চট্টগ্রামে মাইনুলের বাড়ির আঙিনায় ‘মিনি সুন্দরবন’
Published: 3rd, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরীর আসকার দীঘির পাড় থেকে সার্সন রোডের দিকে ১০০ গজ এগোলেই জয়পাহাড় আবাসিক এলাকা। এই এলাকাতেই নিজ বাড়ির আঙিনার আনুমানিক ৫০০ বর্গফুট জায়গাজুড়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে এক বন। গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ মাইনুল আনোয়ার এর নাম দিয়েছেন ‘মিনি সুন্দরবন’।
তাঁর এই বনে বেড়ে উঠছে সুন্দরী, গরান, গর্জন, হারগোজা, কালিলতা, গোলপাতাসহ নানা জাতের গাছ। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের নোনাপানিতে জন্ম নেওয়া এসব গাছ সংরক্ষণে তিনি তৈরি করেছেন বিশেষ মাটি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। সেই পরিবেশে আসে জোয়ার ভাটাও। শনিবার সেই ‘মিনি সুন্দরবন’ দেখতে যান কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। পরিদর্শন শেষে তিনি গবেষক মাইনুল আনোয়ারের এই উদ্যোগ সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
মিনি সুন্দরবনের পাশেই আছে আলওয়ান মধু জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্র। সেখানে দুইশরও বেশি ভেজাল মধুর ধরন শনাক্ত করা আছে। থরেবিথরে সাজানো পটে আছে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত ৭০ রকমের মধু। কোন মধু কখন উৎপাদন করতে হয়, কোনটির গুণগত মান কখন ভালো হয়, মধু কীভাবে সংরক্ষণ করলে ভালো থাকে, ভেজাল করার সময় কোন মধুতে কী রকমের উপকরণ মেশানো হয়– এসবের উত্তর আছে গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ মাইনুল আনোয়ারের জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রে। কৃষি সচিব মধু জাদুঘরটিও ঘুরে দেখেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত সচিব ড.
কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘মাইনুল আনোয়ার ব্যক্তি উদ্যোগে বাড়ির আঙিনায় যে ম্যানগ্রোভ বন ও মধুর জাদুঘর গড়ে তুলেছেন; তা অনেকের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। তাঁর এই উদ্যোগ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে উপকৃত হবে কৃষি ও পরিবেশ।’ অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘দেশে মধুর ভালো চাহিদা রয়েছে। ভেজালের ভিড়ে আসল মধু চেনা কঠিন। এই জাদুঘরে যেভাবে ভেজাল মধু শনাক্ত করা হচ্ছে তা ব্যতিক্রম।’ গবেষক সৈয়দ মোহাম্মদ মাইনুল আনোয়ার বলেন, ‘২০ বছর ধরে সাধনা করে শহরের বুকে এই মিনি সুন্দরবন গড়ে তুলেছি। জায়গার দিক থেকে এই বন ছোট হলেও সুন্দরবনের গাছ ও মধু নিয়ে আমি যে কাজ করেছি তা বাংলাদেশে অদ্বিতীয়। এই প্রচেষ্টা দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন দরবন স ন দরবন হ ম মদ ম ম হ ম মদ জ দ ঘর র চ লক
এছাড়াও পড়ুন:
বাঘ ও তিমির গল্প
গত ১৮ মে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলাম। ইউসুফ এস আহমেদ লিখিত এবং ইশতিয়াক হাসান অনূদিত উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেলস অব বেঙ্গল বইটি অবসরে পড়ার জন্য সঙ্গে নিলাম। ইউসুফ এস আহমেদ একসময় পাকিস্তানের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব ফরেস্ট ছিলেন। ১৯২৬ সালে তিনি বন বিভাগে যোগ দেন এবং ১৯৫৯ সালে অবসরে যান। তাঁর ৩৩ বছরের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ বইটির ৪১ পৃষ্ঠায় লিখিত বক্তব্যটি আমার নজর কাড়ে। ততক্ষণে বিমান সিঙ্গাপুরের মাটি ছুঁয়েছে, যে দেশটি তার শেষ বাঘটি হারিয়েছে ১৯৩০ সালে।
ইউসুফ এস আহমেদ ১৯২৯ সালে সুন্দরবন ডিভিশনের দায়িত্ব পান। বন্য প্রাণীর প্রতি আগ্রহের কারণে শিগগিরই ‘ওয়াইল্ড ম্যান অব ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট’ নামে পরিচিতি পেলেন। তিনি লিখেছেন, ‘ভোলা নদীর ওপারে ধানসাগর গ্রাম সুন্দরবনের এই অংশে পুবের সীমানা হিসেবে কাজ করছে। ১৯২৯/১৯৩০ সালের শীতকাল। বাঘের চামড়া এবং মাথাসহ পুরস্কার দাবি করে একটি চিঠি এল স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প থেকে।’
বাঘটি ধানসাগর গ্রামে ঢুকে পড়লে স্থানীয় শিকারিদের সহায়তায় পুলিশের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টরের গুলিতে মারা পড়ে। ধানসাগর শরণখোলা উপজেলার অধীন বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অন্তর্গত। এটি প্রায় ১০০ বছর আগের ঘটনা।
শত বছর পর ইদানীং বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব একটি পর্যায়ে এসেছে। বাংলাদেশ বন বিভাগের সহযোগিতায় ওয়াইল্ডটিম নামক সংগঠনটি সুন্দরবনের চারপাশে ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম’ গঠন করেছে। সুন্দরবনের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রামে এখন ৩৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক ৪৯টি দলে ভাগ হয়ে প্রায় ১৮ বছর ধরে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো বাঘ গ্রামে ঢুকলেই এই দলের সদস্যরা বন বিভাগের সহযোগিতায় বাঘটিকে বনে ফিরিয়ে দেন।
দেশের কোথাও বন্য প্রাণী, বিশেষ করে বাঘ মারলে একসময় এলাকায় তিনি ‘হিরো’ হয়ে যেতেন। এটি ছিল সামাজিক স্বীকৃতি। কিন্তু ব্রিটিশরা ভাবলেন, সুন্দরবনের যেসব এলাকা থেকে রাজস্ব বেশি আয় হয়, সেখানকার বনকর্মীদের পুরস্কৃত করলে ওই সব এলাকা বাঘশূন্য করা যাবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তী লিখেছেন, ১৬ নভেম্বর ১৮৮৩ সালে সরকার ‘ক্যালকাটা গেজেট’–এর মাধ্যমে ঘোষণা করলেন: একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ মারলে ৫০ রুপি এবং বাচ্চা মারলে ১০ রুপি পাওয়া যাবে। অবশ্য চামড়া ও মাথার খুলি জমা দিতে হবে। ১৯০৬ সালে এটি বাড়িয়ে ১০০ রুপি এবং ১৯০৯ সালে ২০০ রুপি করা হলো। ১৮৮১ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০টি প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ মারা পড়েছে। যদিও এটি সরকারি হিসাব, বেসরকারি হিসাব কখনো জানা যায়নি। বাংলাদেশে একসময় প্রায় সর্বত্রই বাঘ ছিল, কিন্তু সুন্দরবনই আজ আমাদের ১২৫টি বাঘের শেষ আশ্রয়স্থল।
সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লি কং চিয়ান প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরে প্রদর্শিত তিমির কঙ্কাল