‘ভোট দেব না’—এই ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করতে পারেন নারীরা: অধ্যাপক আলী রীয়াজ
Published: 2nd, August 2025 GMT
সংসদে নারীদের জন্য আসন বাড়ানো ও সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে বলা হলেও তারা তা শোনেনি বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এমনকি দলগুলো থেকে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব করা হলেও তারা তাতে রাজি হয়নি। কমিশন দলগুলোর ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না বা দলগুলোকে নির্দেশ দিতে পারে না।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরও সংসদে নারীর আসন সংখ্যা না বাড়ানো ও সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি না মেনে প্রচলিত ব্যবস্থা বহাল রাখা নিয়ে নারী অধিকারকর্মীদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার জবাবে আলী রীয়াজ শনিবার প্রথম আলোকে এ কথাগুলো বলেন।
ঐকমত্য কমিশনে নারী প্রতিনিধি না থাকা ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি কমিশন গঠন করেছিল। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কারবিষয়কসহ ৬টি কমিশন আগেই প্রতিবেদন জমা দেয়। ঐকমত্য কমিশন গঠনের তাগিদ থাকায় ওই ছয় কমিশনের প্রধানদের নিয়ে ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। ঘটনাক্রমে এসব কমিশনের প্রধানদের মধ্যে নারী ও সংখ্যালঘু প্রতিনিধি না থাকায় ঐকমত্য কমিশনে নারী ও সংখ্যালঘু প্রতিনিধি ছিলেন না। এটা ইচ্ছাকৃত নয়।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, যে ছয়টি কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়ে দিয়েছিল, তাদের সুপারিশগুলো ঐকমত্য কমিশনের টার্মস অব রেফারেন্সের (কাজের পরিধি বা টর) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পরে জমা হওয়ায় তাদের সুপারিশ টরে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি।
সংরক্ষিত নারী আসন বাড়ানো ও সেসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি উপেক্ষিত থাকা প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন ১০০ আসন বাড়িয়ে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এটাকে নতুনভাবে নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ করে নির্বাচন পেছানোর অজুহাত বলা শুরু করে। আমরা এমনও বলেছি, সংরক্ষিত আসন বাতিল করে দেন। দল থেকে ৩৩ শতাংশ নারীকে নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন দেন। তাতেও দলগুলো রাজি হয়নি।’
কমিশন নিজেদের ‘এলিট গ্রুপ’ (অভিজাত গোষ্ঠী) হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল জানিয়ে সমালোচনা করেছেন নারী অধিকারকর্মীরা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার যতটুকু মনে পড়ে, এলিট সেটেলমেন্ট (অভিজাত বন্দোবস্ত) বলেছিলাম। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে, সেটা বোঝাতে বলেছিলাম। নিজেদের এলিট দাবি করি না আমরা।’
শেষ পর্যন্ত নারী আসন নিয়ে নারীদের দাবি পূরণ হলো না, এটাই বাস্তব, এই দাবি পূরণে আর কোনো সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এখন নাগরিক সমাজকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। ঐক্যমত্য কমিশনের তৈরি করা জাতীয় সনদে নারী আসন নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত না থাকলেও এই দাবি পূরণে নাগরিক সমাজকে সক্রিয় হতে হবে।
নারীরা ‘ভোট দেবেন না’ বলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘ভোট দেব না’ এই কথাটা নারীদের রাজনৈতিক দলগুলোকে বলতে হবে। তাদের চাপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নারীরা এই ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করতে পারেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র য় জ বল ন আসন ব
এছাড়াও পড়ুন:
সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে কমিশনের সভা বর্জন বাম দলগুলোর
বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি বাতিলের অভিযোগ তুলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভা বর্জন করেছে বাম দলগুলো। দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাসদ, বাংলাদেশ বাসদ, বাসদ মার্ক্সবাদী।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের ২৩তম দিন তথা শেষ দিনের আলোচনার শেষ সময়ে এসে সভা বর্জন করে বাম দলগুলো।
আলোচনায় সংবিধানের মূলনীতি প্রসঙ্গে কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হচ্ছে, সংবিধানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সম্প্রীতির কথা রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির অংশ হিসেবে উল্লেখ থাকবে।’
এ সময় বাম রাজনৈতিক দলগুলো সংবিধানের চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার অভিযোগ করে সভা বর্জন করে। পরে নেতারা গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের চারটি মূলনীতি হলো জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, ‘শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে এমন একটি প্রস্তাব পাস করানোর চেষ্টা থেকেই কমিশনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে যায়। আগে অনেকে বলেছিলেন, সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিয়ে নতুন করে লিখতে হবে, আজ তারই প্রতিচ্ছবি আমরা দেখলাম।’
রুহিন হোসেন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ আমরা যাঁরা আছি, বৈঠক বর্জন করে বেরিয়ে এসেছি। এখন পুরো ঐকমত্য সনদে স্বাক্ষর করব কি না, তা নিজ নিজ দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের সমর্থক ও দেশবাসীর মতামত নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেব, থাকব নাকি সরে যাব।’
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলছি, এই বর্জনের পরও যদি তারা উপলব্ধি না করে এবং জোর করে আগায়, তাহলে ঐকমত্য সনদের সঙ্গে থাকা আর সম্ভব হবে না।’
বাসদ মার্ক্সবাদীর নেতা মাসুদ রানা বলেন, ‘সংবিধানে বিদ্যমান মূলনীতি বহাল রেখে কমিশনের প্রস্তাবিত বিষয়গুলো যুক্ত করার কথা বলেছি। এগুলোর সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধ যুক্ত। এগুলোকে বাদ দেওয়া মানে আমাদের ইতিহাসকে অস্বীকার করা।’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘১৯৭১ সালে যারা পরাজিত হয়েছিল, এরা সে গ্লানি এখনো ভুলতে পারিনি। তারাই মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাচ্ছে।’
বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোশতাক হোসেন বলেন, ‘আমরা আলোচনায় শুরু থেকে বলে আসছি, কমিশন যে প্রস্তাবনা দিয়েছে, সেটিকে যদি “নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি)” দিয়ে মেনে নিই, তাহলে শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নয়, বর্তমান প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। আমরা সেটার অংশীদার হতে প্রস্তুত নই।’