হাজারো সংরক্ষিত সেনা তলব ইসরায়েলের, গাজায় অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা
Published: 4th, May 2025 GMT
ইসরায়েল নতুন উদ্যমে গাজায় অভিযান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে। এটা অনুমোদন করতে আজ রোববার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০) নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। গাজায় অভিযান বাড়ানোর অংশ হিসেবে কয়েক হাজার সংরক্ষিত সেনা তলব করা হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল শনিবার সকালে ইসরায়েলের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরের এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে ইয়েমেনের হুতিরা।
সংরক্ষিত সেনা তলব (যাঁরা নিয়মিত বাহিনীতে কর্মরত নন) প্রসঙ্গে আজ ইসরায়েলের একাধিক সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, সেনাবাহিনী সংরক্ষিত সেনাদের তলব করতে শুরু করেছে। তারা ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালনকারী কনসক্রিপ্ট (বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদানকারী) ও নিয়মিত সেনাদের স্থলাভিষিক্ত হবে। আর এসব কনসক্রিপ্ট ও নিয়মিত সেনাকে গাজায় মোতায়েন করা হবে।
সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র উল্লিখিত প্রতিবেদনগুলো স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটিই করেননি। তবে বার্তা সংস্থা এএফপির ইসরায়েলি সাংবাদিকদের কিছু আত্মীয় বলেছেন, তাঁদেরও তলব করা হয়েছে।
এমন এক সময়ে এই সব ঘটনা ঘটছে, যখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী কাতারকে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। তিনি কাতারকে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় ‘উভয় পক্ষের সঙ্গে খেলা বন্ধের’ আহ্বান জানিয়েছেন। কাতার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলার ১৪ মাস পর গত জানুয়ারিতে হামাসের সঙ্গে দেশটি যুদ্ধবিরতিতে যায়। কিন্তু ২ মাস পর গত ১৮ মার্চ তা লঙ্ঘন করে গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চেষ্টা করছে।
কাতারের প্রতি নেতানিয়াহুনতুন যুদ্ধবিরতি চেষ্টাকে কেন্দ্র করে কাতারকে আক্রমণ করে নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, কাতার ‘দ্বিমুখী বক্তব্য দিয়ে দুই পক্ষকেই খুশি রাখার চেষ্টা করছে’। কাতারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ‘তারা কি সভ্যতার পক্ষে, নাকি হামাসের বর্বরতার পাশে?’ ‘ইসরায়েল এই ন্যায্য যুদ্ধ ন্যায়সংগত উপায়েই জিতবে’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক্স পোস্টে নেতানিয়াহুর মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি লেখেন, ‘কাতার উসকানিমূলক বক্তব্যকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে.
গাজায় পূর্ণ মাত্রায় নতুন করে হামলা শুরু আগে ২ মার্চ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে সর্বাত্মক অবরোধ জারি করে ইসরায়েল। ফলে দেশটির ত্রাণসহায়তা আরও সংকুচিত হয়েছে। দেশটিতে বিভিন্ন মাত্রায় দুর্ভিক্ষ চলছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘসহ নানা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা।
গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল দিবাগত রাতে ইসরায়েলের হামলায় গাজার বিভিন্ন স্থানে ৩ শিশুসহ আরও ১১ জন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। মধ্যমার্চে ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় অন্তত ২ হাজার ৩৯৬ জন মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট প্রাণ হারালেন ৫২ হাজার ৪৯৫ জন। তবে নিহত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে মনে করে বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা।
এদিকে আজ এক জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস। হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল-কাসেম ব্রিগেডের প্রকাশ করা ওই ভিডিওতে আহত এক ব্যক্তিকে দেখা যায়। তাঁর নাম ম্যাক্সিম হারকিন। চলতি মাসে তিনি ৩৭ বছরে পা দিয়েছেন। তিনি রুশ-ইসরায়েলের দ্বৈত নাগরিক। চার মিনিটের ওই ভিডিওতে হারকিনকে মাথা ও বাঁ হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। তিনি হিব্রু ভাষায় কথা বলেন।
হামাসসহ গাজার অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে এখন পর্যন্ত ৫৮ জন জিম্মি রয়েছেন, যাঁদের ৩৪ জন মৃত বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
হুতিদের হামলাইসরায়েলের বেন গুরিওন বিমানবন্দর এলাকায় আজ একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে ছয়জন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণে মাটিতে একটি বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। হামলার পর সাময়িকভাবে উড়োজাহাজ চলাচল স্থগিত করা হয়েছিল। ইয়েমেনের হুতি দাবি করেছে, তারা একটি ‘হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে’ এই হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল কঠোর জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করতে ‘একাধিক চেষ্টা চালানো হয়েছে’। আহত হওয়ার ঘটনা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে হয়েছে, না ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে গিয়ে হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের উন্নত প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিয়ে সফল হামলা চালানোর জন্য হুতির প্রশংসা করেছে হামাস। গাজা যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস পর থেকে লোহিত সাগরের বিভিন্ন জাহাজ ও ইসরায়েলকে নিশানা করে হামলা চালাচ্ছে হুতিরা। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এসব হামলা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছে ইরানের সহায়তাপুষ্ট গোষ্ঠীটি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য হুতিদের লক্ষ্য করে ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ বিভিন্ন স্থানে পাল্টা বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়
ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।
পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি এখন সারানো হয়েছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।
ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।
ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে। পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’
ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’
ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে