ব্যবসায় স্বাবলম্বী কুবি শিক্ষার্থী রাফি ও বন্যা
Published: 5th, May 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ভর্তি হওয়ার পর থেকেই মনের ভেতর একটা স্বপ্ন দানা বাঁধতে শুরু করে। তাদের সে স্বপ্নে মানুষের তির্যক দৃষ্টি পড়লেও দমে যাননি তারা।
নিজেদের টিউশনির টাকা জমিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। পড়ালেখার পাশাপাশি এ ব্যবসা করে তারা এখন স্বাবলম্বী। চাকরির পেছনে না ছুটে নিজের উদ্যোগে গড়ে তুলছেন ভবিষ্যতের পথ।
ইসরাত জাহান বন্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। আর আল আরাফাত আমীন রাফি লোকপ্রশাসন বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী।
আরো পড়ুন:
চুরির দায়ে কুবির দুই শিক্ষার্থী সাময়িক বহিষ্কার
কুবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ভুল প্রশ্ন সরবরাহ, আহ্বায়ককে অব্যাহতি
উদ্যোগের ব্যাপারে শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বন্যা বলেন, “আমার উদ্যোগটা একটু ভিন্ন ধরনের। আমি খাবার তৈরি শেখাই। শখের বশে এ পেশায় এসেছি। বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে বিভিন্ন কোর্স করে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রথম দিকে আমি চকলেট বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় শেয়ার করেছি। সেখান থেকে আমার ভালো রিভিউ আসতে থাকে।”
তিনি বলেন, “একটা সময়ে এসে অনেকেই এ বিষয়ে ক্লাস করার আগ্রহ প্রকাশ করে। তখন আমি কোর্স চালু করি এবং একটা পেজ খুলি। সেখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু। আমার কাজ শুধু চকলেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। মিস্টি, কেক, বিরিয়ানি সবকিছুই কোর্সের ভেতর অন্তর্ভুক্ত। আমি সবসময় চাই খাবারের গুণগত মান যেন ঠিক থাকে। ছুটি চলাকালে যখন কোর্স চালু করি, তখন ভালো আয় হয়। আমার পেজের নাম ‘ট্রিটস ফর ইউ’ দিয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, “ইতোমধ্যে আমি আরো একটি দুঃসাহসিক উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। বিভিন্ন ধরনের জামা কাপড় নিয়ে কাজ করছি। আমার এ পেজের নাম হচ্ছে ‘বর্ণালিকা’। আমার পড়ালেখার অধ্যায় মোটামুটি শেষ। তাই বাকি সময়টুকু এখানেই দিতে চাই।”
প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে বন্যা বলেন, “আমার এসব কাজে বাবার সাপোর্ট পেয়েছি। প্রথমদিকে ক্লাস নিতে গিয়ে নেটওয়ার্ক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে মানুষের তির্যক দৃষ্টিরও সম্মুখীন হয়েছি। তবুও থেমে থাকিনি।”
অপরদিকে, নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে শিক্ষার্থী আল আরাফাত আমীন রাফি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দিয়েছেন লাইব্রেরি।
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে বইয়ের কোনো দোকান না থাকায় আমাদের মতো শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা শহর থেকে বই কিনে আনতেন। এতে তাদের অনেক কষ্ট হয়ে যেত। সেই চিন্তা থেকেই লাইব্রেরি দেওয়ার পরিকল্পনা মাথায় আসে। বর্তমানে ক্যাম্পাসের তিনজন শিক্ষার্থী লাইব্রেরিতে কর্মরত আছেন।”
তিনি আরো বলেন, “আমার ব্যবসা থেকে এখন ভালোই আয় হচ্ছে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে বই বিক্রি একটু কম হয়। এখানে একটা কর্মসংস্থান তৈরির ইচ্ছা ছিল। সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।”
রাফি বলেন, “নিজেকে আটকে না রেখে নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগাচ্ছি। আম্মুর সাপোর্ট আর নিজের টিউশনির টাকা দিয়েই আমার এ লাইব্রেরির যাত্রা শুরু করেছিলাম। প্রথমে খুব স্বল্প পরিসরে শুরু করলেও আস্তে আস্তে এটা অনেক বড় হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।”
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রাজুতে ফাঁসির মঞ্চের প্রতিকৃতিটি ‘শেখ হাসিনার’, ‘জাগ্রত জুলাইয়ের’ ছয় দফা ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ফাঁসির মঞ্চের প্রতিকৃতিটি ‘শেখ হাসিনার’ এবং কিছু গণমাধ্যম এ ঘটনাকে ‘নারীর প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে ‘ভুলভাবে’ উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে উল্লেখ করে সমাবেশ করেছে ‘জাগ্রত জুলাই’ নামের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বিচারের দাবি জানায় সংগঠনটি। এর আগে ১ মে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার ফাঁসির মঞ্চের প্রতিকৃতি’ স্থাপনের বিষয়ে সংগঠনটি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে। তারা বলেছে, এটি ছিল একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ কর্মসূচি, যার মাধ্যমে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী অপরাধের বিচার দাবি করা হয়েছে।
তবে ৩ মে কিছু গণমাধ্যম এই প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ‘নারীর প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ হিসেবে প্রচার করলে সংগঠনটি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
এ বিষয়ে সোমবার সমাবেশে ‘জাগ্রত জুলাই’–এর সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আশরাফ আল দীন বলেন, ‘এই প্রতিবাদ ছিল নিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক ভাষ্য। একে বিকৃত করে নারীবিদ্বেষ হিসেবে উপস্থাপন করা সাংবাদিকতার নৈতিক অবক্ষয়ের পরিচায়ক।’
সংগঠনের সহসভাপতি কবি আবিদ আজম বলেন, ‘শহীদদের তালিকা নিরূপণ ও আহতদের চিকিৎসায় ব্যর্থ এই সরকার শেখ হাসিনার বিচারও নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই আমরা প্রতীকী ফাঁসির কুশপুত্তলিকা রাজু ভাস্কর্যের নিচে ঝুলিয়েছিলাম। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ ঘোষিত গণহত্যাকারী, পিশাচ ও ডাইনি— সেই বিবেচনায় প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু একে নারীবিদ্বেষ বলে প্রচার করেছে ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন খবরের কাগজ।’
আবিদ আজম আরও বলেন, ‘জুলাইতে নারীদের ব্যবহার করে আমাদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামীপন্থী আমলারা এখনো সচিবালয়ে সক্রিয় রয়েছে। আমরা সম্প্রতি আমাদের সদস্য হাসনাতের ওপর হামলার নিন্দা জানাই এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের বিচার দাবি করি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলি।’
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (বোরহান) বলেন, ‘জাগ্রত জুলাই কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংগঠন নয়। আমাদের ১ মের কর্মসূচি ছিল একনায়কতন্ত্রবিরোধী, হেফাজতের ৩ মের কর্মসূচির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। কিছু গণমাধ্যম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের কর্মসূচিকে বিকৃত করেছে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা হাফেজ আকরাম হোসেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমাদের জঙ্গি, নারীবিরোধী বলে প্রচার করা হয়েছিল। অথচ শেখ হাসিনার একমাত্র পরিচয় সে একজন খুনি। আজ নারী নেত্রীদের ছবি ছড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী কর্মীরা নারীদের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে।’
সভায় আরও বক্তব্য দেন কবি জুনমুরাইন, কবি রফিক লিটন, সহসাধারণ সম্পাদক হাসনাইন ইকবাল, নাট্যকার হুসনে মোবারক, কবি তাজ ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজ সাইফুল্লাহ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আল নাহিয়ান, কবি রহমান মাজিদ ও সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক কবি লোকমান হোসেন জীবন প্রমুখ।
সমাবেশে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচারের বিরুদ্ধে সংগঠনটি ছয় দফা দাবি ঘোষণা করে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচারকারী গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ; পিলখানা, শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু; ‘জুলাই বিপ্লব’–এর ঘোষণাপত্র প্রকাশ ও বিপ্লবকালীন কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি প্রদান; আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ; ফ্যাসিবাদের সহযোগী গণমাধ্যমকে বিচারের আওতায় আনা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসরদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা।
সংগঠনটি জানায়, তারা তাদের সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে।