কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করবে এনবিআর
Published: 28th, June 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৫৫০ কোটি ডলার ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে সরকার একগুচ্ছ সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কর প্রশাসনে দুর্নীতি নিয়ে একটি জনমত জরিপ চালানো। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, সারে ভর্তুকি এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রণোদনা ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা জানানো হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিকল্পনা রয়েছে, প্রতি অর্থবছর শেষে ছয় মাসের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিসহ অসদাচরণ ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থার পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে।
গত সোমবার দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের পর সংস্থাটি ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে পরবর্তী কিস্তি পেতে শর্ত ও বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতির উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তী কিস্তির জন্য আইএমএফ মোট ৩৩টি শর্ত দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো– আগামী অর্থবছরে সরকারকে অতিরিক্ত ৩০ হাজার কোটি টাকা কর রাজস্ব আহরণ করতে হবে।
এদিকে চলতি মাসের শুরুতে দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার কাছে একটি চিঠি দেয়। এখানে বিনিময় হার নীতি, ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কার, রাজস্ব আহরণ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে; যা আইএমএফের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড.
চিঠির সঙ্গে সংযুক্ত অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতির স্মারকে (এমইএফপি) সরকারের বিভিন্ন অঙ্গীকার রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কর প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও সুশাসনের জন্য কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মধ্যে কর প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াতে প্রতি দুই থেকে তিন বছরে একবার জরিপ চালানো হবে। কর্মকর্তাদের নৈতিকতা প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হবে এবং তারা প্রতিবছর আনুগত্যের ঘোষণা দেবেন।
এনবিআরের পরিকল্পনা রয়েছে, প্রতি অর্থবছরের শেষে ছয় মাসের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতিসহ অসদাচরণ, শৃঙ্খলাভঙ্গের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থার পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে। এনবিআর আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্মকর্তাদের জন্য একটি আচরণবিধি ও নৈতিকতা সনদ প্রকাশ করবে। এনবিআরকে দুই ভাগ করে রাজস্ব আহরণ ও নীতি গ্রহণে আলাদা বিভাগ করার বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে। শিগগির এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ কার্যকর এবং একটি বিস্তারিত কর্মকৌশল প্রকাশ করা হবে।
এতে আরও বলা হয়, ইতোমধ্যে ভ্যাট ও আমদানি শুল্কে করছাড় কমিয়ে আনা শুরু হয়েছে। তাছাড়া আদর্শ ভ্যাটহার ১৫ শতাংশ বাস্তবায়নের আওতা বাড়িয়েছে। বেশ কিছু পণ্যে শুল্কায়নের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে কর আহরণ অটোমেশন এবং প্রশাসনের উন্নয়নসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে বাড়তি ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসবে বলে সরকার মনে করছে।
ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা
সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ভর্তুকি কমিয়ে অগ্রাধিকার ব্যয়ে সুরক্ষা দেবে এবং আগামী দুই বছরের মধ্যে তা টেকসই পর্যায়ে আনার জন্য একটি বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। একটি কাঠামোগত বেঞ্চমার্ক অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি তিন বছরের রোডম্যাপ গৃহীত হবে, যার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান ধাপে ধাপে কমানো হবে।
রপ্তানি ভর্তুকির ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তৈরি পোশাক, চামড়া ও পাট খাতে প্রণোদনা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে তা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে। একই সঙ্গে ২০২৭ সালের জানুয়ারির মধ্যে রেমিট্যান্স প্রণোদনা প্রত্যাহার করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনব আর কর মকর ত ব যবস থ র জন য ভর ত ক বছর র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্লাস্টার খোলার পর গুরুত্ব ফিজিওথেরাপির
সাধারণত হাড় ভাঙা বা ফ্র্যাকচারের পর হাড়কে নির্দিষ্ট জায়গায় স্থির রাখতে প্লাস্টার ব্যবহৃত হয়। প্লাস্টার থাকার সময় সন্ধি অনড় থাকায় পেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে চলাচলের সীমাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কখনো কখনো প্লাস্টার খোলার পরবর্তী জটিলতায় ভুগতে থাকেন অনেক রোগী। কারণ, দীর্ঘ দিন জয়েন্টের মুভমেন্ট না করার ফলে বিভিন্ন জয়েন্ট শক্ত হয়ে যায়, মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং নাড়াতে কষ্ট হয়। পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে প্লাস্টার–পরবর্তী সময়ে রোগী একজন ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে থেকে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করলে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরা সম্ভব।
কী ধরনের ব্যায়াম কার্যকর
প্লাস্টার খোলার পর খুবই মৃদুভাবে ফিজিওথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে ধাপে ধাপে কিছু ব্যায়াম করতে হয়। এটি তিনটি পর্যায়ে হতে পারে।
পর্যায় ১: প্রথম কয়েক দিন—মৃদু রেঞ্জ অব মোশন: যেখানে খুব ধীরে ও মৃদুভাবে, কোনো জোর না দিয়ে সচলতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। যেমন কবজি ও আঙুলের ক্ষেত্রে হাত মুঠো করা ও খোলা, হাত পাশাপাশি মুভমেন্ট করা, বাঁকানোর অভ্যাস। তারপর কনুই ভাঁজ করা ও খোলা। গোড়ালির ক্ষেত্রে পায়ের আঙুলগুলো ওপর দিকে বাঁকা করা ও নামানো, গোড়ালি রোটেশন করা। এসব খুবই আস্তে করতে হবে যেন আঘাত না লাগে, ব্যথা না বাড়ে। দিনে কয়েকবার করা যেতে পারে।
পর্যায় ২: স্ট্রেংথ অ্যান্ড মোবিলিটি এক্সারসাইজ: এটি ধীরে ধীরে সন্ধি ও পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। যেমন একটি স্ট্রেস বল বা পুটি ব্যবহার করে হাতের শক্তি বাড়ানো। আঙুলের রেজিস্ট্যান্স বাড়াতে রাবার ব্যান্ড এক্সারসাইজ। হালকা ওজন তোলা বা বহন করার চেষ্টা। মৃদু পরিশ্রমের কাজ শুরু করা, যেমন কি–বোর্ড টেপা, বাসনকোসন ধোয়া ইত্যাদি।
পর্যায় ৩: স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে আসা: হাড়ের শক্তি ও নমনীয়তা বাড়াতে এবং সন্ধির ক্ষমতা বাড়াতে ধীরে ধীরে ওজন বহনকারী ব্যায়াম, দ্রুত হাঁটা, স্ট্রেনদেনিং ইত্যাদি। ধীরে ধীরে ভারী কাজ ও ব্যায়াম, খেলাধুলায় অভ্যস্ত হওয়া।
মনে রাখবেন
হাড় ভাঙার পর স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে তাড়াহুড়া না করে ধীরে ধীরে ধৈর্য ধরে এগোতে হবে, নয়তো আঘাত ও হাড়ে আবার মাইনর ফ্র্যাকচার হতে পারে। ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। ব্যথা হলে অ্যাকটিভিটি বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রথম দিকে স্টিফনেস ও অস্বস্তি অনুভূত হতে পারে, এটা ধীরে ধীরে কেটে যাবে।
মো. সাইদুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, রিঅ্যাকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ অ্যাভিনিউ, তেজগাঁও