রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। লাল চাঁদ হত্যাসহ সারা দেশে বিএনপি নেতা–কর্মীদের একের পর এক অপরাধে যুক্ত হওয়ার সমালোচনা করেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা চাঁদাবাজি, খুন–সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানান।

লাল চাঁদ হত্যার ঘটনায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে তাঁর পরিবার। দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন স্বজনেরা। তাঁরা বলেছেন, চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় লাল চাঁদকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় পৃথক অভিযানে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। দুজন রিমান্ডে আছেন। গতকাল শনিবার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এবং পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে শুক্রবার র‌্যাবের পক্ষ থেকে এক বার্তায় ‘চাঁদা না দেওয়াকে’ এ হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল।

পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে ব্যবসায়ী লাল চাঁদকে হত্যার ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীদের নাম আসে।

নৃশংসভাবে হত্যার সময় বিবস্ত্র করা ও শরীরের ওপর উঠে লাফানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে পাঁচজনকে বহিষ্কার করে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।

এ অবস্থার মধ্যে গতকাল আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, নৃশংস এই হত্যার মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে। তিনি বলেন, মিটফোর্ডের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন, ২০০২-এর ধারা ১০-এর অধীন দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামিদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।

লাল চাঁদ হত্যা মামলায় ১৯ আসামির নাম উল্লেখ রয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১৫-২০ জনকে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত দুজনের নাম জানায় পুলিশ। তাঁরা হলেন মাহমুদুল হাসান ওরফে মহিন ও তারেক রহমান ওরফে রবিন। মাহমুদুল এলাকায় যুবদল নেতা হিসেবে পরিচিত। গত বৃহস্পতিবার মাহমুদুলকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত। তিনি এখন কোতোয়ালি থানা হেফাজতে রয়েছেন। আর অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার তারেককে দুদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে গতকাল তাঁকে লাল চাঁদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সারা দেশে চাঁদাবাজি, হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী বিক্ষোভ। গতকাল বেলা একটায় রাজধানীর বাড্ডা ক্যাম্পাসের গেটে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য র দ হত য র ঘটন ঘটন য় গতক ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হ‌য়ে‌ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) হত্যার ঘটনায় জড়িতদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

শ‌নিবার (১২ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিল ব্যারাকে অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশের তিনটি প্রতিষ্ঠান— ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন, রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) ও ট্রাফিক অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কুল (টিডিএস) পরিদর্শন শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, শুধু মিটফোর্ড নয়, সারা দেশে সংঘটিত এ ধরনের ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে, মিটফোর্ডের ঘটনাটি বড়ই দুঃখজনক৷ একটা সভ্য দেশে এমন ঘটনা কখনোই আশা করা যায় না৷ এ ঘটনায় দায়ী পাঁচজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

তিনি বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনার পরপরই সেখান থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে র‍্যাব অস্ত্রসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল রাতেও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ সব মিলিয়ে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ডিবির টিমও কাজ করছে৷

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমরা জাতি হিসেবে খুব অসহিষ্ণু হয়ে গেছি৷ এই অসহিষ্ণুতা আমাদের সবাই মিলে কমিয়ে আনতে হবে৷ এটা আমাদের সবার দায়িত্ব।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সমাজের নীতিনির্ধারক, অভিভাবক, শিক্ষক, চিকিৎসক সবাইকে এ বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। মোদ্দাকথা, এ বিষয়ে আমাদের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়৷ কোনো ঘটনা ঘটলে, সেটা যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানানো হয়৷ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে৷

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন কঠোর হচ্ছে না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর না হলে পাঁচজনকে কিভাবে গ্রেপ্তার করা হলো? 

তিনি বলেন, গতকাল কাঠমান্ডুগামী বিমানের ফ্লাইট ফেরত নিয়ে আসার ঘটনায় যে মহিলা টেলিফোন করেছিল, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তাকে যে পরামর্শ দিয়েছে, তাকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে৷ চাঁদপুরের ঘটনাতেও দোষীদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে৷ 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ অবস্থা মোটেও নির্লিপ্ততা নয়৷ অনেক সময় দু-এক জায়গায় কোনো কারণে একটু হয়ত দেরি হতে পারে৷ তবে, এ সমস্ত ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাথে সাথে অ্যাকশনে যাচ্ছে।

প্রেস ব্রিফিংকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বিপিএম, স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের (এসবি) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. গোলাম রসুল, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা এর আগে ঢাকা জেলা পুলিশ লাইন আয়োজিত বিশেষ কল্যাণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন ও তা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হ‌য়ে‌ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে: আইন উপদেষ্টা
  • ভারতে “ডাইনি চর্চার” অভিযোগে একই পরিবারের পাঁচজনকে পুড়িয়ে হত্যা