দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে এক বছরে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার ২৪ যুবক ও তরুণ ইতালিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। এখন তাঁদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

এসব ঘটনায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে করা মামলায় এক আসামি গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান চেয়ে শনিবার দুপুরে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে অনশনে বসেন স্বজনেরা।

ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সূর্যমণি এলাকার সাইফুলের বাবা ফারুক পেদার করা মামলায় রাশেদ খান নামে দালাল চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার তাঁকে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতের জ্যেষ্ঠ ম্যাজিস্ট্রেট মরিয়ম আক্তার নিপা তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানা ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারীয়া ইউনিয়নের চরযাদবপুর গ্রামের রাশেদ খান বিভিন্ন দেশে জনশক্তি পাঠানোর কাজ করেন। লামিসা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে তাঁর। রাশেদ খান তাঁর আরও কয়েক সহযোগীর মাধ্যমে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশে পাঠান। ২০২২ ও ২০২৩ সালে শরীয়তপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মধ্যপাড়া, দক্ষিণ ভাষানচর, নতুন হাট, চর নেয়ামতপুর, চর ভাষানচর, চাপাতলী, চরচাটাং মাদারীপুর সদরের জাগীর, জাফরাবাদ, ত্রিভাগাদি, কালকিনির সূর্যমণি এলাকার ২৪ যুবক ও তরুণকে অবৈধ পথে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানোর জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, তারপর মিসর হয়ে লিবিয়া পাঠানো হয়। এর পর থেকে তাঁরা নিখোঁজ আছেন।

ওই ২৪ তরুণ-যুবকের পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে ১২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দালাল চক্রটি। এর মধ্যে কয়েকজন লিবিয়ায় দুই দফায় পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে যান। কয়েকজনকে জিম্মি করে নির্যাতন করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে তাঁদের জিম্মিদশা ও কারাগার থেকে ছাড়ানো হয়। গত বছরের ২১ ও ২২ মার্চ থেকে ওই ২৪ জন পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করছেন না বলে দাবি করেছেন স্বজনেরা। এখন তাঁরা কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, তা–ও জানেন না পরিবারের লোকজন।

রাশেদ খান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের আদালত ও সদরের পালং মডেল থানায় ১১টি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের স্বজনেরা। এসব মামলা করার পর পুলিশ রাশেদ খান ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য তৎপর হয়। শুক্রবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রাশেদের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা শরীয়তপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে অনশনে বসেন। তিন বছর বয়সী শিশুসন্তানকে নিয়ে অনশনে বসেন ফাতেমা আক্তার। তাঁর স্বামী শাহীন সিকদার (২৬) ইতালি যাওযার পথে নিখোঁজ হয়েছেন। ফাতেমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আমার স্বামী ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাশেদ খানের সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন। কিছুদিন পরে তিনি (স্বামী) ফোন করে জানান, সমুদ্রপথে লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে তাঁদের ইতালি পাঠানো হবে। গত বছরের ২২ মার্চ রাতে শেষ আমাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। এরপর আর তাঁর কোনো সন্ধান পাচ্ছি না। দালাল রাশেদ বিভিন্ন সময় আমদের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে। একদিকে স্বামীর খোঁজ পাচ্ছি না, অন্যদিকে ঋণের চাপে এলাকায় থাকতে পারছি না। এখন আমার বেঁচে থাকাই কষ্টকর। তাই অনশনে বসেছি।’

অনশনে যোগ দিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে মাটিতে গড়াগড়ি করে কান্না করছিলেন রিয়াজ আকন। তাঁর ছোট ভাই দিদার হোসেন ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছেন। রিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্বল্প আয়ের নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ। পরিবারের অভাব দূর করার জন্য জমি ও গরুর খামার বিক্রি করে ছোট ভাইকে ইতালি পাঠানোর জন্য দালালকে ২০ লাখ টাকা দিই। কিন্তু দালাল রাশেদ আমার ভাইকে লিবিয়া নিয়ে অবৈধ পথে সমুদ্র দিয়ে ইতালি পাঠানোর চেষ্ট করেন। কিন্তু এক বছর ধরে ভাইয়ের সন্ধান পাচ্ছি না। সে বেঁচে আছে, না তার সঙ্গে অন্য কিছু ঘটেছে, তা কিছুই বলতে পারছি না। রাশেদকে জিজ্ঞেস করলে সে কোনো তথ্য দেয় না। তার বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। আমরা স্বজনদের সন্ধান চাই। আর রাশেদসহ ওই চক্রের প্রত্যেকের শাস্তি চাই।’

আদালত পুলিশের পরিদর্শক শিমুল সরকার প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আর আসামিপক্ষের আইনজীবী তাঁর জামিন চেয়েছেন। আদালত দুটি বিষয়ের শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র প র সদর স বজন র র জন য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী

সম্পূরক বৃত্তি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে অনশন শুরু করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন তাঁরা।

এর আগে গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়। তিন দফা দাবির অন্যটি হলো ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু।

অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল মুরাদ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফেরদৌস শেখ, ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাহীন মিয়া এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু মুন্সী।

অনশনে অংশ নেওয়া গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখ্য সংগঠক ফেরদৌস শেখ বলেন, মন্ত্রণালয়ের সব শিকল ভেঙে এখন জবিয়ানদের অধিকার আটকে আছে জবি প্রশাসনের কাছে। সিদ্ধান্ত একান্ত প্রশাসনের, তারা শিক্ষার্থীদের অধিকার বাস্তবায়ন করবে কি না।

ফেরদৌস শেখ বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) মন্ত্রণালয়ে সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে না পারার কারণেই মূলত আমরা আমাদের অধিকার থেকে আজও বঞ্চিত। তারা বিভিন্নভাবে কাটছাঁট করে শিক্ষাবৃত্তি আনার চেষ্টা করতে চাইছে, যা আমরা কখনোই মেনে নেব না।’

অনশনের অংশ নেওয়া এ কে এম রাকিব বলেন, ‘আমরা অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু তাতে প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। তাই অনশনে যেতে বাধ‍্য হয়েছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এই নখদন্তহীন প্রশাসন হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেবে, নয়তো তাদের নিজেদের রাস্তা মাপতে হবে।’

অনশনের অংশ নেওয়া ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে সম্পূরক বৃত্তি নিয়ে যে নাটক শুরু করা হয়েছে, সেটির দ্রুত সমাপ্তি চাই। জকসু হলো ১৮ হাজার শিক্ষার্থীর অধিকার, কিন্তু প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে সেটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। প্রশাসনকে দ্রুত তফসিল ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মোটরসাইকেল আমার ছেলেটার জীবন নিল’
  • দাবি মেনে নেওয়ায় অনশন ভাঙলেন জবি শিক্ষার্থীরা
  • মাদারীপুরে পুকুরে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
  • টানা ৩০ ঘণ্টা অনশনে তিন জবি শিক্ষার্থী অসুস্থ
  • তিন দাবিতে অনশনে জবি শিক্ষার্থীরা
  • সিলেটে রোগীর মৃত্যুর জেরে হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুর, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
  • ডিসেম্বর মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আশ্বাস জবি উপাচার্যের
  • জকসুর রোডম্যাপসহ ৩ দাবিতে অনশনে জবি শিক্ষার্থীরা
  • সম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী
  • সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ