জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের ঘটনায় ১৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার
Published: 13th, October 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নম্বর ছাত্র হলে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের অভিযোগে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (৫৩তম ব্যাচ) ১৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন ২১ নম্বর হলের তানভীর রহমান (মুন), আবদুল্লাহ আল ফাহাদ ও আবদুল্লাহ আল সাঈদ। শহীদ রফিক–জব্বার হলের আবু তালহা রনি, রাজীব শেখ ও তাসনিমুল হাসান জুবায়ের। মওলানা ভাসানী হলের এস এম মাহামুদুন্নবী, মো.
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নম্বর হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট ১৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, রোববার রাতে বিভাগটির দ্বিতীয় বর্ষের ওই শিক্ষার্থীরা নবীন শিক্ষার্থীদের প্রথমে রফিক–জব্বার চত্বরে ডেকে নিয়ে যান। পরে তাঁদের ২১ নম্বর হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয়। কক্ষে প্রবেশের পর নবীনদের শার্টের হাতা গুটিয়ে দুই সারিতে দাঁড় করিয়ে মুঠোফোন বন্ধ রাখতে বলা হয়।
দরজা–জানালা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট তাঁদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এ সময় হলের নিয়মকানুন ও শৃঙ্খলা মেনে চলার বিষয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়। খবর পেয়ে হল সংসদের নেতা, নিরাপত্তাকর্মী ও সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা র্যাগিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, নবীনবরণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতেই জুনিয়রদের ডাকা হয়েছিল। গরমের কারণে আলো নেভানো ছিল এবং পাশের কক্ষে পরীক্ষার্থী থাকায় যেন শব্দ না হয়, তাই দরজা–জানালা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
২১ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা হল সংসদের প্রতিনিধি, কিছু শিক্ষার্থী ও হলের কয়েকজন স্টাফসহ তাদের হাতেনাতে ধরেছি। এটা অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থী একটি কাজ।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, র্যাগিংয়ের ঘটনায় ১৬ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামানকে সভাপতি করে গঠিত এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী প্রক্টর মো. আল–আমিন খান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি) লুৎফর রহমান আরিফ। কমিটিকে আগামী ২১ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১৬ শ ক ষ র থ ক র হল র
এছাড়াও পড়ুন:
জাবির আবাসিক হলে আটকে রেখে নবীনদের র্যাগিংয়ের অভিযোগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) একটি আবাসিক ছাত্র হলের কক্ষে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ৫৪ ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের আটকে রেখে র্যাগিং করার অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (১২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নম্বর ছাত্র হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিক, হলের নিরপত্তা প্রহরী ও হল সংসদের নেতারা গিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেন।
আরো পড়ুন:
জাবিতে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সেনা সদস্যদের বিচার দাবি
জাবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বন্ধুর ফোন চুরি করে ইয়াবা সেবনের অভিযোগ
ঘটনার সঙ্গে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের ১৫ জন শিক্ষার্থী এর সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
জানা যায়, রবিবার রাত ১০টার দিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম ও ২১ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বোরহান উদ্দিনকে অবহিত করে একটি দল হলের ওই হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে যায়। এ সময় ২১ নম্বর হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি উল্লাহ আল-মাহদী, আ ফ ম কামালউদ্দিন হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবরার শাহরিয়ার এবং দুইজন হলের নিরাপত্তা প্রহরীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানের শুরুতে কক্ষটির বাইরে ৫৩তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে পাহারারত অবস্থায় দেখা যায়। ভেতরে থাকা অন্যদের মুঠোফোনে খবর দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে বাঁধা দেওয়া হয়।
পরে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, ঘরটি সম্পূর্ণ অন্ধকার এবং দরজা-জানালা বন্ধ। সেখানে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৫৪তম ব্যাচের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীকে ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের সবার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে একপাশে বন্ধ করে রাখা ছিল। প্রাথমিকভাবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ভয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
কক্ষে উপস্থিত ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জানায়, একটি অনুষ্ঠানের আলোচনার জন্য জুনিয়রদের ডাকা হয়েছে। গরমের কারণে আলো নেভানো ছিল এবং পাশের কক্ষে পরীক্ষার্থী থাকায় শব্দ এড়াতে দরজা-জানালা বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে তারা দাবি করেন।
র্যাগিং এর সাথে যুক্ত ৫৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন— সাইদ, তানভীর রহমান মুন, আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, আবু তালহা রনি, রাজিব শেখ, ইয়ামিন খান হৃদয়, আবু সাইদ, জান্নাতুল আদন, আহমেদ আরেফিন রাতুল, রেজওয়ান ইসলাম রিফাত, তাসনিমুল হাসান জুবায়ের, রুম্মান, রাকিবুল হাসান নিবিড়, জাহিদুল ইসলাম এবং উশান্তা ত্রিপুরা।
অভিযুক্ত তানভীর জামান মুন বলেন, “পরীক্ষার কারণে আমরা নবীন বরণ অনুষ্ঠান করতে পারিনি। তাই আলোচনার জন্য তাদের ডেকেছিলাম।”
তবে হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি উল্লাহ আল-মাহদী বলেন, “আমরা এসে দেখি দরজা-জানালা বন্ধ করে জুনিয়রদের দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তারা ভীতসন্ত্রস্ত ছিল এবং তাদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি এবং এর বিচার নিশ্চিত করব। র্যাগিংয়ের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম রাশেদুল আলম বলেন, “আমি গতকাল ঘটনা জানার পর হলটির প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের একটি তদন্ত রিপোর্ট দেবেন। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেব। র্যাগিংয়ের বিষয়ে কোনো শিথিলতা নয়।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী