অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন লেবার নেতা অ্যান্থনি আলবানিজ। আজ শনিবার দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মধ্যবামপন্থি এই নেতা বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। বিরোধী দলীয় নেতা পিটার ডাটন নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করে আলবানিজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। খবর বিবিসি, রয়টার্সের

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট গণনা করা হয়েছে। এতে লেবার পার্টি ৮৬টি আসন, এলএনপি জোট ৪০টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০টি আসন পেয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত বামপন্থি গ্রিন পার্টি কোনো আসন পায়নি। তবে এবারের নির্বাচনে তাদের আগের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিজয়ী বক্তব্যে আলবানিজ বলেন, ‘আশা ও দৃঢ়তা নিয়ে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রেখে আমরা আবারও অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যৎ গড়ার কাজে ফিরে যাচ্ছি। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।’ তিনি হাত তুলে সমর্থকদের অভিবাদন জানান। এরপর মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যান।

অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এবারের নির্বাচনে ভোটার এক কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে রেকর্ড ৮০ লাখ ভোটার আগেই ভোট দিয়েছেন। প্রতিনিধি পরিষদের ১৫০টি আসনের সবকটিতে এবং সিনেটের ৭৬টির মধ্যে ৪০টি আসনে আজ ভোট হয়।

নির্বাচনে বড় দুই দলেরই প্রচারণার কেন্দ্রে ছিল জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া-সংক্রান্ত চাপের বিষয়টি। তবে জনমত জরিপে দেখা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে বিশ্বজুড়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেটি দ্রুত অস্ট্রেলিয়ার ভোটারদের কাছে নির্বাচনী প্রচারণার ইস্যু হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা মিত্র অস্ট্রেলিয়া। তবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যঘাটতি রয়েছে। এরপরও অস্ট্রেলিয়াকে ট্রাম্পের শুল্কনীতি থেকে রেহাই দেওয়া হয়নি। অস্ট্রেলীয় পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

২০২২ সালের নির্বাচনে প্রাথমিক ভোটের ভাগ প্রায় সমান ছিল। লেবার পেয়েছিল ৩২ দশমিক ৬ শতাংশ, লিবারেল-ন্যাশনাল জোট ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং অন্যরা ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আলব ন জ দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

দক্ষিণ সুদানে হাসপাতালে বোমা হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত

দক্ষিণ সুদানের একটি হাসপাতালে বোমা হামলায় অন্তত ৭ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসা দাতব্য সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’ (এমএসএফ)। বিশ্বের সবচেয়ে নবীন রাষ্ট্রটিতে আবারও সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।

এমএসএফ এক বিবৃতিতে দক্ষিণ সুদানের উত্তরাঞ্চলীয় ওল্ড ফ্যাংগাক এলাকায় তাদের হাসপাতালে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে বোমা হামলার’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। হামলায় ওই অঞ্চলের সবশেষ কার্যকর হাসপাতাল ও ওষুধের দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এমএসএফ বোমা হামলা বন্ধের আহ্বান জানায়। পোস্টে সংস্থাটি লিখেছে, ‘বোমা হামলা বন্ধ করুন। বেসামরিক মানুষদের রক্ষা করুন। স্বাস্থ্যসেবা খাতকে রক্ষা করুন।’ এ হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলেও উল্লেখ করেছে এমএসএফ।

হাসপাতাল লক্ষ্য করে কেন হামলা চালানো হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, এ বিষয়ে কথা বলতে দক্ষিণ সুদানের সেনাবাহিনীর কোনো মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

দক্ষিণ সুদানে এমএসএফের প্রধান মামান মুস্তাফা রাজধানী জুবা থেকে আল–জাজিরাকে বলেন, অস্ত্রশস্ত্রসজ্জিত দুটি হেলিকপ্টার থেকে হাসপাতালের ওপর ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তাঁর মাঠপর্যায়ের দল।

মুস্তাফা বলেন, হেলিকপ্টার দুটি হাসপাতাল ও চিকিৎসাসামগ্রী লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপের পর ওল্ড ফ্যাংগাক শহরে টানা গুলিবর্ষণ করেছে।

মুস্তাফা আরও বলেন, ‘বেসামরিক জনগণ ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ ও বিপর্যয়কর…আমরা হতবাক হয়ে গেছি। হাসপাতালটি ২০১৪ সাল থেকে, অর্থাৎ ১০ বছর ধরে সেখানে ছিল।’

গৃহযুদ্ধের নতুন আশঙ্কা

জাতিসংঘ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সতর্ক করে বলেছে, ২০১১ সালে সুদান থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই অস্থিরতায় জর্জরিত দক্ষিণ সুদান। দেশটির আবারও সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে আছে।

প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাশারের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তি ভেঙে পড়ার কারণে গত কয়েক মাসে দেশে নতুন করে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

দক্ষিণ সুদানের প্রধান দুই জাতিগোষ্ঠী ডিংকা ও নুয়ের–এর প্রতিনিধিত্ব করেন কির ও মাশার। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ হয়। এতে প্রায় চার লাখ মানুষ নিহত হন। ২০১৮ সালের শান্তিচুক্তির পর তারা একটি ঐক্যের সরকার গঠন করেছিল।

এবার আবারও কির ও মাশারের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। গত মার্চ মাস থেকে মাশার গৃহবন্দী। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরও পড়ুনদক্ষিণ সুদানে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ২০ জন নিহত৩০ জানুয়ারি ২০২৫

যেখানে এমএসএফের হাসপাতালের ওপর হামলা হয়েছে, সেই ওল্ড ফ্যাংগাক হচ্ছে ফ্যাংগাক কাউন্টির একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এটি জংগলেই রাজ্যের অন্তর্গত, যা মূলত নুয়ের জাতিগোষ্ঠী–অধ্যুষিত এলাকা ও ঐতিহাসিকভাবে মাশারের নেতৃত্বাধীন সুদান পিপলস লিবারেশন মুভমেন্ট-ইন-অপজিশনের (এসপিএলএম-আইও) ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।

নাইরোবি থেকে আল–জাজিরার ক্যাথরিন সোই জানিয়েছেন, তিনি ফ্যাংগাক কাউন্টির কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন, যিনি এ হামলার জন্য সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন। ওই কর্মকর্তা এসপিএলএম-আইও-এর ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে।

ওই কমিশনার আল–জাজিরাকে বলেন, ‘শুধু সেনাবাহিনীই এ ধরনের হামলা চালানোর সামর্থ্য রাখে।’

এদিকে ক্যাথরিন বলেন, ‘আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাঁরা বলেছেন...ওই বিমান ছিল সরকার পরিচালিত।’

আরও পড়ুনসুদানে যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৫৩ লাখ মানুষ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ