ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন চলাকালীন ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সামনে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন)  ভিকটিম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও খুলনা জেলা শাখার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বাদী হয়ে অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ ২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো.

মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

আরো পড়ুন:

খুমেক হাসপাতালে কিট সংকটে বন্ধ করোনা পরীক্ষা 

খুলনায় আরো এক নারীর করোনা শনাক্ত

আসামিরা হলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ জুয়েল, এস এম কামাল হোসেন, বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, সালাম মুর্শিদী, শেখ হেলাল, যুবলীগ নেতা ও শেখ হাসিনার চাচাত ভাই শেখ সোহেল, সাবেক সংসদ সদস্য  শেখ হেলাল, নারায়ণচন্দ্র চন্দ, আক্তারুজ্জামান বাবু, রাশীদুজ্জামান মোড়ল,  খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, খুলনা মহানগর যুবলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ, খুলনা মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহাজালাল সুজন, কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল হক, আরসি ফুডের ইকবাল বাহার চৌধুরী, উপপুলিশ কমিশনার সোনালী সেন, এডিসি গোপীনাথ কানজিলাল, ডিবির নুরুজ্জামান, লবণচরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির, এসআই হাসান, এসআই সুমন মন্ডল, সোনাডাঙ্গা থানার সাবেক ওসি মমতাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইফ, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের এডিডি ( সাবেক সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর সাবেক পিএস ) জহিরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর ও মুজগুন্নী আবাসিক এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে জগলুল কাদের।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরু থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে খুলনায় আন্দোলন সংগঠিত করেন মামলার বাদী সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি। আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য ৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি ওইদিন সহযোদ্ধা মেসবাহ উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে রওনা হন। খুলনার সোনাডাঙ্গা থানা এলাকা থেকে পূর্বঘোষিত সড়ক ও রেল অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিতে নতুন রাস্তার মোড়ের উদ্দেশে ইজিবাইকে করে যাত্রা করলে সোনাডাঙ্গা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সামনে পৌঁছামাত্রই অজ্ঞাত মুখোশধারী আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশবাহিনীর সমন্বয়ে ১০-২৫ জন তাদের ইজিবাইকের গতিরোধ করে। টেনে হেচড়ে তাকে ইজিবাইক থেকে নামিয়ে নেয়। তার সঙ্গে থাকা মেসবাহ উদ্দিন ও ইজিবাইক চালক ইদ্রিসসহ কয়েকজন  সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসলে আসামিরা দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার হাত-পা, চোখ, মুখ বেঁধে ফেলে। তিনি  চিৎকার করলে মুখের মধ্যে কাপড় দিয়ে রাখে। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তার চোখ ও হাত বেঁধে রাখা হয়। তাকে প্রাইভেটকারে উঠিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অন্ধকার ঘরে আটকে রাখে। আন্দোলন বন্ধ করতে চাপ দেয় কিন্তু তিনি রাজি না হলে নির্যাতন করে। হাত-পা বাধা অবস্থায় পানি থেকে চাইলে গালাগালি করে। পরে তাকে আবার গাড়িতে করে আড়ংঘাটা বাইপাস মোড়ের সামনে বাগানের মধ্যে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রেখে যায়। সেখান থেকে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে।

অভিযোগকারী সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার শাসনামলে জুলাই অভ্যুত্থান দমনের জন্য যারা আমাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছে তাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে৷ ভবিষ্যতে ন্যায্য দাবিতে রাজপথে নামলে আর কাউকে যেন আমার মতো গুম হতে না হয়, আমি এর নিশ্চয়তা চাই।’’  জড়িতদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তিনি। 

ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু অর্থায়নের ৮৯১ প্রকল্পে ২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি

জলবায়ু অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের (বিসিসিটি) বরাদ্দের ৫৪ শতাংশে দুর্নীতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টিআইবি জানায়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ৮৯১টি প্রকল্পে সংঘটিত দুর্নীতির প্রাক্কলিত পরিমাণ ২৪৮.৪ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ২ হাজার ১১০.৬ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসব তথ্য জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

এনসিটিবির কার্যকর স্বায়ত্তশাসন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে: টিআইবি

খাগড়াছড়িতে হতাহতের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় টিআইবি

গবেষণায় বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিসিসিটি থেকে মোট ৪৫৮.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়। এর মধ্যে ৫৪ শতাংশ বরাদ্দ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ট্রাস্টি বোর্ড ও কারিগরি কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প অনুমোদনের প্রবণতা দেখা গেছে। অথচ তহবিল ব্যবস্থাপক হিসেবে বিসিসিটির কর্মকর্তারা দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রয়োজন ১২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তহবিল মিলিয়ে বছরে গড়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৮৬.২ মিলিয়ন ডলার—যা প্রয়োজনের মাত্র ০.৭ শতাংশ।
জাতীয় তহবিল থেকে বরাদ্দ বছরে গড়ে ৮.২ শতাংশ হারে কমেছে, যদিও আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে বরাদ্দ ৪৩.৮ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবুও বরাদ্দকৃত অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সীমিত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জাতীয় তহবিলের প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও ব্যর্থতার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ৮৯১টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৪৯টির (৬১.৬ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে প্রকল্পের মেয়াদ ৬৪৮ দিন থেকে বেড়ে ১,৫১৫ দিনে পৌঁছেছে; অর্থাৎ ১৩৩.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৪ বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লেগেছে ১৪ বছর।

একইভাবে আন্তর্জাতিক তহবিলের প্রকল্পেও বিলম্বের চিত্র পাওয়া গেছে। ৫১টি প্রকল্পের মধ্যে ২১টির (৪১.২ শতাংশ) মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গড়ে মেয়াদ ১,৯৫৮ দিন থেকে বেড়ে ২,৯৭৮ দিনে দাঁড়িয়েছে; ৫২.১ শতাংশ বৃদ্ধি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বাংলাদেশের প্রতি বছর জলবায়ু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০-১২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। কিন্তু ২০০৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা অত্যন্ত নগণ্য।”

তিনি আরো বলেন, “দুর্নীতির কারণে জাতীয় তহবিলের ৫৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অর্থের সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও তা দুর্নীতির কারণে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও প্রভাবশালীরা এ অর্থ লুটপাট করেছে। জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব, বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর অদক্ষতা ও অনিয়মের কারণেই এ দুর্নীতি ঘটেছে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন চাই।” 
গবেষণা প্রতিবেদনে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন নিশ্চিতের জন্য নয়টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ সংশোধন করে ট্রাস্টি বোর্ডে বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্তি এবং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ; ট্রাস্ট আইনে জবাবদিহি, নিরীক্ষা ও তথ্য উন্মুক্তকরণের বাধ্যবাধকতা যুক্ত করা; রাজস্ব বাজেটের বাইরে আন্তর্জাতিক তহবিল, কার্বন ট্রেডিং ও বেসরকারি উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহে উদ্যোগ নেওয়া; স্বল্পমেয়াদি ক্ষুদ্র প্রকল্প বাদ দিয়ে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া; একটি স্বাধীন তদারকি প্রতিষ্ঠান গঠন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলোর নিয়মিত নিরীক্ষা; এবং অবকাঠামো ও সৌর সড়ক বাতি প্রকল্পের অনিয়মে জড়িতদের স্বাধীন তদন্তের মাধ্যমে বিচার নিশ্চিত করা।

ঢাকা/রায়হান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাকিস্তানের টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত গোপালগঞ্জের রতন
  • বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু ৭ নভেম্বরের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে
  • ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যুর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ
  • কানাডায় পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট, যে ১০ ভুলে বাতিল হয় আবেদন
  • অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৮.১৭%
  • ধ্বংসস্তূপেই ঋত্বিকের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন, পৈতৃক ভিটায় চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের দাবি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৪০৩ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
  • জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে নাগরিক সেবার মানোন্নয়নের তাগিদ ডিএসসিসির প্রশাসকের
  • বহুরূপী শিক্ষাবৈষম্যের বহুমাত্রিক আঘাত
  • জলবায়ু অর্থায়নের ৮৯১ প্রকল্পে ২ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: টিআইবি