চট্টগ্রাম নগরীর অলিগলিতে প্রতিদিন জমে ওঠা প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের অজান্তেই হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের সম্পদ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উঠলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে দুর্গন্ধযুক্ত ডাস্টবিন বা বিশাল ল্যান্ডফিলের ছবি। অথচ সে চিত্রটাই বদলে দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার সমন্বিত উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি নতুন মডেল, যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য রূপ নিচ্ছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যে।
এই উদ্যোগের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো– ‘সার্কুলার ইকোনমি’র ধারণা প্রতিষ্ঠা, অর্থাৎ একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে অর্থনৈতিক চক্রে ফিরিয়ে আনা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন একটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা হুসনেআরা একজন সক্রিয় রিসাইকলার। প্রতিদিন সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন থেকে গড়ে ৭০-১৫০ কেজি প্লাস্টিক, পলিথিন ও ধাতব বর্জ্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তিনি সরবরাহ করেন স্থানীয় ডিলারদের কাছে। এ কাজ থেকে মাসে আয় হয় প্রায় ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। উদ্যোগের আওতায় কাজ করে হুসনেআরা শুধু নিজের জীবিকা নির্বাহই করছেন না, বরং অপচনশীল কঠিন বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখছেন।
‘আগে লোকজন বলত, এসব কুড়িয়ে কী হবে? এখন বোঝে, আমি পরিবেশও বাঁচাই, ঘরও চালাই’– বলেন হুসনেআরা। সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করতে খানিকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমি চাই না ওদের ওপর ভর করে চলি, যতদিন পারি নিজে কষ্ট করে খাই।’
হুসনেআরার এই নিষ্ঠা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি তাঁকে চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠ ভাঙারিওয়ালা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে, যা তাঁর মতো আরও অনেককেই কঠোর পরিশ্রম ও পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহ ও মর্যাদা দিয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে হুসনেআরার মতো প্রায় তিন হাজার বর্জ্য সংগ্রাহক প্রতিদিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত আছেন, যা এ উদ্যোগটিকে একটি সফল পরিবেশ-অর্থনীতি সম্মিলিত মডেলে রূপ দিয়েছে।
চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ২০২২ সাল থেকে চালু হওয়া ‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ উদ্যোগের আওতায় এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ হাজার টনের বেশি কঠিন বর্জ্য, যার মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ প্লাস্টিক এবং ৭০ শতাংশ সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক।
আমাদের দেশের প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এ শিল্পে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ লাখ মানুষ নিয়োজিত। এটি দেশের ১২তম বৃহৎ রপ্তানি খাত, যেখান থেকে প্রতিবছর ১.
একজন বর্জ্য সংগ্রাহক মাসে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন, যা একদিকে তাদের জীবিকা নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে শহরকে করে তুলছে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য।
শিক্ষার্থী
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম কলেজ
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন বর জ য পর ব শ ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
অচলায়তন ভেঙে সক্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় কোয়াব
‘‘কোনো একজন ব্যক্তির জন্য ক্রিকেট থেমে থাকতে পারে না।’’ মোহাম্মদ মিঠুন কখনো ভাবেননি ক্রিকেট মাঠে দাঁড়িয়ে কখনো এমন কথা বলতে পারবেন। সঙ্গেও এ-ও যোগ করেন, ‘‘এর আগে কখনো কোয়াবের সঙ্গে বিশেষ করে বর্তমান খেলোয়াড় কখনো জড়িত ছিল না। কারণ আমরা অনুভব করতাম যারা এর আগে দায়িত্বে ছিল, তারা আমাদের জন্য কাজ করবে। এই আশায় আমরা শেষ ১৫ বছর, ২০ বছর বা ৩০ বছর তাদের অপেক্ষায় কাটিয়ে দিয়েছি বা তাদের ওপর নির্ভর করে আমরা লম্বা সময় ভুগেছি।’’
জাতীয় দলে খেলা এই ক্রিকেটারের আঙুল তুলেছেন সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দূর্জয়ের ওপর। যিনি ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি ছিলেন ১৫ বছর। কোনো নির্বাচন, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীতা, কোনো বিরুদ্ধ আওয়াজ ছাড়াই হট সিটে বসে অনায়েসে দায়িত্ব পালন করেছেন। যদিও ক্রিকেটারদের অভিযোগ, ‘‘কেবল সিটটাই দখল করে রেখেছিলেন তিনি। কোনো দায়িত্বই পালন করেননি।’’
শুধু মিঠুন নয়, বাকি সব ক্রিকেটারদের একই অভিযোগ। তাদের এক দাবি, নির্বাচন। সোমবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের বর্তমান ক্রিকেটাররা, সাবেক ক্রিকেটাররা, পুলের ক্রিকেটাররা এবং বিভিন্ন লিগে খেলা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগের খেলোয়াড় এক হয়েছিলেন কোয়াবের নতুন অফিসে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মিরপুরেই তাদের স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছে। নতুন অফিসে চূড়ান্ত হয়েছে নির্বাচনের দিনক্ষণ।
আরো পড়ুন:
‘আমাদের হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে, আমরা বিধ্বস্ত’
ক্রিকেটকে এখনো উপভোগ করছেন সাকিব
আগামী ৪ সেপ্টেম্বর ক্রিকেটারদের সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোয়াবের আহবায়ক সেলিম শাহেদ। এছাড়া কোয়াবের কাঠামোতে আসতে যাচ্ছে বড় পরিবর্তন। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন নির্বাচনে থাকছে না সাধারণ সম্পাদক (সেক্রেটারি) পদ। নতুন করে গঠিত হতে যাওয়া কমিটিতে থাকবে একজন সভাপতি, একজন সিনিয়র সহ-সভাপতি, একজন সহ-সভাপতি এবং আটজন কার্যনির্বাহী সদস্য।
সেলিম শাহেদ গনমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘আমাদের আজকে একটা মিটিং ছিল কোয়াবের, যেই মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের ইলেকশন কবে হবে এবং ইলেকশনের প্রসেসটা কী হবে। আমরা সেপ্টেম্বর মাসের ৪ তারিখে ইলেকশনের ডেট ফাইনাল করেছি এবং ৪ তারিখের মধ্যে আমাদের বাকি যে সমস্ত ইলেকশন রিলেটেড কাজ সেগুলো কমপ্লিট করার চেষ্টা করবো। অর্থাৎ মেম্বারশিপ, প্লাস নমিনেশন ফর্ম কেনা, নমিনেশন ফর্ম জমা দেওয়া, এই সমস্ত জিনিসপত্র আমরা কমপ্লিট করার চেষ্টা করবো এবং ৪ তারিখে, অর্থাৎ ৪ঠা সেপ্টেম্বর, আমরা ইলেকশনের জন্য প্রসিড করবো।’’
তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনও গঠন করা হয়েছে। ইলেকশন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে রাখা হয়েছে ইফতেখার রহমান মিঠুকে। তার সাথে দুই সদস্য হিসেবে আছেন নাসির আহমেদ নাসু ও হাবিবুল বাশার সুমন।
কোয়াবের সদস্য হওয়ার জন্য নতুন ক্রাইটেরিয়াও ঠিক করা হয়েছে। আজীবন সদস্যপদ আগে ছিল না। নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড়রা ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এই পদ নিতে পারবেন। আর জাতীয় দলের বাইরের খেলোয়াড়দের গুনতে হবে ১ লাখ টাকা। ভোটাধিকার তারা পাবেন। লাগবে না কোনো বাৎসরিক ফি।
স্থায়ী সদস্যপদের ক্ষেত্রে, ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় দল, প্রথম শ্রেণি, লিস্ট ‘এ’ অথবা ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলেছেন এমন ক্রিকেটাররা ৫ হাজার টাকা দিয়ে এই পদ নিতে পারবেন। এই ক্যাটাগরির সদস্যদের বাৎসরিক ফি দেওয়া লাগবে।
এর বাইরে রয়েছে সহযোগী সদস্যপদ। এই ক্যাটাগরির জন্য ২ হাজার টাকা ফি ও বাৎসরিক ফি ১ হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই সদস্যরা ভোটের অধিকার পাবেন না।
ঢাকা/ইয়াসিন/বকুল