অতিরিক্ত অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। কথ্য ভাষায় আমরা অনেক সময় যাকে বলি ‘গ্যাস্ট্রিক’। প্রয়োজন অনুভব করলেই গ্যাসের ওষুধ খেয়ে নেন, এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অথচ আপাতদৃষ্টে সাধারণ এসব ওষুধ নিয়মিত সেবন করলে আপনি পড়তে পারেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

অ্যাসিডিটির সমস্যা মেটাতে জীবনধারায় কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনা খুব একটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারলে আপনি তাতে স্বস্তিই পাবেন। জীবনধারার এমন কিছু দিক সম্পর্কে জানালেন ঢাকার ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা.

সাইফ হোসেন খান

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন

রাত জাগবেন না। তাতে মাঝরাতে খাবার গ্রহণের প্রবল ইচ্ছা হতে পারে, যা সংবরণ করা কঠিন। মাঝরাতে খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ পর ঘুমালে অ্যাসিডিটি হতে পারে। আবার বেশ বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়ে নিয়ে সকালের নাশতা বাদ দেন অনেকে। এ অভ্যাসও বর্জন করুন। মনের চাপে থাকলে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। যোগব্যায়াম ও শ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। অন্যান্য ব্যায়ামও মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। শরীরচর্চা করলে হজমপ্রক্রিয়াও চলে ঠিকঠাক। কিছুটা কায়িক শ্রম না করলে বাড়ে অ্যাসিডিটির ঝুঁকি। শরীরচর্চা করলে ওজনও থাকে নিয়ন্ত্রণে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে।

খাওয়ার পর এসব কাজ নয়

খাওয়ার পরপরই শোবেন না, করবেন না ভারী ব্যায়ামও। শোয়ার অন্তত তিন ঘণ্টা আগে খাওয়াদাওয়ার পর্ব সেরে নিন। ভারী ব্যায়াম করতে হলে খাওয়ার পর অন্তত দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। অবশ্য খাওয়ার পর অন্তত মিনিট দশেক মৃদুগতিতে হাঁটা ভালো অভ্যাস।

আরও পড়ুনমাত্র ১ সপ্তাহ চিয়া সিড খেলে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো লক্ষ করবেন০১ আগস্ট ২০২৪কিছু খাবার এড়িয়ে চলুন

ভাজাপোড়া কিংবা তেল-চর্বিজাতীয় খাবার খেলে অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে। অ্যাসিডিটির প্রবণতা থাকলে টক ফল ও টক স্বাদের অন্যান্য খাবার কম খাবেন। বিশেষ করে খালি পেটে টক খাবার বা টক স্বাদের পানীয় না খাওয়াই ভালো।

অনেকে লেবুপানি দিয়ে সকালটা শুরু করতে চান, কিন্তু খালি পেটে লেবুপানি খেলে বাড়তে পারে অ্যাসিডিটি। ভিনেগার, সস বা কেচাপ খেলেও সমস্যা বাড়তে পারে। দুধ বা দুধজাতীয় খাবারেও কারও কারও সমস্যা হয়।

পেঁয়াজ, রসুন, চা-কফি, চকলেট খেলেও কেউ কেউ এমন সমস্যায় ভুগতে পারেন। কোমল পানীয় হজম সহায়ক হিসেবে জনপ্রিয় হলেও অনেকেরই এই পানীয়ে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ে।

খাবারের আঁশ স্বাস্থ্যকর হলেও কারও কারও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আঁশসমৃদ্ধ খাবার অ্যাসিডিটির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণ আঁশ না গ্রহণ করাই ভালো।

আরও পড়ুনইউটিউবে দিনে মাত্র আধা ঘণ্টা ব্যয় করেই শিখতে পারেন ইংরেজি১৯ ঘণ্টা আগেখাবার ও পানীয়

খাবার ও পানীয় একসঙ্গে গ্রহণ করবেন না। খাওয়ার সময়ই পানি খাওয়ার অভ্যাস থাকে অনেকের। এ অভ্যাসই অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে। খাবার ও যেকোনো তরল গ্রহণের মাঝখানে অবশ্যই অন্তত পনেরো-কুড়ি মিনিটের ব্যবধান রাখুন।

পানি, উদ্ভিজ্জ দুধ এবং পানসে বা মিষ্টি স্বাদের ফলের রস অ্যাসিডিটি কমাতে সাহায্য করে। তবে এসব পানীয়ও খাবেন যেকোনো খাবার খাওয়ার অন্তত পনেরো-কুড়ি মিনিট আগে বা পরে। যেকোনো একবেলায় খাবার খাওয়ার পনেরো-কুড়ি মিনিট পর আদা চা বা ক্যামোমিল চা খাওয়াও ভালো অভ্যাস।

ধীরেসুস্থে, চিবিয়ে খান

দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকবেন না। অনেকেই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের চর্চা করেন। ওজন কমাতে সহায়ক হলেও এ পদ্ধতিতে লম্বা সময় না খেয়ে থাকার ফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে। একবারে খুব বেশি পরিমাণ খাবার খাবেন না।

পেটের কিছু অংশ খালি রেখেই খান। প্রয়োজনে কিছু সময় পর আবার হালকা খাবার খান। খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করবেন না। ধীরেসুস্থে, চিবিয়ে খাবার খান। পানীয়ও খাবেন ধীরে ধীরে।

আরও পড়ুনবিশ্বের দীর্ঘতম বজ্রপাত কত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হয়েছিল, জানেন১৯ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য স ড ট র সমস য গ রহণ করব ন

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ