শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তাকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে আটকে রাখেন কয়েকজন তরুণ। তাঁকে হেনস্তাও করা হয় আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষা বোর্ডের ওই কর্মকর্তাকে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরে ঘটেছে এ ঘটনা। ওই কর্মকর্তার নাম ওসমান গণি। তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সহকারী সচিব পদে রয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তিনি পাঁচলাইশ থানা হেফাজতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,  ওসমান গণি মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য। এ ছাড়া তাঁর নামে বোর্ডে আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার দিকে ষোলোশহর রেলস্টেশন এলাকায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দেওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ওসমানের কথা-কাটাকাটি হয়। সেখানে ওসমানকে আটকে রাখেন ওই শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপস্থিত হয়ে ওসমানকে থানায় নিয়ে যায়।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলায়মান প্রথম আলোকে বলেন, সমন্বয়ক পরিচয়ে কয়েকজন ওসমান গণির সঙ্গে ষোলোশহর এলাকায় বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন। পুলিশ তাঁকে থানা হেফাজতে নিয়ে এসেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা ও বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সমন্বয়কারী (চট্টগ্রাম নগর) আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওসমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য। শিক্ষার্থীরা তাঁকে দেখে প্রতিবাদ জানায়। ওসমানও কয়েকজন লোক নিয়ে রেলস্টেশনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা করেন। পরে পুলিশ তাঁকে নিয়ে গেছে।’

আরও পড়ুন জাল সনদ, চেক জালিয়াতি ও টাকা নেওয়ায় তিনবার বরখাস্ত কর্মকর্তার শাস্তি প্রত্যাহার ৩১ আগস্ট ২০২৫

বোর্ড সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে ওসমান গণিকে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে অফিস সহকারী নিয়োগ দেয় বোর্ড। ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ দেওয়া, চেক জালিয়াতি ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে তিনবার শাস্তি ভোগ করেছেন তিনি। তবে গত এপ্রিলে তাঁর সব শাস্তির আদেশ প্রত্যাহার করেছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে শাস্তির কারণে কেটে নেওয়া বেতনভাতার ১৫ লাখ টাকাও তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

কর্মকর্তারা জানান, শাস্তি প্রত্যাহার হয়েছে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশে। সেখানে বোর্ড সচিবের সই থাকার কথা। তবে তিনি সই করতে আপত্তি করলে পরে উপসচিব ও সহকারী সচিবকে সই করতে বলা হয়। কিন্তু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা থাকতে তাঁরা সই করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এরপর চেয়ারম্যানের নির্দেশে সই করেন বোর্ডের সহকারী কর্মকর্তা বিমল কান্তি চাকমা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত সমন বয়ক সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বজনদের ফেরত দিন, না পারলে জড়িতদের বিচার করুন

ছাত্রদল নেতা সেলিম রেজা পিন্টু গুম হওয়ার পর এক যুগ পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো তাঁর কোনো খোঁজ নেই। তাঁর বোন রেহানা পারুল বলেন, ভাই কোথায় তা তাঁরা জানতে চান। এ বিষয়ে গুম কমিশন ও ট্রাইব্যুনাল কেন কিছু বলছে না—তার উত্তর চান তিনি।

আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত এক মানববন্ধনে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার দাবিতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলো কথা বলে। ওই মানববন্ধনে পিন্টুর বোন রেহানা পারুল এ কথা বলেন।

গুমের শিকার খালেদ হোসেনের স্ত্রী সৈয়দা শারমিন সুলতানা পরিচয় দিতে গিয়ে দ্বিধায় থাকেন। তাঁর পরিচয় দাঁড়িয়েছে গুম খালেদের স্ত্রী হিসেবে। তিনি বলেন, ‘এক যুগ ধরে ছবি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে গেলাম। গুম কমিশন হলো। কিন্তু তারা আমাদের কোনো খবর দেয় না।’

সৈয়দা শারমিন সুলতানা আরও বলেন, তিনি চান না তাঁর সন্তান এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বাবার খোঁজ চাইবে। এই বিচার প্রহসনের। এসব ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের আলাদা করে রাখা হচ্ছে। বৈষম্য থেকেই গেল।

আদিবা ইসলামের ছোট ভাই তার বাবা পারভেজ হোসেনের মুখ দেখেনি। সে জানে না বাবা কেমন, বাবার আদর কেমন। আদিবা বলে, এভাবে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তারা ক্লান্ত। তারা বাবাকে ফেরত চায়। ফেরত দিতে না পারলে বিচার চায়, কিন্তু তা–ও হচ্ছে না।

শাহরিয়ার কবির রাতুলের বাবা ও দাদাকে একসঙ্গে গুম করা হয়। তিনি বলেন, বাবার নাম লিখতে গেলে জানেন না কী লিখবেন। বাবা মৃত না জীবিত, তা–ও জানেন না। কী লিখতে হবে, দেশ কি তাঁকে এই উত্তর দেবে?

শাহরিয়ার কবির বলেন, গুম কমিশন এখন পর্যন্ত অন্ধকারে রেখেছে। যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের নিয়ে তারা ব্যস্ত।

গুমের শিকার কাজী ফরহাদের স্বজন আমানুল হক আমান বলেন, স্বাধীন হওয়ার পরও তাঁদের রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। তাঁরা সংখ্যা জানতে চান না। গুম কমিশন শুধু আয়নাঘর আর যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের কথা বলছে। কিন্তু যাঁরা ফিরে আসেনি, তাঁদের কথা বলে না।

‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত এই মানববন্ধনে গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিচার দাবিতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–সংলগ্ন হাইকোর্ট ভবনের প্রধান গেটের সামনে

সম্পর্কিত নিবন্ধ