Samakal:
2025-08-05@10:55:51 GMT

মূল্যবোধের বিকাশ কেন জরুরি

Published: 20th, June 2025 GMT

মূল্যবোধের বিকাশ কেন জরুরি

মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধের প্রতিচ্ছবি হলো মানবতা। একজন মানুষের জীবনে প্রকৃত আনন্দ তখনই আসে, যখন সে স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে অন্যের উপকার করে। মানবতাবাদ সম্পর্কে সচেতনতা এবং বোধগম্যতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মানবতাবাদী দিবস পালন করা হয়। মানবতাবাদী মূল্যবোধের মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার, সমতা এবং সবার জন্য একটি দয়ালু পৃথিবী গড়ে তোলার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস। এটি আমাদের পারস্পরিক সহানুভূতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রচেষ্টারই অংশ।

১৯৮০ সালের শুরুর দিকে আমেরিকান হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন মানবতাবাদে উৎসাহিত হয়ে পরিচালিত হয়েছিল। এর পর থেকে এটি একটি বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। ২১ জুনের সূর্যোদয়কে আলোকিতকরণ, বিকাশ ও মানবতা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতার একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব মানবতাবাদী দিবস ৬০টিরও বেশি দেশে পালিত হয়। মানবতাবাদ এমন একটি দর্শন, যা প্রাচীন গ্রিসে প্রচলিত ছিল, যা আজকের বিশ্বেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কিন্তু বিশ্ব এখন গোলাবারুদ, পারমাণবিক শক্তি প্রয়োগে দানবিক হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত। বর্বরতার সর্বোচ্চ থাবায় মানুষ মরছে অত্যন্ত নৃশংসভাবে। মানুষের মধ্যকার দানবীয় শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো এখন সময়ের প্রধান চাহিদা।
মানবতাবাদী বলতে সাধারণত সেই ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি মানুষের মর্যাদা, অধিকার এবং কল্যাণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মানবতাবাদ একটি দার্শনিক অবস্থান, যা মানুষের মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং সামাজিক উন্নয়নে বিশ্বাস করে। এটি ধর্মীয় বা অলৌকিকতার ওপর নির্ভর না করে যুক্তি, নীতিশাস্ত্র ও ন্যায়বিচারের ওপর ভিত্তি করে জীবনকে দেখার একটি দৃষ্টিভঙ্গি। 

আমাদের দেশে দিবসটি এখন পর্যন্ত গুরুত্ব না পেলেও তা পালনের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই বিশেষ দিনটি ব্যক্তি ও সম্প্রদায়কে মানুষ হওয়ার অর্থ কী এবং কীভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করে একটি উন্নত ও ন্যায়সংগত বিশ্ব তৈরি করতে পারি, তা নিয়ে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে। আপনি মানবতাবাদের দীর্ঘ দিনের সমর্থক হোন বা এর নীতি সম্পর্কে শুধু কৌতূহলী হোন। বিশ্ব মানবতাবাদী দিবস শেখা, সংযোগ স্থাপন এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। ২০২৫ সালের বিশ্ব মানবতাবাদী দিবসের প্রতিপাদ্য– ‘বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতার মাধ্যমে উন্মুক্ত সমাজকে শক্তিশালী করা’।
ইউরোপীয় মানবতাবাদী ফেডারেশন (ইএইচএফ) মনে করে, মানবতাবাদকে জীবন যাপনের একটি উপায় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবং বিশ্বের বর্তমান বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার সুযোগ তৈরির জন্য নিবেদিত একটি দিন। ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা ব্যাখ্যা করা থেকে শুরু করে ধর্মীয় চরমপন্থার বিরোধিতা করা বা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা পর্যন্ত ইএইচএফের কাজ বিস্তৃত। 
এর সভাপতি মাইকেল বাউয়ার বলেছেন, ‘মহামারির এই সময়ে এর বহু চ্যালেঞ্জের কারণে মানবতাবাদী মূল্যবোধ আগের চেয়েও বেশি প্রয়োজনীয়। বর্তমানে মানবতা ও সামাজিক সংহতি অপরিহার্য। মাথা ঠান্ডা রেখে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের অত্যাধুনিক ধারায় যুক্তিসংগত পদক্ষেপ এই মানবিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যমগুলোর একটি। আমরা নিশ্চিত, মূল্যবোধের মানবতাবাদী ভিত্তি আমাদের সমাজের মঙ্গল ও সমৃদ্ধ উন্নয়ন এবং একটি সুখী ও সফল জীবন বাস্তবায়নের জন্য একটি চমৎকার ভিত্তি প্রদান করে।’  

এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকাতে একসময় মানবতাবাদকে মূলত ‘হিউম্যানিটাস’ বলা হতো। এর অর্থ ছিল মানবিক গুণাবলির বিকাশ, যা তার সমস্ত রূপে পূর্ণমাত্রায় থাকাকে নির্দেশ করা হতো। ফলস্বরূপ, মানবতাবাদের অধিকারী শুধু একজন বসে থাকা এবং বিচ্ছিন্ন দার্শনিক বা জ্ঞানী ব্যক্তি হতে পারেন না। বরং অবশ্যই সক্রিয় জীবনের একজন অংশগ্রহণকারী হতে পারেন।

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: সাংবাদিক
jsb.

[email protected]

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ বস ম নবত ব দ র জন য র একট

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্যে সংস্কারের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না

স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের বিষয়গুলো সরকারের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বরং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে।

গতকাল রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্য পদ্ধতি সংস্কার: আমরা কোথায়’ শীর্ষক নীতি সংলাপে অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্যবিদ ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য এই কথা বলেন। বেসরকারি চিন্তক প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও নাগরিক সংগঠন ইউএইচসি ফোরাম যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে। এ আয়োজনে সহায়তা করে ইউনিসেফ।

সংলাপে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন হয়েছে এবং তারা একটি প্রতিবেদন দিয়েছে, এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা। বাস্তবায়নে বুদ্ধিমত্তা, অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং কোন কাজের পর কোন কাজ বা কোন কাজের সঙ্গে কোন কাজ (সিকোয়েন্সিং) সেই বিষয়গুলো ঠিক করা দরকার।

প্রথম উপস্থাপনায় ইউএসসি ফোরামের সদস্য জনস্বাস্থ্যবিদ মো. আমিনুল হাসান বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রথমেই দরকার একটি টাস্কফোর্স তৈরি করা। টাস্কফোর্সের কাজ কী হবে তার বিশদ বর্ণনা করেন তিনি। সংস্কারের শেষ কাজটি হবে স্বাস্থ্য কমিশন গঠন। কমিশন গঠিত হলে টাস্কফোর্সের বিলুপ্তি ঘটবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদনে ৬০০ এর বেশি সুপারিশ রয়েছে। সব সুপারিশই সঠিক, সব বাস্তবায়ন করা উচিত। অত্যাবশ্যক প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং অত্যাবশ্যক জরুরি স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কেউ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে এক শ দিনও সময় নেই। যা করার দ্রুত করতে হবে। কেউ বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, সংস্কারকাজ আর এগোবে না। একজন বলেন, নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্য যেন গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হওয়া জরুরি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারে। একইভাবে স্বাস্থ্য কমিশন অধ্যাদেশের মাধ্যমে গঠন করতে পারে।

আমলাতন্ত্র যেকোনো সংস্কারের সবচেয়ে বড় বাধা—এমন মন্তব্য করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের অন্য একজন সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হযবরল অবস্থা। এ রকম অগোছালো মন্ত্রণালয় আর একটিও নেই। এখনই বড় কোনো কিছু করার উপযুক্ত সময়।’

অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক বলেন, বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় স্বাস্থ্য খাত নেই।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বিশ্বের যেসব দেশে রাষ্ট্রপ্রধানেরা স্বাস্থ্যের জন্য উদ্যোগী ও সক্রিয় হয়েছেন, সেখানে স্বাস্থ্যে উন্নতি হয়েছে। এ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে তা দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ওষুধ খাত নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফের প্রতিনিধি ছাড়াও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক এনজিও এবং দেশি এনজিওর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংলাপে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গয়নার দোকান থেকে গুজবের বাজার—তামান্না অবশেষে মুখ খুললেন রাজ্জাক প্রসঙ্গে
  • আবুল হাসানকে নিয়ে নতুন গল্পগাছা ও পূর্বাপর
  • সরকারের কাছ থেকে ভোট আদায় করেই ছাড়ব: মির্জা আব্বাস
  • অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব
  • রক্তাক্ত ৪ আগস্ট: ফেনীতে গুলিতে ঝরে যায় ৭ তরুণের প্রাণ
  • হাতকড়াসহ নৌকা থে‌কে হাওরে ঝাঁপ দি‌য়ে আওয়ামী লীগ নেতার পলায়ন
  • ছাত্রলীগে লুকিয়ে থাকা শিবিরকে বাঁচাতে সহায়তার ন্যারেটিভটি সম্পূর্ণ মিথ্যা: সাদিক কায়েম
  • কন্যা ফাতিমাকে নবীজির ৫ উপদেশ
  • ‘ঘাড়ে, বুকে, হাতে গরম কিছু এসে লাগল, লুটিয়ে পড়েছিলাম মাটিতে’
  • স্বাস্থ্যে সংস্কারের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না