ফেনীতে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষতর চিহ্ন।

সরজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি কমে যাওয়ায় নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা নিজ নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে ঘরে কাঁদা থাকায় স্বাভাবিকভাবে বসবাস শুরু করতে আরও দু-তিনদিন সময় লাগবে। কর্দমাক্ত ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে দেখা গেছে অনেককে। 

এদিকে ফেনী থেকে ফুলগাজী পর্যন্ত যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে পরশুরাম সড়কে। যেসব এলাকা থেকে পানি সরে গেছে সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা হয়েছে। 

বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হতদরিদ্র, দিনমজুর ও প্রান্তিক কৃষকরা। মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। সড়ক গুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া তথ্যমতে জানা যায়, মুহুরী নদীর পানি পরশুরাম পয়েন্টে বিপৎসীমার তিন মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ছাগলনাইয়া পয়েন্টে হরিপুর এলাকা হয়ে মুহুরি নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঁইয়ার কিছু গ্রাম বেশ কয়েকটি এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

এ দিকে গেল রাতে ফেনী শহরের পেট্রোবাংলা এবং আরামবাগ এলাকায় আবার কিছুটা পানি উঠেছিল। তবে সকালে নেমে গেছে। এ বন্যায় ৩৭ হাজার মানুষ পানিতে নিমজ্জিত ছিল। এখনও সাড়ে চার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। ৫০০০ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরেছে। এখনও ৮৭টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু রয়েছে। উপজেলাগুলোতে ১৬০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের মধ্যে ২২০০ প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার দেওয়া হয়েছে।

ফুলগাজীর মুন্সিরহাট আলী আজম বিদ্যালয় ও কলেজ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে চার দিন পর বের হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন।  তিনি বলেন, সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি।

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার সময় আমাদের ঘর পানিতে তলিয়ে ছিল। ৪ দিন পর পানি নেমে গেছে। তবে ঘরে কিছু পানি রয়ে গেছে। সেই পানি সেচে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বন্যার সময় পানির জন্য কোথাও যেতে না পেরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘরের দমদমার ওপরে ছিলাম। চিড়া-মুড়ি খেয়ে কষ্ট করে কোনোরকম দিন পার করেছি।’

গোসাইপুর গ্রামের বাসিন্দা খোদেজা আক্তার ও পাখি আক্তার বলেন, ‘বন্যার পানি প্রবেশ করে ঘরের সবকিছু নষ্ট করে ফেলেছে। চারদিন শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করেছি। ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছি। রান্না করার মাটির চুলা বন্যার পানিতে ভেঙে যাওয়ায় টিনের চুলায় রান্না করছি।’

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, পানি নেমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।

ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যায় সর্বশেষ ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ফুলগাজীতে ৬৭, পরশুরামে ২৭, ছাগলনাইয়ায় ১৫, ফেনী সদর ও দাগনভূঞায় দুটি গ্রাম।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন য বন য র প ন

এছাড়াও পড়ুন:

মেক্সিকোতে প্রবল বৃষ্টি-বন্যায় নিহত ৬৬, নিখোঁজ ৭৫

উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক ভয়াবহ মৌসুমি ঝড়ে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে অন্তত ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে এখনও জরুরি অবস্থা জারি রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আনাদোলু এজেন্সি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্য মেক্সিকো ও পূর্ব উপকূলরেখা জুড়ে পাঁচটি রাজ্য সপ্তাহান্তের তীব্র বৃষ্টিপাত ও বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় ৭৫ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

উপসাগরীয় উপকূলীয় রাজ্য ভেরাক্রুজ ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্য কর্তৃপক্ষ ৩০ জনের মৃত্যু এবং ১৮ জনের নিখোঁজ থাকার খবর জানিয়েছে।

মধ্য মেক্সিকোর হিডালগো রাজ্যে ২১ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি ৫০ জন নিখোঁজ রয়েছে। এ রাজ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। 

পুয়েবলা রাজ্য কর্তৃপক্ষ ১৪ জনের মৃত্যু ও সাতজন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে, কুয়েরেতারো কর্তৃপক্ষ একজনের হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সান লুইস পোটোসি রাজ্যে কোনো মৃত্যু বা নিখোঁজ ব্যক্তির খবর পাওয়া যায়নি, তবে অবকাঠামো ও ঘরবাড়ির উল্লেখযোগ্য ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

ফেডারেল সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার জন্য সামরিক কর্মী মোতায়েন করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা করা হয়েছে।

সরকারি ও বেসামরিক সংস্থাগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা পৌছেঁ দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, যার মধ্যে ১৯টি বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায়ও রয়েছে যারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

মানবিক সংকটের মধ্যে, অপ্রত্যাশিত মহল থেকে সহায়তা এসেছে। মেক্সিকোর সবচেয়ে সহিংস ও কুখ্যাত মাদক পাচারকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি- জালিস্কো নিউ জেনারেশন কার্টেল (সিজেএনজি)-কে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওগুলোতে গ্যাং সদস্যদেরকে কৌশলগত পোশাক ও অস্ত্র হাতে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে। 

তবে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম বুধবার (১৫ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে ভিডিওগুলোর সত্যতা অস্বীকার করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সামরিক বাহিনীর ত্রাণ বিতরণের ছবি শেয়ার করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেক্সিকোতে প্রবল বৃষ্টি-বন্যায় নিহত ৬৬, নিখোঁজ ৭৫