নোয়াখালীর সুবর্ণচরে প্রকাশ্যে রাস্তায় এক যুবককে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার চর জুবলী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর জুবলী গ্রামের পলোয়ান বাড়ির সামনে পরিষ্কার বাজার সড়কে এই ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম সুব্রত চন্দ দাস (৪০)। তিনি উপজেলার চর আমান উল্লাহ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চিরু রঞ্জন দাসের ছেলে।

আরো পড়ুন:

জিসান হত্যা: আদালতে জবানবন্দি দিলেন ৩ আসামি

শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সুব্রত বেকার ছিলেন। তার স্ত্রী রিক্তা রানী দাস উপজেলার চর হাসান ভূঞারহাটে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে চাকরি করেন। দুপুরে স্ত্রীকে কর্মস্থল থেকে আনার জন্য সুব্রত বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল রওয়ানা দেন। পথে দুর্বৃত্তরা সুব্রতের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাকে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করে লাশ রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়।

চরজব্বর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন মিয়া বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নিহতের গলা কাটা ও মাথায় কোপের দাগ রয়েছে। পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে চেষ্টা চালাচ্ছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/সুজন/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা কেন ফ্লোটিলার আশায় সাগরের দিকে চেয়ে থাকে

২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ল, ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হয়েছে’। অনেকে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। সংবাদে বলা হলো, এটি সেই বহু প্রতীক্ষিত ‘শান্তি পরিকল্পনা’, যার মাধ্যমে গাজায় অবশেষে শান্তি আসছে। জানানো হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে চুক্তির আনুষ্ঠানিকতা তদারক করতে কায়রো যাচ্ছেন। তারপর তিনি ইসরায়েল যাবেন। সেখানে ইসরায়েলের পার্লামেন্ট—নেসেটের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।

সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেল একটি বাক্য, ‘গাজায় বোমা হামলা বন্ধ হয়েছে।’

কিন্তু বাস্তবে? হ্যাঁ, আকাশ থেকে এখন বোমা ঝরছে না ঠিকই, কিন্তু আমাদের কষ্ট থেমে নেই। গাজাবাসীর জীবনযাত্রা একটুও বদলায়নি। আমাদের মাথার ওপর এখনো সেই একই অবরোধ। ইসরায়েল এখনো আমাদের ভূমি, আকাশ ও সমুদ্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। কে গাজা থেকে বের হবে, কে ঢুকবে—সবই তাদের অনুমতির ওপর নির্ভরশীল। অসুস্থ বা আহত মানুষ চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে পারে না, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী বা যুদ্ধাপরাধ তদন্তকারীরা ভেতরে ঢুকতে পারেন না। খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি—সবকিছু ইসরায়েলি চেকপয়েন্টে আটকে থাকে।

আরও পড়ুনসুমুদ ফ্লোটিলা নিয়ে গাজাবাসীর ভাবনা ও বাংলাদেশে যে তর্ক–বিতর্ক০৪ অক্টোবর ২০২৫

এই অবরোধের বয়স এখন প্রায় ১৮ বছর। আমার বয়স এখন ২১। অর্থাৎ আমি যখন তিন বছরের শিশু, তখন থেকেই এই অবরোধের মধ্যে বেঁচে আছি। আমি কখনো জানিনি, অবরোধহীন জীবনের মানে কী। তাহলে বলুন, এই ‘শান্তি পরিকল্পনা’ যদি আমাদের এখনো বন্দী রাখে, তাহলে সেটাকে কীভাবে শান্তি বলা যায়? গণমাধ্যমের চটকদার শান্তি-খবরে চাপা পড়ে গেছে আরও ভয়ংকর একটি ঘটনা।

মানবিক সহায়তা ও ত্রাণ নিয়ে গাজার দিকে আসতে থাকা আরেকটি নৌযানের ওপর ইসরায়েল সম্প্রতি আন্তর্জাতিক জলসীমায় হামলা চালিয়েছে। জাহাজটিতে ১৪৫ জন মানবাধিকারকর্মী ও ত্রাণকর্মী ছিলেন। তাঁদের সবাইকে ধরে নিয়ে যায় ইসরায়েলি সেনারা। আন্তর্জাতিক আইনে এটি সরাসরি ‘সমুদ্র-অপরাধ’। এরপরও আমরা পুরো বিশ্বকে নীরব থাকতে দেখলাম। জাহাজটিতে হামলা করার মাত্র কয়েক দিন আগে ইসরায়েল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নামে আরেকটি নৌবহরে হামলা চালিয়ে ৪৫০ জনকে আটক করেছিল। এসব ফ্লোটিলা ছিল গাজার মানুষের জন্য ত্রাণ, ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—আশার বাহক।

সুমুদ ফ্লোটিলা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নৌযাত্রা। কিন্তু এর মাহাত্ম্য নৌকার সংখ্যা বা ত্রাণের পরিমাণ দিয়ে বিচার করা যাবে না। এর মাহাত্ম্য হলো এই বার্তায়, ‘গাজাকে আর উপেক্ষা করা যাবে না।’ ইসরায়েল শেষ পর্যন্ত ফ্লোটিলাগুলোকে থামিয়ে দিয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের নির্যাতন করেছে। অনেককে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। কিন্তু তারা থামাতে পারেনি সেই বার্তা, যা এই নৌযাত্রাগুলোর নিয়ে আসা মানবতার বার্তা, মুক্তির বার্তা, শান্তির বার্তা।

অনেকেই এই ফ্লোটিলাকে ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। তাঁরা বলেন, ‘এগুলো তো কখনো গাজায় পৌঁছাতে পারবে না, সবই ইসরায়েল আটকে দেবে। ফলে এর কোনো মানে নেই।’ একসময় আমি নিজেও এমনটা ভাবতাম। আমার মতো গাজার অনেক তরুণই হতাশ। প্রতিদিনকার মৃত্যু, ক্ষুধা, বিদ্যুৎহীন রাত, বোমার আতঙ্ক আমাদের বিশ্বাসটাকেই মেরে ফেলেছিল।

কিন্তু জিওভান্না ভিয়াল নামের এক ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিকের কারণে আমার সেই বিশ্বাস বদলে যায়। তিনি আমার একটি সাক্ষাৎকার নেন। আমার গল্প নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করেন। তারপর যখন তিনি নিজে সুমুদ ফ্লোটিলাতে যোগ দেন, তখন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘ফর সারা, উই সেইল’ (সারার জন্য আমরা পাড়ি জমালাম)।

এই একটি বাক্য যেন আমার ভেতরে জমে থাকা সব অন্ধকার ছিঁড়ে আলো এনে দিল। আমার নতুন করে মনে হলো, এখনো এমন মানুষ আছে, যারা অপরিচিত মানুষের জন্য জীবন দেয়।

তার পর থেকে আমি প্রতিদিন চোখ রাখতাম ফ্লোটিলার খবরের দিকে। প্রতিটি আপডেট পড়তাম। বন্ধু, আত্মীয়, সহপাঠীদের বলতাম, দেখো, পৃথিবীতে এখনো এমন মানুষ আছে, যারা কখনো আমাদের দেখেনি, কিন্তু আমাদের জন্য সাগর পাড়ি দিচ্ছে!

ভাবতাম, কীভাবে সম্ভব! এমন এক পৃথিবীতে যেখানে স্বার্থ ছাড়া কেউ নড়ে না, সেখানে কিছু মানুষ নিজের জীবন, পরিবার, নিরাপত্তা—সবকিছু পেছনে ফেলে যাচ্ছে শুধুই অন্যায়ের প্রতিবাদে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে!

জিওভান্না একদিন আমাকে লিখলেন, ‘আমার শেষনিশ্বাস পর্যন্ত তোমাদের একা হতে দেব না।’ তাঁর কথাগুলো আজও আমার মনে বাজে। এক ভয়াবহ রাতের মধ্যে তাঁর বার্তাটি ছিল এক টুকরা আশার আলো।

এর দুই বছর পর প্রথমবারের মতো মনে হলো, বিশ্ব আমাদের দেখছে।

সুমুদ ফ্লোটিলা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নৌযাত্রা। কিন্তু এর মাহাত্ম্য নৌকার সংখ্যা বা ত্রাণের পরিমাণ দিয়ে বিচার করা যাবে না। এর মাহাত্ম্য হলো এই বার্তায়, ‘গাজাকে আর উপেক্ষা করা যাবে না।’ ইসরায়েল শেষ পর্যন্ত ফ্লোটিলাগুলোকে থামিয়ে দিয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের নির্যাতন করেছে। অনেককে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। কিন্তু তারা থামাতে পারেনি সেই বার্তা, যা এই নৌযাত্রাগুলোর নিয়ে আসা মানবতার বার্তা, মুক্তির বার্তা, শান্তির বার্তা।

নৌযানগুলো হয়তো আটক হয়েছে। কিন্তু তাদের সংহতি পৌঁছে গেছে আমাদের কাছে। সরকারগুলো আমাদের ব্যর্থ করেছে, কিন্তু মানুষ ব্যর্থ হয়নি। আমরা এখনো তাকিয়ে আছি সাগরের দিকে, যেদিক থেকে একদিন সেই নৌযানগুলো আসবে। যেদিন তারা আমাদের তীরে পৌঁছাবে, সেদিন গাজার মানুষ প্রথমবারের মতো নিশ্বাস নেবে মুক্ত আকাশের নিচে।

আমি জানি, সেই দিন আসবেই। আর সেদিনই আমরা সত্যিকারের মুক্ত হব।

সারা আওয়াদ গাজায় বসবাসরত ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী, লেখক ও গল্পকার

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ