প্রতারণার অভিযোগে আশরাফুজ্জামান ওরফে মিনহাজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার চিশতিনগর মাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলেছে, ‘মিনহাজ একজন ভয়ংকর প্রতারক।’ তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

মিনহাজ নিজেকে কখনো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কখনো কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক বলে পরিচয় দিতেন। দাবি করতেন, নিজের নামে সুইস ব্যাংকে ৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার গচ্ছিত আছে।

শরীয়তপুরের নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন মোল্লা আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, নড়িয়া থানা-পুলিশের সহায়তা নিয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল প্রতারক মিনহাজকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ দুপুরে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শরীয়তপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। মিনহাজ বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

পুলিশসহ একাধিক সূত্র জানায়, তারেক রহমানের সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ পরিচয় আছে দাবি করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বড় পদ পাওয়ার আশ্বাস দিতেন মিনহাজ। দাবি করতেন, তিনি তারেক রহমানকে দল চালানোর বিষয়ে পরামর্শ দিতেন।

পরে তারেক রহমানের নির্দেশে মিনহাজের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা হয়েছে। আজ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক মো.

ইলতুৎমিশ সওদাগর বাদী হয়ে এ মামলা করেন। শুনানি শেষে আদালত মামলাটি গ্রহণ করে মিনহাজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও নিজের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে দাবি করতেন মিনহাজ। তিনি নতুন নতুন কায়দায় প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করতেন। তিনি কোথাও নিজেকে কানাডার ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক বলে পরিচয় দিতেন। আবার কোথাও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দাবি করতেন।

মিনহাজের বাড়ি নোয়াখালীর মিরওয়ারিশপুরে। কথিত বিসিএস ক্যাডার স্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলার আসামি করে, আবার ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিতেন মিনহাজ। সম্প্রতি মিনহাজ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) অভিযোগ জমা পড়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদিতে আগুন জ্বালালেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদিতে আগুন জ্বালানোর কর্মসূচি পালন করেছেন। ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শনিবার বিকেল সোয়া ছয়টার দিকে ভাস্কর্য দুর্বার বাংলার পাদদেশে ‘ভিসির গদি’ লেখা একটা চেয়ারে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেন তাঁরা। প্রতীকী চেয়ারের পেছন দিকে শিক্ষার্থীরা ‘ইন্টেরিম কী অন্ধ?’ এবং ‘এক দফা, স্টেপ ডাউন মাছুদ, মেক কুয়েট ফ্রি এগেইন’ লেখা ব্যানার ধরে রাখেন।

এর আগে শিক্ষার্থীরা কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। এরপর তাঁরা দুর্বার বাংলার পাদদেশে এসে উপাচার্যবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। একসময় সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শুয়ে পড়েন।

প্রতীকী গদি জ্বালানোর পর প্রেস বিফিংয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা গত শুক্রবার দেখলাম ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির ভাই আমাদের বহিষ্কার ইস্যুতে ভিডিও বার্তা দিলেন। যেই বার্তায় তিনি জানান, ছাত্রদলের সাতজন বহিষ্কার হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, যে তালিকা অফশিয়ালি রিলিজ করা হয় নাই, কোনো শিক্ষার্থী–শিক্ষক পায় নাই, তা কীভাবে নাসির ভাইয়ের কাছে গেল। আমরা তার জবাব চাই। ছাত্রদলের ৭ জন হলে বাকি ৩০ জন কী সাধারণ শিক্ষার্থী? তাঁদের কেন বহিষ্কার করা হলো?’

শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সাইবার বুলিং এবং শিক্ষক লাঞ্ছনা তদন্ত করার জন্য। সেই কমিটিকে বর্জন ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরা হলে আসার পরেও হলের ওয়াইফাই চালু করে দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন হলে এখনো পানি ও খাওয়ার পানির সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, অনেকেই অভিযোগ তুলছেন, তাঁরা মব কালচার করছেন। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তাঁদের উপাচার্য নিরাপত্তা দিতে পারেননি। দেড় শতাধিক ছাত্রের রক্তের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেননি। বরং শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করেছেন। শিক্ষার্থীদের নামে মামলার মদদ যুগিয়েছেন। বহিষ্কারের তালিকা ছাত্রদলের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। উপাচার্যের পদত্যাগ চাওয়া শিক্ষার্থীদের নায্য দাবি বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

চলমান আন্দোলন কোনো দলের না, এটা সব শিক্ষার্থীর আন্দোলন উল্লেখ করে তাঁরা জানান, বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে, এই আন্দোলন শিবিরের। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর ছিল। সুতরাং আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ট্যাগ না দিয়ে দাবির যৌক্তিকতার প্রতি তাকানোর আহ্বান জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ‘আমরা লজ্জিত ইন্টারিমের প্রতি। আমাদের দিকে আপনারা দুই মাসেও তাকালেন না। আপনারা আমাদের জুলাই–আগস্টের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। দুই মাসেও একজন গ্রেপ্তার হয়নি।’

এর আগে শুক্রবার বিকেলে ‘শোকের গ্রাফিতি এক দফার ডাক’ শিরোনামে কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে দেয়ালে দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিতে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করা হয়।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে। গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।

এর মধ্যে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন। গত বুধবার দুপুরে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মিছিলের পরপরই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিপক্ষে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক দফার পক্ষে ক্যাম্পাসে মশালমিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে কর্মচারী সমিতির উদ্যোগে উপাচার্যের সমর্থনে মানববন্ধন করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাল–নালায় পড়ে মৃত্যুর দায় নেয় না, তদন্তও করে না
  • ৬০০ বৃত্তির সুযোগ গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপে, জেনে নিন বিস্তারিত
  • ৩১ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
  • ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন
  • নোয়াখালীতে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি 
  • নাটোরের শিশুর লাশ উদ্ধারের মামলায় পাঁচ কিশোর আটক
  • কৃষি পরিবারের বউ হয়ে এসেছিলেন, হয়েছেন দেশসেরা কৃষক
  • চীনের প্রেসিডেনশিয়াল স্কলারশিপ, প্রথম বছরে ১০ হাজার চায়নিজ ইউয়ান
  • বীথি: পর্ব ১৭
  • কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদিতে আগুন জ্বালালেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা