ভারতীয় বাহিনীর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনে পাকিস্তানে ৪ জন বেসামরিক আহত
Published: 11th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশে ভারতীয় বাহিনীর বিনা উস্কানিতে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের দুটি পৃথক ঘটনায় কমপক্ষে চারজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
রবিবার (১১ মে) পাকিস্তানের সরকারি সূত্রের দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্র জানিয়েছে, গতকাল শনিবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই পূর্ব পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোট জেলার কার্যকরী সীমানা বরাবর এই লঙ্ঘন ঘটে।
আরো পড়ুন:
‘গুরুতর গোয়েন্দা তথ্য’ পেয়ে ভারত-পাকিস্তানকে থামিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরেও ভারত-পাকিস্তানে ড্রোন হামলা
শিয়ালকোটের পসরুর এলাকায় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে ১৮ বছর বয়সী এক কিশোরীর পিঠে গুলির আঘাত লাগে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে যখন ভারতীয় বাহিনী স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬:২৩ থেকে ৬:৩০ এর মধ্যে হরপাল সেকশনে বেসামরিক বসতি লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
সূত্রের বরাতে সিনহুয়া আরো জানিয়েছে, “ভারতীয় পক্ষের বিনা উস্কানিতে গুলিবর্ষণে জঙ্গল গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের তিন সদস্যও আহত হয়েছেন।”
সূত্রগুলো জানিয়েছে, কাশ্মীরকে বিভক্তকারী নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর কোটলি, ভিম্বার, চাম্ব এবং কেরান অংশেও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের খবর পাওয়া গেছে।
নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে ভারতীয় দিক থেকে একাধিক আত্মঘাতী ড্রোন পাকিস্তানের শহরগুলোকে লক্ষ্য করে উড়তে দেখা যায়। ড্রোনগুলো সনাক্ত করে আটক করা হয়েছে।
উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা করার পর আজ রবিবার দিনের শুরুতে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা কমেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো এই অঞ্চলে শান্তি প্রচেষ্টার ভঙ্গুরতা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি এখন কোথায়
দেশজুড়ে মানুষ যখন উৎকণ্ঠায়, তখন ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের একজন উপস্থাপক সরাসরি প্রশ্ন তুলে দিলেন। এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে মাঠে-ময়দানে অনেকের মধ্যে।
‘মানুষ সর্বোচ্চ নেতাকে নিয়ে খুব চিন্তিত’, গত মঙ্গলবার উপস্থাপক আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দপ্তরের এক কর্মকর্তাকে এ বলেন। তিনি জানতে চান, ‘তাঁর কী অবস্থা, বলতে পারেন?’
উপস্থাপক ওই কর্মকর্তাকে জানান, দর্শকদের কাছ থেকে এই একই প্রশ্নে ভরে গেছে বার্তাকক্ষ। তবে খামেনির আর্কাইভ দপ্তরের কর্মকর্তা মেহদি ফাজায়েলি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি।
উল্টো ফাজায়েলি বলেন, ‘আমরাও অনেক জায়গা থেকে এমন উদ্বেগের খবর পাচ্ছি। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ বোমা হামলার পর আয়াতুল্লাহর নিরাপত্তা নিয়ে বহুজন উদ্বিগ্ন।’
‘আমাদের সবাইকে তাঁর জন্য দোয়া করতে হবে,’ বলেন ফাজায়েলি।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সর্বোচ্চ নেতাকে রক্ষা করা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরা তাঁদের কাজ ভালোভাবেই করছেন। আল্লাহ চাইলে, আমাদের জনগণ তাঁদের নেতাকে সঙ্গে নিয়েই বিজয় উদ্যাপন করতে পারবেন।’
প্রায় এক সপ্তাহ ধরেই জনসমক্ষে অনুপস্থিত খামেনি। কোনো ভাষণ বা বার্তাও দেননি। অথচ দেশ তখন গভীর সংকটে।
খামেনির এই নীরবতা জন্ম দিচ্ছে নানা প্রশ্ন ও জল্পনার—সাম্প্রতিক বড় সিদ্ধান্তগুলোতে তাঁর ভূমিকা কতটুকু? তাঁর কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে কি? তিনি এখনো দেশ পরিচালনায় সক্রিয়? তিনি অসুস্থ, আহত কিংবা আদৌ বেঁচে আছেন কি?এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, জবাবে (সোমবার) ইরান কাতারে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে (মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি) ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইরান ও ইসরায়েল এক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়, যা কার্যকর হয় মঙ্গলবার সকাল থেকে।
এই পুরো সময়ে খামেনি ছিলেন অনুপস্থিত। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি এক সুরক্ষিত বাংকারে আছেন এবং হত্যাচেষ্টার আশঙ্কায় সব ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলছেন।
সর্বোচ্চ নেতার এমন অনুপস্থিতি শুধু জনসাধারণ নয়, রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে।
‘খানমান’ নামের একটি দৈনিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহসেন খালিফেহ বলেন, ‘খামেনির কয়েক দিনের এ অনুপস্থিতি আমাদের, যাঁরা তাঁকে ভালোবাসি, গভীর উদ্বেগে ফেলেছে।’ দুই সপ্তাহ আগেও যে আশঙ্কা অকল্পনীয় ছিল, তা এখন স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যদি তিনি (খামেনি) মারা যান, তাঁর জানাজার মিছিল হবে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও গৌরবময়।’
সর্বোচ্চ নেতাকে রক্ষা করা যাঁদের দায়িত্ব, তাঁরা তাঁদের কাজ ভালোভাবেই করছেন। আল্লাহ চাইলে, আমাদের জনগণ তাঁদের নেতাকে সঙ্গে নিয়েই বিজয় উদ্যাপন করতে পারবেন।মেহদি ফাজায়েলি, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দপ্তরের কর্মকর্তাইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে প্রতিটি বড় সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন খামেনি। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদক্ষেপ, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলা বা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মতো সিদ্ধান্তে তাঁর অনুমোদন অত্যাবশ্যক।
যাহোক, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহ্বানে এবং কাতারের আমিরের মধ্যস্থতায় দ্রুত সম্পাদিত হয়। তবে ইরানের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও সরকারি কর্মকর্তারা গত কয়েক দিনে তাঁরা খামেনির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কি না বা কোনোভাবে যোগাযোগ হয়েছে কি না, সে বিষয়ে খোলাখুলি কিছু বলেননি।
এ নীরবতা জন্ম দিচ্ছে নানা প্রশ্ন ও জল্পনার—সাম্প্রতিক বড় সিদ্ধান্তগুলোতে খামেনির ভূমিকা কতটুকু? তাঁর কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে কি? তিনি এখনো দেশ পরিচালনায় সক্রিয়? তিনি অসুস্থ, আহত কিংবা আদৌ বেঁচে আছেন কি?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামজা সাফাভি আয়াতুল্লাহ খামেনির শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টা ও রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের জেনারেল ইয়াহিয়া সাফাভির ছেলে। হামজা জানান, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্বাস করে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েল খামেনিকে হত্যাচেষ্টা চালাতে পারে। তাই তাঁর নিরাপত্তায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ প্রায় বন্ধ রয়েছে।
চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক পরিচালক সানাম ভাকিল বলেন, খামেনির অনুপস্থিতি উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা এবং এটি এই ইঙ্গিত দেয়, ইরানি নেতৃত্ব এখন অতিমাত্রায় সতর্ক ও নিরাপত্তাকেন্দ্রিক ভাবনায় চলছে। আশুরার আগে যদি খামেনিকে দেখা না যায়, তাহলে তা হবে খারাপ সংকেত। তাঁকে অবশ্যই জনসমক্ষে আসতে হবে।সাফাভি বলেন, ‘দেশকে এ সংকট থেকে উত্তরণে এখন বাস্তবমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের মতো নেতাদের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে।’
তবে সাফাভির ধারণা, খামেনি এখনো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দূর থেকে অনুমোদন দিচ্ছেন।
তবু খামেনির অনেক সমর্থক এখনো সামাজিকমাধ্যমে বলছেন, তাঁরা সর্বোচ্চ নেতাকে না দেখা বা তাঁর কথা না শোনা পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিজয়ের আনন্দ অনুভব করতে পারছেন না।
খামেনির অনুপস্থিতিতে সক্রিয় নানা পক্ষ ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় প্রচারিত ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ভাষণ। তেহরানের একটি টিভি পর্দায়, ১৮ জুন ২০২৫