ধীরে ধীরে সব আশা নিরাশায় পরিণত হচ্ছে: মাহমুদুর রহমান মান্না
Published: 8th, May 2025 GMT
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষ সবচেয়ে বেশি আশান্বিত হয়েছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সব আশা নিরাশায় পরিণত হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, শ্রমিকের জীবনে বৈষম্য থেকে গেছে। আওয়ামী দোসররা সচিবালয়ে বহাল থেকে গেছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন। ‘মহান মে দিবস ও প্রাসঙ্গিক বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, অনেকে প্রধান উপদেষ্টাকে অনতিবিলম্বে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বলছেন। আবার কেউ বলছেন, পাঁচ বছর পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে। এই বক্তব্যগুলো আবেগের। একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি ছাড়া এসব বক্তব্য বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে।
এখনো টাকা না দিলে পুলিশ অভিযোগ গ্রহণ করে না অভিযোগ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, পুলিশ এখনো আগের মতোই থেকে গেছে। তারা এখনো জনগণের শত্রুর অবস্থান থেকে নিজেদের বের করতে পারেনি।
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিদের সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যাঁদের দিকে তাকিয়ে মানুষ রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল, তাঁদের অবস্থাও একই রকম। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ছিল। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান পরে অনেক জায়গায় ঘুষের পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে। প্রধান উপদেষ্টাও দেশের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তেমন আলোচনা করছেন না। তিনি উদ্যোগ নিলে অনেক সমস্যা সহজেই সমাধান হয়ে যেত।
দলমতের বিতর্ক করার সময় এখন নয় উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই মুহূর্তে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার, যেখানে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে। ভোট ডিসেম্বরে হবে নাকি মার্চে, সেটাও বিতর্কের বিষয় হওয়া উচিত নয়। বরং নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।
আলোচনা সভায় শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, শ্রম সংস্কার কমিশন কাজ শুরুর আগেই কয়েকটি মূলনীতিকে ধারণ করেছে। তার একটি হলো একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলা, যেখানে শ্রমিক তাঁর ন্যায্য পাওনা বুঝে পাবেন।
প্রতিটি ঘরে ও প্রতিটি দপ্তরে বৈষম্য বিরাজ করছে উল্লেখ করে সুলতান উদ্দিন বলেন, সাত কোটি শ্রমিক জানেন না, বার্ধক্যে তাঁরা কীভাবে বেঁচে থাকবেন। তাঁদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। তাঁদের চিকিৎসার নিশ্চয়তা জরুরি। শ্রম সংস্কার কমিশন সেই নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে।
নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর কাদিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাখখারুল ইসলাম, জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী (দীপু), সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)