন, নিহত দুই কর্মীকে ‘খুব কাছ থেকে গুলি’ করা হয়েছে। তাঁরা দুজনই একটি ইহুদি অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছিলেন।
ইসরায়েলি দূতাবাসের পক্ষ থেকে হামলাকারী, ভুক্তভোগী কিংবা হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম নিশ্চিত করেছেন, গুলিতে নিহত ব্যক্তিরা ইসরায়েলি দূতাবাসের কর্মী। তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা সক্রিয়ভাবে ঘটনার তদন্ত করছি এবং শিগগিরই আরও তথ্য জানাব। আমরা হামলাকারীকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনব।’
এফবিআই পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল বলেন, তিনি ও তাঁর দলকে ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়েছে। তাঁর দল তদন্তে সহায়তা করছে।
ক্যাশ প্যাটেল বলেন, ‘আমরা ঘটনা সম্পর্কে জানতে ও ব্যবস্থা নিতে মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগের সঙ্গে কাজ করছি। সবাইকে অনুরোধ করছি, দয়া করে ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করুন।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন এ ঘটনাকে ‘একটি হীন ও ইহুদিবিদ্বেষী সন্ত্রাসী হামলা’ বলে উল্লেখ করেছেন।
ড্যানি বলেন, ‘কূটনীতিক ও ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চরম মাত্রা অতিক্রম করেছে। আমরা নিশ্চিত, মার্কিন কর্তৃপক্ষ এ অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ও ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি জিনিন পিরো ঘটনাস্থলে গেছেন।
মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগ এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ঘটনা সম্পর্কে জানাতে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।