১৩ দিন বয়সী নবজাতকসহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে থাকা মা শাহাজাদীর জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত এ আদেশ দেন। একই দিন শাহাজাদীর মা নার্গিস বেগমেরও জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

বেলা তিনটার দিকে হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে বের করে শাহাজাদীকে তাঁর ভাই ও আইনজীবীর জিম্মায় দেওয়া হয়। পাশাপাশি জামিনের আদেশ হাতে পাওয়ার পর নার্গিস বেগমকেও খুলনা জেলা কারাগার থেকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে থাকা মেয়ে শাহাজাদীর কাছে নিয়ে যায় কারা কর্তৃপক্ষ।

শাহাজাদী হাসপাতাল থেকে বের হলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়। শাহাজাদীর আইনজীবী, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মামলার বাদী মো.

মির্জা সুজনও।

চুরি যাওয়া নবজাতকের বাবা মির্জা সুজনকে দেখে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহাজাদী। তিনি বলতে থাকেন, ‘ভাই বিশ্বাস করো, আমি এ রকম না। আমি পরিস্থিতির কাছে অসহায় ছিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দিও।’ মির্জা সুজন তাঁকে ভেঙে না পড়তে সান্ত্বনা দেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় সব স্বাভাবিক হবে বলে বোঝাতে থাকেন। পরে মা, ভাই ও নবজাতক কন্যাকে নিয়ে বাবার বাড়ির পথে রওনা দেন শাহাজাদী।

শাহাজাদীর আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সোমবার নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে আমরা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করার পরিকল্পনা করি। কিন্তু আসামি শাহাজাদী হাসপাতালে থাকায় ওকালতনামা প্রস্তুত ছিল না। এদিকে আদালতের সময় পেরিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমি খুলনা মেডিকেলে গিয়ে পুলিশের মাধ্যমে তাঁর স্বাক্ষর এনে দুপুর ১২টার দিকে আদালতে হাজির হই। মহানগর দায়রা জজ মো. শরীফ হোসেন হায়দার বিশেষ সহানুভূতিতে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শুনানি করেন। শুনানিতে আদালত বলেন, নিম্ন আদালতের উচিত ছিল “ডকট্রিন অব নেসেসিটি” বা প্রয়োজনীয়তার নীতি বিবেচনা করে জামিন দেওয়া। এরপর আদালত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন এবং আগামী ২০ অক্টোবর পরবর্তী দিন ধার্য করেন।’

নবজাতক চুরির অভিযোগে হওয়া একটি মামলায় রোববার শাহাজাদীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে নবজাতক কন্যাসহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠানো হয়। সোমবার খুলনার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করেন।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৫ সেপ্টেম্বর শাহাজাদী যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখান থেকে আরেক প্রসূতির চার দিন বয়সী ছেলে নবজাতক চুরি হয়। শাহাজাদীর মা নার্গিস বেগমের কাছ থেকে নবজাতক উদ্ধার করা হয় এবং তখনই তিনি আটক হন। নার্গিস বেগম পুলিশকে জানিয়েছিলেন, মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে তিনি এ কাজ করেছিলেন।

আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান বলেন, শাহাজাদী পঞ্চমবারের মতো কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। পরিবার ও স্বামীর পক্ষ থেকে ছেলেসন্তানের জন্য চাপ ছিল। কন্যা হলে তাঁকে বিবাহবিচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সন্তান জন্মের পর স্বামী শাহাজাদীকে আর ঘরে নিতে চাননি, এমনকি হাসপাতাল থেকেও ছাড়াবেন না বলে হুমকি দেন। শাহাজাদীর মা একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং কড়া মাত্রার ওষুধ সেবন করেন। তিনি হাসপাতাল থেকে ছেলে নবজাতককে চুরি করে গ্রামের বাড়িতে যান। পরে বাড়ির লোকজন বুঝতে পেরে শিশুটিকে আবার হাসপাতালে ফিরিয়ে আনেন।

চুরি হওয়া শিশুর বাবা মির্জা সুজন মানব পাচার আইনে মামলা করেন। তবে তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। শাহাজাদী আজ আমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। আমার আর কোনো অভিযোগ নেই। আমি মামলা চালাতে চাই না। বিষয়টা মিটে যাক—এটাই এখন চাওয়া।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইনজ ব

এছাড়াও পড়ুন:

নায়িকা তিশার বিরুদ্ধে মামলা

প্রতারণার অভিযোগে অভিনেত্রী তানজিন তিশার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।  

বুধবার (৫ নভেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ১৮ নম্বর কোর্টে ৪২০/৪০৬ ধারায় তানজিন তিশার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন এ্যাপোনিয়ার ফ্যাশনের এক্সিকিউটিভ মো. আমিনুল ইসলাম। সি. আর মামলা নম্বর ৯৬২/২০২৫। 

আরো পড়ুন:

বিরতির কারণ জানালেন তানজিন তিশা

গিফট নিয়ে হয়ে গেলাম প্রতারক: তানজিন তিশা

মামলায় দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৬ ধারায় অপরাধ আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ চাওয়া হলে, ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালত তিশার বিরুদ্ধে মামলাটি আমলে নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাকে (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। 

এ সম্পর্কে বাদী পক্ষের আইনজীবী বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সলিমুল্লাহ সরকার গণমাধ্যমে বলেন, “তানজিন তিশার মতো তারকা একজন নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে যে ধরনের প্রতারণা করেছেন তা কাম্য নয়। উনি চাইলেই বিষয়টি সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে মানহানিকর স্ট্যাটাস দিয়ে সামাজিকভাবে হেয় করেছেন। একজন নারী উদ্যোক্তাকে যেখানে উনার পেট্রোনাইজ করার কথা, সেখানে প্রতারণা করলেন। এ জন্য তাকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আইনি নোটিশের কোনো জবাব দেননি। তাই আমার মক্কেল তিশার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেছেন।” 

‘এ্যাপোনিয়া’ নামে একটি অনলাইন ফ্যাশন পেজ থেকে ২৮ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের একটি শাড়ি নিয়েছিলেন তিশা। কথা ছিল শাড়িটির টাকা না দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রমোশন করবেন নিজের ফেসবুক পেজে। কিন্তু তিশা তা করেননি, টাকাও দেননি। একপর্যায়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্যই প্রতারণার অভিযোগ আনেন ফ্যাশন পেজটির কর্ণধার।  

ওই নারী উদ্যোক্তার সঙ্গে তিশার ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও ভয়েস মেসেজে কথোপকথন পর্যালোচনা করে প্রতারণার সত্যতা পাওয়া গেছে। যা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে সম্প্রতি তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন তিশা। বিষয়টি নিয়ে তিশা তার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে দাবি করেছিলেন, “ওই শাড়িটি নাকি উপহার দিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা।”  

এরপর প্রতারণা, মানহানিকর কথা ও ছলচাতুরীর অভিযোগে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে তানজিন তিশাকে (তানজিন নাহার তিশা) আইনি নোটিশ দিয়েছিলেন ‘এ্যাপোনিয়া’ অনলাইন ফ্যাশন পেজের কর্ণধার ঝিনুকের হয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সলিমুল্লাহ সরকার। গত ২২ অক্টোবর তানজিন তিশার বাসার ঠিকানায় ডাকযোগে এবং তিশার হোয়াটসঅ্যাপে আইনি নোটিশটি পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছিলেন এ্যাপোনিয়া কর্তৃপক্ষ।  

আইনি নোটিশে এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ওই নারী উদ্যোক্তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচার করার জন্য ক্ষমা চাইতে বলা হয় তিশাকে। কিন্তু আইনি নোটিশে বেধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও বিষয়টি নিয়ে কোনো সমাধানে যাননি তিশা। উল্টো বলেছেন, “গিফট নিয়ে হয়ে গেলাম প্রতারক।” 

ফ্যাশন পেজের কর্ণধার ঝিনুক গণমাধ্যমে বলেন, “যে কোনো পেশাতেই একটা ইথিক্স থাকে। সেই অনুযায়ী কাজ না করলে পেশার সম্মান থাকে না। শিল্পীরা তো পানির মতো সহজ সরল হওয়ার কথা। তারা মানুষের জন্যই কাজ করেন। তাদেরকে মানুষ ফলো করেন। কিন্তু শিল্পী যদি এভাবে প্রতারণা করেন, মানুষের বিশ্বাস ভঙ্গ করেন সেটা আসলে দুঃখজনক। যেহেতু বিষয়টি মামলায় গড়িয়েছে। আমি আইনের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। আমার বিশ্বাস ন্যায় বিচার পাব।” 

তিশা তার ক্যারিয়ারে দারুণ সময় পার করছেন। শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে বড় পর্দায় পা রাখতে যাচ্ছেন। ‘সোলজার’ শিরোনামের সিনেমাটি পরিচালনা করছেন সাকিব ফাহাদ।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবাদিকের ওপর চড়াও আইনজীবী, ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা
  • যুক্তরাষ্ট্রে ৬ বছরের ছাত্রের গুলিতে আহত শিক্ষককে কোটি ডলার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
  • আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, মেজবাহউদ্দীন ফরহাদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান
  • পদে থেকেও নির্বাচন করা যায়: অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমের হাইকোর্টে জামিন
  • সজলকে ধরে রাখে রনি, পরে একটি গুলির শব্দ পাই
  • নায়িকা তিশার বিরুদ্ধে মামলা
  • ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী: কে কেন কীভাবে
  • ভালো কাজের বিনিময়ে কারামুক্তি, কেমন আছেন তাঁরা
  • সংবিধানের ৫৩ বছর: বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলের আহ্বান