ইতালিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ ২৪ জন, সন্ধান চেয়ে শরীয়তপুরে স্বজনদের অনশন
Published: 15th, February 2025 GMT
দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে এক বছরে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার ২৪ যুবক ও তরুণ ইতালিতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে লিবিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। এখন তাঁদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
এসব ঘটনায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে করা মামলায় এক আসামি গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান চেয়ে শনিবার দুপুরে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে অনশনে বসেন স্বজনেরা।
ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সূর্যমণি এলাকার সাইফুলের বাবা ফারুক পেদার করা মামলায় রাশেদ খান নামে দালাল চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার তাঁকে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতের জ্যেষ্ঠ ম্যাজিস্ট্রেট মরিয়ম আক্তার নিপা তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানা ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা জানান, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারীয়া ইউনিয়নের চরযাদবপুর গ্রামের রাশেদ খান বিভিন্ন দেশে জনশক্তি পাঠানোর কাজ করেন। লামিসা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে তাঁর। রাশেদ খান তাঁর আরও কয়েক সহযোগীর মাধ্যমে শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন সংগ্রহ করে বিভিন্ন দেশে পাঠান। ২০২২ ও ২০২৩ সালে শরীয়তপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মধ্যপাড়া, দক্ষিণ ভাষানচর, নতুন হাট, চর নেয়ামতপুর, চর ভাষানচর, চাপাতলী, চরচাটাং মাদারীপুর সদরের জাগীর, জাফরাবাদ, ত্রিভাগাদি, কালকিনির সূর্যমণি এলাকার ২৪ যুবক ও তরুণকে অবৈধ পথে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানোর জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, তারপর মিসর হয়ে লিবিয়া পাঠানো হয়। এর পর থেকে তাঁরা নিখোঁজ আছেন।
ওই ২৪ তরুণ-যুবকের পরিবারের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে ১২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দালাল চক্রটি। এর মধ্যে কয়েকজন লিবিয়ায় দুই দফায় পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে যান। কয়েকজনকে জিম্মি করে নির্যাতন করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে তাঁদের জিম্মিদশা ও কারাগার থেকে ছাড়ানো হয়। গত বছরের ২১ ও ২২ মার্চ থেকে ওই ২৪ জন পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করছেন না বলে দাবি করেছেন স্বজনেরা। এখন তাঁরা কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, তা–ও জানেন না পরিবারের লোকজন।
রাশেদ খান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের আদালত ও সদরের পালং মডেল থানায় ১১টি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের স্বজনেরা। এসব মামলা করার পর পুলিশ রাশেদ খান ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য তৎপর হয়। শুক্রবার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করে। শনিবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রাশেদের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনেরা শরীয়তপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে অনশনে বসেন। তিন বছর বয়সী শিশুসন্তানকে নিয়ে অনশনে বসেন ফাতেমা আক্তার। তাঁর স্বামী শাহীন সিকদার (২৬) ইতালি যাওযার পথে নিখোঁজ হয়েছেন। ফাতেমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আমার স্বামী ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাশেদ খানের সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন। কিছুদিন পরে তিনি (স্বামী) ফোন করে জানান, সমুদ্রপথে লিবিয়া থেকে অবৈধভাবে তাঁদের ইতালি পাঠানো হবে। গত বছরের ২২ মার্চ রাতে শেষ আমাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। এরপর আর তাঁর কোনো সন্ধান পাচ্ছি না। দালাল রাশেদ বিভিন্ন সময় আমদের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছে। একদিকে স্বামীর খোঁজ পাচ্ছি না, অন্যদিকে ঋণের চাপে এলাকায় থাকতে পারছি না। এখন আমার বেঁচে থাকাই কষ্টকর। তাই অনশনে বসেছি।’
অনশনে যোগ দিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে মাটিতে গড়াগড়ি করে কান্না করছিলেন রিয়াজ আকন। তাঁর ছোট ভাই দিদার হোসেন ইতালি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়েছেন। রিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্বল্প আয়ের নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ। পরিবারের অভাব দূর করার জন্য জমি ও গরুর খামার বিক্রি করে ছোট ভাইকে ইতালি পাঠানোর জন্য দালালকে ২০ লাখ টাকা দিই। কিন্তু দালাল রাশেদ আমার ভাইকে লিবিয়া নিয়ে অবৈধ পথে সমুদ্র দিয়ে ইতালি পাঠানোর চেষ্ট করেন। কিন্তু এক বছর ধরে ভাইয়ের সন্ধান পাচ্ছি না। সে বেঁচে আছে, না তার সঙ্গে অন্য কিছু ঘটেছে, তা কিছুই বলতে পারছি না। রাশেদকে জিজ্ঞেস করলে সে কোনো তথ্য দেয় না। তার বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি। আমরা স্বজনদের সন্ধান চাই। আর রাশেদসহ ওই চক্রের প্রত্যেকের শাস্তি চাই।’
আদালত পুলিশের পরিদর্শক শিমুল সরকার প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আর আসামিপক্ষের আইনজীবী তাঁর জামিন চেয়েছেন। আদালত দুটি বিষয়ের শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র প র সদর স বজন র র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
৩ দাবিই পূরণ চান অনশনরত জবি শিক্ষার্থীরা
শিক্ষার্থীদের লাগাতার অনশন কর্মসূচির মুখে অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথমবারের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে।
তবে এই ঘোষণায় সন্তুষ্ট নন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তিন দফা দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ছাড়া অনশন ভাঙবেন না বলে জানিয়েছেন তারা।
আরো পড়ুন:
জানুয়ারি থেকে বিশেষ বৃত্তি পাবেন জবি শিক্ষার্থীরা
জকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচন ২৭ নভেম্বর
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে।
রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জকসু নির্বাচন। এর আগে আগামী ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে এবং কমিশন ১১তম দিনে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে।
রোডম্যাপ ঘোষণার পরও অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “আমরা অনশনকারীদের সঙ্গে একমত। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, “আমরা শর্তসাপেক্ষ কোনো ঘোষণা মানব না। আমাদের দাবি ছিল তিনটি—শুধু জকসু নির্বাচন ঘোষণা করে হবে না। তাই অনশন চালিয়ে যাব।”
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য সচিব শাহিন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, “রোডম্যাপে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বিধি কবে পাস হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। আবারও আমাদের মুলা দেখানোর চেষ্টা চলছে। এজন্য আমরা অনশন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- শিক্ষার্থীদের সম্পূরক বৃত্তি কার্যকর হওয়ার নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা; জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ; ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে আধুনিক সুবিধা ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের নিচে তিন দফা দাবিতে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। অনশনে অংশ নেয় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই দশক পর এবারই প্রথমবারের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হলো। কিন্তু ঘোষণায় অস্পষ্টতা ও শর্ত যুক্ত করার অভিযোগে অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী