মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধের প্রতিচ্ছবি হলো মানবতা। একজন মানুষের জীবনে প্রকৃত আনন্দ তখনই আসে, যখন সে স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে অন্যের উপকার করে। মানবতাবাদ সম্পর্কে সচেতনতা এবং বোধগম্যতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মানবতাবাদী দিবস পালন করা হয়। মানবতাবাদী মূল্যবোধের মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার, সমতা এবং সবার জন্য একটি দয়ালু পৃথিবী গড়ে তোলার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস। এটি আমাদের পারস্পরিক সহানুভূতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রচেষ্টারই অংশ।
১৯৮০ সালের শুরুর দিকে আমেরিকান হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন মানবতাবাদে উৎসাহিত হয়ে পরিচালিত হয়েছিল। এর পর থেকে এটি একটি বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। ২১ জুনের সূর্যোদয়কে আলোকিতকরণ, বিকাশ ও মানবতা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতার একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব মানবতাবাদী দিবস ৬০টিরও বেশি দেশে পালিত হয়। মানবতাবাদ এমন একটি দর্শন, যা প্রাচীন গ্রিসে প্রচলিত ছিল, যা আজকের বিশ্বেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কিন্তু বিশ্ব এখন গোলাবারুদ, পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগে দানবিক হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত। বর্বরতার সর্বোচ্চ থাবায় মানুষ মরছে অত্যন্ত নৃশংসভাবে। মানুষের মধ্যকার দানবীয় শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো এখন সময়ের প্রধান চাহিদা।
মানবতাবাদী বলতে সাধারণত সেই ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি মানুষের মর্যাদা, অধিকার এবং কল্যাণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মানবতাবাদ একটি দার্শনিক অবস্থান, যা মানুষের মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং সামাজিক উন্নয়নে বিশ্বাস করে। এটি ধর্মীয় বা অলৌকিকতার ওপর নির্ভর না করে যুক্তি, নীতিশাস্ত্র ও ন্যায়বিচারের ওপর ভিত্তি করে জীবনকে দেখার একটি দৃষ্টিভঙ্গি।
আমাদের দেশে দিবসটি এখন পর্যন্ত গুরুত্ব না পেলেও তা পালনের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই বিশেষ দিনটি ব্যক্তি ও সম্প্রদায়কে মানুষ হওয়ার অর্থ কী এবং কীভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে একটি উন্নত ও ন্যায়সংগত বিশ্ব তৈরি করতে পারি, তা নিয়ে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে। আপনি মানবতাবাদের দীর্ঘ দিনের সমর্থক হোন বা এর নীতি সম্পর্কে শুধু কৌতূহলী হোন। বিশ্ব মানবতাবাদী দিবস শেখা, সংযোগ স্থাপন এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। ২০২৫ সালের বিশ্ব মানবতাবাদী দিবসের প্রতিপাদ্য– ‘বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতার মাধ্যমে উন্মুক্ত সমাজকে শক্তিশালী করা’।
ইউরোপীয় মানবতাবাদী ফেডারেশন (ইএইচএফ) মনে করে, মানবতাবাদকে জীবন যাপনের একটি উপায় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবং বিশ্বের বর্তমান বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার সুযোগ তৈরির জন্য নিবেদিত একটি দিন। ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা ব্যাখ্যা করা থেকে শুরু করে ধর্মীয় চরমপন্থার বিরোধিতা করা বা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা পর্যন্ত ইএইচএফের কাজ বিস্তৃত।
এর সভাপতি মাইকেল বাউয়ার বলেছেন, ‘মহামারির এই সময়ে এর বহু চ্যালেঞ্জের কারণে মানবতাবাদী মূল্যবোধ আগের চেয়েও বেশি প্রয়োজনীয়। বর্তমানে মানবতা ও সামাজিক সংহতি অপরিহার্য। মাথা ঠান্ডা রেখে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের অত্যাধুনিক ধারায় যুক্তিসংগত পদক্ষেপ এই মানবিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যমগুলোর একটি। আমরা নিশ্চিত, মূল্যবোধের মানবতাবাদী ভিত্তি আমাদের সমাজের মঙ্গল ও সমৃদ্ধ উন্নয়ন এবং একটি সুখী ও সফল জীবন বাস্তবায়নের জন্য একটি চমৎকার ভিত্তি প্রদান করে।’
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাতে একসময় মানবতাবাদকে মূলত ‘হিউম্যানিটাস’ বলা হতো। এর অর্থ ছিল মানবিক গুণাবলির বিকাশ, যা তার সমস্ত রূপে পূর্ণমাত্রায় থাকাকে নির্দেশ করা হতো। ফলস্বরূপ, মানবতাবাদের অধিকারী শুধু একজন বসে থাকা এবং বিচ্ছিন্ন দার্শনিক বা জ্ঞানী ব্যক্তি হতে পারেন না। বরং অবশ্যই সক্রিয় জীবনের একজন অংশগ্রহণকারী হতে পারেন।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: সাংবাদিক
jsb.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দ বস ম নবত ব দ র জন য র একট
এছাড়াও পড়ুন:
অ-অভিবাসী ৮০ হাজার ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন শপথ নেওয়ার পর থেকে প্রায় ৮০ হাজার অ-অভিবাসী ভিসা বাতিল করেছে। মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, হামলা ও চুরির মতো অপরাধের অভিযোগ রয়েছে—এমন অ–অভিবাসীদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওয়াশিংটন এক্সামিনারের প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর থেকে অভিবাসনবিরোধী ব্যাপক অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে বৈধ ভিসাধারী অনেক অভিবাসীকেও তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রেও কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। নতুন নিয়মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যাচাই-বাছাই আরও কঠোর করা হয়েছে এবং আবেদনকারীদের স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া বাড়ানো হয়েছে।
অ-অভিবাসী ভিসা বাতিলের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজারটি ঘটেছে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর কারণে। হামলা করার জন্য বাতিল করা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ভিসা এবং চুরির জন্য আরও ৮ হাজার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, এই তিন ধরনের অপরাধ চলতি বছরের মোট ভিসা বাতিলের প্রায় অর্ধেক।
গত আগস্টে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন, ওয়াশিংটন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ও আইন লঙ্ঘনের কারণে ছয় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ‘সন্ত্রাসবাদে সমর্থন’ দেওয়াসংক্রান্ত অভিযোগও ছিল।
গত মাসে মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালী ডানপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড–সম্পর্কিত মন্তব্য করায় অন্তত ছয়জনের ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
মে মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছিলেন, তিনি শত শত—সম্ভবত হাজারো মানুষের ভিসা বাতিল করেছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীও আছেন। কারণ, তাঁরা এমন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
চলতি বছরের নির্দেশনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনীতিকদের বলা হয়েছে, বিদেশে থাকা আবেদনকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে, যাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বৈরী মনোভাব থাকতে পারে অথবা যারা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন এবং গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের সমালোচনার কারণে শিক্ষার্থী ও গ্রিন কার্ডধারী ভিসাধারীরা দেশ থেকে বহিষ্কৃত হতে পারেন। তাঁদের এসব কর্মকাণ্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং অভিযোগ করা হয়েছে, তারা হামাসপন্থী।