সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ও তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভারত ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত কয়েক দশক পুরোনো সিন্ধুর পানিচুক্তি স্থগিত করার ফলে এই উত্তেজনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভারত-শাসিত কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার পর তীব্র বৈরিতার মধ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নয়াদিল্লি এ হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান এ পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, এটিকে উস্কানিমূলক এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে। এই স্থগিতাদেশ দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশীর মধ্যে ইতোমধ্যে টানাপোড়েনের সম্পর্কে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা এই অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন ও ইসরায়েলের মতো ব্যাপক পরিচিত না হলেও পাকিস্তান ও ভারত পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। এই বাস্তবতা বিবেচনা করে যখনই দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, তখন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে আসে। এটি কি পারমাণবিক সংঘাতে পরিণত হতে পারে? উভয় রাষ্ট্র প্রায়ই সরকারি বিবৃতিতে দাবি করে, তারাই ‘প্রথমবারের মতো বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে যাচ্ছে এমন নয়’। তবে এই আশঙ্কা সবসময় থাকে যে, কোনো ভুল সিদ্ধান্ত একটি ধ্বংসাত্মক সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে।
উপনিবেশগুলো থেকে সরে আসার সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রায় সব ক্ষেত্রেই গুপ্ত বোমা রেখে এসেছে। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে স্থায়ী দ্বন্দ্ব অনিবার্য। বিশ্ব মানচিত্রে নজর দিলে এর নমুনা দেখা যায়। এক সময় ব্রিটিশ শাসনাধীন অঞ্চলে সীমানা ইচ্ছাকৃতভাবে টানা হয়েছিল, যাতে বিতর্কিত অঞ্চল তৈরি হয়, যা জাতিরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে চিরস্থায়ী বিরোধে ইন্ধন দেয়।
মুসলিমপ্রধান কাশ্মীর এখনও সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু, যার অর্ধেক ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। কাশ্মীরিরা যে নিপীড়নের মুখোমুখি হচ্ছেন তার সঙ্গে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি নীতির সঙ্গে খুব সাদৃশ্যপূর্ণ।
বিশ্বের কিছু অঞ্চলে মানুষ নিপীড়িত, প্রান্তিক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। যেমন কাশ্মীর ও উইঘুর অঞ্চল। তবুও ফিলিস্তিনের তুলনায় তারা খুব কমই বৈশ্বিক মিডিয়ায় গুরুত্ব পায়। কারণ নিপীড়িতদের আন্তর্জাতিক প্রভাব নেই অথবা অঞ্চলগুলো ভূ-রাজনৈতিকভাবে ততটা মনোযোগের কেন্দ্র নয়।
বর্তমান ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দুই দেশ বারবার যুদ্ধের কিনারায় গেছে। সম্প্রতি কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের ওপর হামলা পুনরায় শত্রুতার আগুনে ঘি ঢেলেছে, যদিও একটি অচিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামলার দাবি করেছে। এই ধরনের নড়বড়ে মুহূর্তে গুপ্ত হামলায় জড়িতদের উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসবাদ, মিথ্যা-পতাকা অভিযান এবং গোয়েন্দা সংস্থার কারসাজি বিশ্বব্যাপী ক্ষমতার খেলায় সুপরিচিত কৌশল। তবে, ইসলামপন্থি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বৃহৎ আকারের সহিংসতা উস্কে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো গোষ্ঠীই আইসিসের মতো ততটা কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি।
এই মুহূর্তে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে আসছে। এই উত্তেজনা বাড়ার পেছনে কি দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত উদ্দেশ্য থাকতে পারে? চীনের উত্থানের ব্যাপারে ক্রমশ সতর্ক হয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার দৃষ্টি ভারতের দিকে সরিয়ে নিয়েছে। ভারত ১.
হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতীক মোদি প্রশাসন মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক নীতি গ্রহণ করেছে, যা ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণের কথা মনে করিয়ে দেয়। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনে মন্ত্রিসভার সদস্য ও উপদেষ্টাসহ প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত কর্মকর্তা থাকায় কেউ কেউ মার্কিন নীতির ওপর ‘ভারতপন্থি ছায়া’ থাকার কথা বলছেন। মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান খোলাখুলিভাবে যুদ্ধের ক্ষেত্রে ভারতের পাশে যুক্তরাষ্ট্র থাকবে বলে জানিয়েছেন। সুতরাং পুরো পরিস্থিতি আরও আশঙ্কার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
ইহসান আকতাস: লেখক; তুরস্কের ডেইলি সাবাহ থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
ডিএমপির প্রসিকিশন বিভাগের দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর প্রসিকিশন বিভাগের দুর্নীতি তদন্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গত ২৯ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে ঘুষের গোপন মিশন’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।
রবিবার আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
আদেশে বলা হয়, গত ২৯ এপ্রিল একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ দৃষ্টে নিম্নস্বাক্ষরকারীর গোচরীভূত হয়েছে যে, জি.আর শাখার নথি আটকে বিচার প্রার্থীদের কাছ থেকে গোপনে টাকা আদায় ছাড়াও হাজতখানায় বন্দিদের সাক্ষাৎ ও খাবারের সুযোগ দেওয়ার বিনিময়ে কতিপয় কর্মকর্তা ঘুষ গ্রহণ করেন। এছাড়া বদলি, পদায়নের ক্ষেত্রেও ঘুষ আদান-প্রদানের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করে তা প্রতিকারের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া আবশ্যক বলে নিম্ন স্বাক্ষরকারী মনে করে।
আদেশে আরও বলা হয়, বর্ণিত অভিযোগসমূহ তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নিম্নলিখিত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো।
কমিটির সদস্যরা হলেন, ঢাকার যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ মো হুমায়ুন কবির, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমান ও সহকারী পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিশন) রাশেদ হোসেন পরাগ।
এই কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
ঢাকা/এম/ইভা