সিলেট সীমান্তে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে ভারত, টহল বাড়িয়েছে বিজিবি
Published: 10th, May 2025 GMT
সিলেট সীমান্তে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে ভারত। প্রতিদিন রাত আটটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত এ কারফিউ বলবৎ থাকবে। এ অবস্থায় সীমান্তে আগের চেয়ে টহল ও নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন সীমান্ত এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালিয়েছে।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব জয়ন্তিয়া হিলসের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সই করা এক আদেশে সিলেট সীমান্ত এলাকায় ওই কারফিউ জারি করা হয়। আদেশের একটি অনুলিপি সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ আজ শনিবার বেলা দেড়টায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারফিউ জারির একটি অনুলিপি পেয়েছি। এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে কারফিউ জারির খবর পেয়ে আমাদের সীমান্ত এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।’
মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব জয়ন্তিয়া হিলস জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শ্রী শিবাংশ আরস্থির সই করা আদেশে বলা হয়, পূর্ব জয়ন্তিয়া হিলস জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত এখনো সম্পূর্ণভাবে বেষ্টনী দিয়ে ঘেরা নয়। এ কারণে এ অঞ্চলে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা আছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, চোরাকারবারি ও অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশকারীরা রাতের আঁধারে সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারেন। এ পরিস্থিতিতে ৮ মে থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রাত্রিকালীন কারফিউ থাকবে।
আন্তর্জাতিক সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে এই কারফিউ থাকবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। কারফিউ চলাকালে কিছু বিষয় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হলো আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ বা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের উদ্দেশ্যে চলাফেরা; পাঁচ বা এর বেশি ব্যক্তির অবৈধ জমায়েত; অস্ত্র, লাঠি, রড, পাথরসহ অন্যান্য অস্ত্রপোযোগী বস্তু বহন; গবাদিপশু, চোরাচালান পণ্য, সুপারি, পানপাতা, শুকনা মাছ, বিড়ি, সিগারেট, চা–পাতা ইত্যাদি পাচার।
সিলেটের জেলা প্রশাসন, বিজিবিসহ একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী নলজুরি এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ জরিপকাজের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের দখলে থাকা একটি খেলার মাঠ পরিমাপের উদ্যোগ নিয়েছিলেন জরিপ দলের সদস্যরা। খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা এসে বাধা দেন। এতে যৌথ জরিপ দল ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা ফিরে যান। এরপর বিকেলেই কারফিউ জারির ঘটনাটি ঘটে।
সিলেটের জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ভারতের সীমান্তবর্তী পূর্ব জয়ন্তিয়া হিলস জেলাটি বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর (আংশিক) উপজেলার বিপরীতে অবস্থিত।
যোগাযোগ করলে ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লে.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ম ন ত এল ক য় প র ব জয়ন ত য় প রব শ
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাজ্যের এমআই৬-এর কর্মকর্তার রাশিয়ার হয়ে গোয়েন্দাগিরি, ২০ বছরের তদন্তে কী পাওয়া গেল
স্নায়ুযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাপ্রধানদের অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি তদন্ত পরিচালনা করতে হয়েছিল। তাঁদের সন্দেহ ছিল, গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রাশিয়ার জন্য ‘ডাবল এজেন্ট’ (এমন একজন গুপ্তচর, যিনি একসঙ্গে দুটি বিপরীত পক্ষের জন্য কাজ করেন) হিসেবে কাজ করছেন।
এমআই৬-এর সহযোগী সংস্থা এমআই৫ সম্ভাব্য গুপ্তচরকে ধরতে ‘অপারেশন ওয়েডলক’ নামে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছিল। এ অভিযানে নজরদারি, পরিকল্পনা ও ডেস্ক বিভাগের অন্তত ৩৫ কর্মকর্তা অংশ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তৎপরতা চালিয়েছেন।
গার্ডিয়ানের সূত্রে জানা গেছে, নজরদারি দলের সদস্যরা একটি সফরে এক সপ্তাহের বেশি সময় মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। তাঁরা সেখানে সিআইএর নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করছিলেন। অভিযানটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কারণ, কর্মকর্তারা ওই দেশের সরকারকে অবগত না করেই সেখানে গিয়েছিলেন, যেটা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে বিবেচিত হতে পারত।
এই তদন্ত কোনো না কোনোভাবে প্রায় ২০ বছর চলেছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু আদৌ এমআই৬-এ কেউ রাশিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেছিল কি না, তা এমআই৫ প্রমাণ করতে পারেনি। ফলে এখনো আশঙ্কা রয়ে গেছে, কেউ হয়তো রাশিয়ার পক্ষে কাজ করে পালিয়ে যেতে পেরেছেন।
কিম ফিলবির প্রসঙ্গ টেনে গার্ডিয়ানকে একটি সূত্র জানায়, ‘আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের হাতে আরেক ফিলবি ধরা পড়েছে।’ কিম ফিলবি কুখ্যাত ডাবল এজেন্ট ছিলেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে কাজ করা কেমব্রিজ স্পাই রিংয়ের সদস্য ছিলেন।
গোপন গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬ যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রবিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের কাজ বিদেশে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা এবং গোয়েন্দাদের পরিচালনা করা। অন্যদিকে এমআই৫ যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা। তারা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর যেকোনো হুমকি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে।
এমআই৫ ১৯৯০-এর দশকে এ তদন্ত শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তা চালু রাখে বলে জানা যায়। তত দিনে যাঁকে ঘিরে ‘অপারেশন ওয়েডলক’ পরিচালিত হচ্ছিল, তিনি এমআই৬ থেকে বিদায় নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর কাছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য আসে। তাদের ধারণা, লন্ডনে কর্মরত ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা রাশিয়ার কাছে নিয়মিত গোপন তথ্য পাচার করছিলেন।
তদন্ত চলার এক পর্যায়ে রাশিয়ার গোপন গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির নেতৃত্বে ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন।
তদন্তকারীরা ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ওই কর্মকর্তার গতিবিধি অনুসরণ করেন। এ অনুসন্ধান প্রায়ই এমআই৫-এর এখতিয়ারের বাইরে চলে যাচ্ছিল। এজেন্টদের ভুয়া নাম আর সত্যিকারের পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। ধরা পড়লে কেউ সাহায্য করতে পারবে না বলে তাঁদের জানানো হয়েছিল।
এমআই৬–এ ডাবল এজেন্ট ঢুকে পড়ার বিষয়টি এতটাই গুরুত্ব পেয়েছিল যে গোয়েন্দাপ্রধানেরা তদন্ত চালানো ছাড়া অন্য কোনো পথ দেখেননি। ধারণা করা হয়, ওই কর্মকর্তা একা ছিলেন না। লন্ডনে তাঁর আরও দুজন সহযোগী ছিলেন। একটি সূত্র জানায়, ‘অপারেশন ওয়েডলক’ ছিল এমআই৫-এর অন্যতম ব্যতিক্রমী, দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল অভিযান।
এক গোয়েন্দা সংস্থার আরেকটিকে নজরদারি করাটা খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। ফলে সন্দেহ থেকেই যায়, এমআই৬-এ এখনো হয়তো কেউ গুপ্তচর হিসেবে রয়ে গেছেন।