আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে জাতির সামনে মহাদুর্যোগ নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

আজ শনিবার সকালে দলের যশোর জেলার ‘রুকন শিক্ষাশিবিরে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত শিক্ষাশিবিরে সভাপতিত্ব করেন দলের যশোর জেলা আমির গোলাম রসুল।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে সরকার যখন নির্বাচন করতে পারবে, আমরা সেই নির্বাচনে যেতে রাজি আছি। নির্বাচন যখনই হোক, সেই নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করতে জামায়াতে ইসলামী এই সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের দাবি করে আসছে। আধুনিক গণতান্ত্রিক ৬০-৬৫ দেশে বর্তমানে এই পদ্ধতির নির্বাচন প্রচলিত। এই নির্বাচনে মানুষ ব্যক্তিকে নয়, দলকেই ভোট দেয়। দলের ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে তাদের আসন পাবে। যেহেতু এখানে ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত নয়, সে কারণে এখানে পেশিশক্তি, কালোটাকার ব্যবহার হয় না।’

একটি রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বক্তৃতার সময় আমরা বলব, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়, কিন্তু কাজের সময় দেশের চেয়ে দল আর দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়। এই মার্কা রাজনীতি করে দয়া করে কেউ দেশ-জাতির ক্ষতি করবেন না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে এসেছি, অথচ আমাদের রাষ্ট্রীয় সমস্যাগুলো, গণতান্ত্রিক সুযোগগুলো, ভোটাধিকার এখনো সুনিশ্চিত করতে পারিনি।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতা করতে চান উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু জাতির কাছে আপনাদের যে কমিটমেন্ট, সেটি রক্ষা করতে হবে। আপনাদের শিরদাঁড়া সোজা রাখতে হবে, নিরপেক্ষ থাকতে হবে। মাঝে কিন্তু আপনারা জাতির মাঝে সংশয় সৃষ্টি করেছেন। সেটি বুঝে হোক বা না বুঝে। এখনো আপনাদের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে জাতির সামনে মহাদুর্যোগ নেমে আসবে।’

জাতীয় ঐক্য করতে না পারার কথা উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার অল্পদিনের মধ্যে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ অনেক দেশ উন্নতি করেছে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে। কিন্তু আমরা পারছি না। আমরা জাতিকে বিভক্ত করেছি ঝগড়াঝাঁটি, বিতর্ক, অনৈক্য, অতীতের নানান অপ্রয়োজনীয় মীমাংসিত ইস্যুকে সামনে এনে। যারা জাতিকে এইভাবে বিভক্ত করছে, আগামী নির্বাচনে তাদের পরাজিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে যদি কেউ ভোট ডাকাতি করে, ভোটাধিকার হরণ করে, কালোটাকা, পেশিশক্তি দিয়ে আবার ২০১৪, ’১৮ ও ’২৪–এর মতো পরিস্থিত করতে চায়, দেশের মানুষ সমস্ত শক্তি দিয়ে তাদের রুখে দাঁড়াবে। আমরা যদি তা না পারি, তাহলে আমাদের রক্তদান সব বৃথা হয়ে যাবে।’

শিক্ষাশিবিরে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজীজুর রহমান, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র আপন দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিতর্কিত ছবির স্থানে খালেদা জিয়ার উক্তি টানাল শিবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে ছাত্রশিবিরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া উত্তেজনার মধ্যেও চলছে তাদের জুলাই প্রদর্শনী। তবে বিতর্কিত ছবিগুলো অপসারণ করে সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার উক্তি, বিচারকার্যের নানা অসঙ্গতি ও ভুয়া সাক্ষীর জবানবন্দির ছবি টানানো হয়েছে।

বুধবার (৬ আগষ্ট) প্রদর্শনীর পাশাপাশি পূর্বসুচী অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদ পলায়নের এক বছর: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

এতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন শিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন পুসাবের প্রতিনিধি সাদিক আল আরমান, জুলাই ঐক্যের সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ প্রমুখ।

আরো পড়ুন:

শেখ হাসিনার রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে বর্ণচোরা ষড়যন্ত্র করছে বামরা: ঢাবি শিবির

বামপন্থিদের চাপে নিজামী-সাঈদী-সাকা চৌধুরীদের ছবি সরালো ঢাবি প্রশাসন

টিএসসি প্রাঙ্গণে যথারীতি চলমান শিবিরের প্রদর্শনীতে কেবল বিতর্ক সৃষ্টি করা জামায়াত ও বিএনপি নেতৃবৃন্দের ছবিগুলো সরানো হয়েছে। তার জায়গায় যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে ২০১১ সালে করা বেগম জিয়ার উক্তি, স্কাইপি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের ফিরিস্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ভুয়া সাক্ষীদের জবানবন্দির প্ল্যাকার্ড টানানো হয়েছে।

এর আগে, মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে শিবিরের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল বাম সংগঠনগুলো। এ নিয়ে শিবির এবং বামপন্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ দেখা যায়।

তবে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে মবের কারণে প্রদর্শনী বন্ধ হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাবি শাখা শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ।

অন্যদিকে, প্রদর্শনীতে বিতর্কিত ছবি রাখায় শিবিরকে জবাবদিহিতা করতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাবি প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মিটিং করবে। শিবিরের কাছে এর কারণ জানতে চাওয়া হবে। তবে প্রদর্শনী বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ