ইসরায়েল নতুন উদ্যমে গাজায় অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে। এটা অনুমোদন করতে আজ রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০) নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। গাজায় অভিযান বাড়ানোর অংশ হিসেবে কয়েক হাজার সংরক্ষিত সেনা তলব করা হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল শনিবার সকালে ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরের এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে ইয়েমেনের হুতিরা।

সংরক্ষিত সেনা তলব (যাঁরা নিয়মিত বাহিনীতে কর্মরত নন) প্রসঙ্গে আজ ইসরায়েলের একাধিক সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, সেনাবাহিনী সংরক্ষিত সেনাদের তলব করতে শুরু করেছে। তারা ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালনকারী কনসক্রিপ্ট (বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদানকারী) ও নিয়মিত সেনাদের স্থলাভিষিক্ত হবে। আর এসব কনসক্রিপ্ট ও নিয়মিত সেনাকে গাজায় মোতায়েন করা হবে।

সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র উল্লিখিত প্রতিবেদনগুলো স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেননি। তবে বার্তা সংস্থা এএফপির ইসরায়েলি সাংবাদিকদের কিছু আত্মীয় বলেছেন, তাঁদেরও তলব করা হয়েছে।

এমন এক সময়ে এই সব ঘটনা ঘটছে, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী কাতারকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। তিনি কাতারকে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ‘উভয় পক্ষের সঙ্গে খেলা বন্ধের’ আহ্বান জানিয়েছেন। কাতার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলার ১৪ মাস পর গত জানুয়ারিতে হামাসের সঙ্গে দেশটি যুদ্ধবিরতিতে যায়। কিন্তু ২ মাস পর গত ১৮ মার্চ তা লঙ্ঘন করে গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চেষ্টা করছে।

কাতারের প্রতি নেতানিয়াহু

নতুন যুদ্ধবিরতি চেষ্টাকে কেন্দ্র করে কাতারকে আক্রমণ করে নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, কাতার ‘দ্বিমুখী বক্তব্য দিয়ে দুই পক্ষকেই খুশি রাখার চেষ্টা করছে’। কাতারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ‘তারা কি সভ্যতার পক্ষে, নাকি হামাসের বর্বরতার পাশে?’ ‘ইসরায়েল এই ন্যায্য যুদ্ধ ন্যায়সংগত উপায়েই জিতবে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক্স পোস্টে নেতানিয়াহুর মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি লেখেন, ‘কাতার উসকানিমূলক বক্তব্যকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে.

.. এ ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিক ও নৈতিক দায়িত্বের ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ’।

গাজায় পূর্ণ মাত্রায় নতুন করে হামলা শুরু আগে ২ মার্চ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে সর্বাত্মক অবরোধ জারি করে ইসরায়েল। ফলে দেশটির ত্রাণসহায়তা আরও সংকুচিত হয়েছে। দেশটিতে বিভিন্ন মাত্রায় দুর্ভিক্ষ চলছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘসহ নানা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা।

গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল দিবাগত রাতে ইসরায়েলের হামলায় গাজার বিভিন্ন স্থানে ৩ শিশুসহ আরও ১১ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। মধ্যমার্চে ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় অন্তত ২ হাজার ৩৯৬ জন মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট প্রাণ হারালেন ৫২ হাজার ৪৯৫ জন। তবে নিহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা।

এদিকে আজ এক জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস। হামাসের সামরিক শাখা ইজ্‌জেদিন আল-কাসেম ব্রিগেডের প্রকাশ করা ওই ভিডিওতে আহত এক ব্যক্তিকে দেখা যায়। তাঁর নাম ম্যাক্সিম হারকিন। চলতি মাসে তিনি ৩৭ বছরে পা দিয়েছেন। তিনি রুশ-ইসরায়েলের দ্বৈত নাগরিক। চার মিনিটের ওই ভিডিওতে হারকিনকে মাথা ও বাঁ হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। তিনি হিব্রু ভাষায় কথা বলেন।

হামাসসহ গাজার অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে এখন পর্যন্ত ৫৮ জন জিম্মি রয়েছেন, যাঁদের ৩৪ জন মৃত বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।

হুতিদের হামলা

ইসরায়েলের বেন গুরিওন বিমানবন্দর এলাকায় আজ একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে ছয়জন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণে মাটিতে একটি বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। হামলার পর সাময়িকভাবে উড়োজাহাজ চলাচল স্থগিত করা হয়েছিল। ইয়েমেনের হুতি দাবি করেছে, তারা একটি ‘হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে’ এই হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল কঠোর জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করতে ‘একাধিক চেষ্টা চালানো হয়েছে’। আহত হওয়ার ঘটনা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে হয়েছে, না ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে গিয়ে হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইসরায়েলের উন্নত প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিয়ে সফল হামলা চালানোর জন্য হুতির প্রশংসা করেছে হামাস। গাজা যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস পর থেকে লোহিত সাগরের বিভিন্ন জাহাজ ও ইসরায়েলকে নিশানা করে হামলা চালাচ্ছে হুতিরা। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এসব হামলা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে ইরানের সহায়তাপুষ্ট গোষ্ঠীটি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য হুতিদের লক্ষ্য করে ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন স্থানে পাল্টা বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র পর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে সরকারের চুক্তি

লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এই চুক্তি করা হয়েছে।

আজ সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই পক্ষ এ চুক্তিতে সই করে। এতে ডেনমার্ক, বাংলাদেশ সরকার ও বন্দর সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা অংশ নেন।

চুক্তিতে সই করেন এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

ডেনমার্কের পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইবিএস এপিএম টার্মিনালসের হেড অব ইনভেস্টমেন্ট ভাস্কর সেনগুপ্ত, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্ডলোসে হ্যানসেন ও বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) ও নৌপরিবহন সচিব নুরুন্নাহার চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনবলেন, ‘এই চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাঁদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি, আজ তা দূর হবে।’ তাঁর আরও আশা, এই ধারাবাহিকতায় মোংলা সমুদ্রবন্দর পরিচালনায়ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।

পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী বলেন, ‘লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে—পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর। ভবিষ্যতেও আমরা বাস্তবায়ন-কেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নেই মনোযোগ দেব।’ তিনি আরও জানান, আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে আছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি নির্ধারিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত পাঁচ দশকে দুই দেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সফলতা দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের সম্পর্ক সহায়তা থেকে ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। মাথাপিছু হিসাবে ডেনমার্ক বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য। বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্য পূরণে লালদিয়া প্রকল্প নতুন মাইলফলক।’

পরিবহন কোম্পানি মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, লালদিয়া হবে অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল; সেখানে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান থাকবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। সেই সঙ্গে লজিস্টিকস খাতের অগ্রযাত্রায় এটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ