১৯৯২ সালের ঘটনা। গ্রামের একটি সালিস বৈঠকে আধিপত্য বিস্তারের জেরে ছয় ব্যক্তির চোখ তুলে তাঁদের দৃষ্টিহীন করে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল, ৩৩ বছর পর তাঁরা সবাই আদালত থেকে খালাস পেয়েছেন। রায় শুনে ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

ঘটনাটি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার আরশিনগর এলাকার। ৫ মে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত আলোচিত ওই মামলার রায় দেন। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর গত সোমবার ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এলাকার মানুষ নিয়ে উপজেলার মোল্যার বাজার এলাকায় মানববন্ধন করেন।

মামলার বিবরণ, আদালত ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০–এর দশকে শরীয়তপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বহারা পার্টির তৎপরতা ছিল। ১৯৯২ সালের ১০ ডিসেম্বর ভেদরগঞ্জ উপজেলার আরশিনগর এলাকায় সর্বহারা পার্টির দুই পক্ষের বিরোধ মীমাংসার একটি সালিস বৈঠকে উপস্থিত হন চরকুমারিয়া এলাকার শফিকুল ইসলাম ওরফে স্বপন মোল্যা, তাঁর সহযোগী মেজবাহ উদ্দিন মাল, শরীফ সরদার, তোফাজ্জল মাল, শাহীন মাদবর ও জালাল উদ্দিন মাদবর। ওই বৈঠকের একপর্যায়ে এক পক্ষের লোকজন ওই ছয় ব্যক্তির চোখ তুলে ফেলেন। স্থানীয় মানুষের সহায়তায় পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে চিকিৎসা করালেও তাঁরা আর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাননি।

ওই ঘটনার পরদিন শফিকুল ইসলামের ভাই নুরুল ইসলাম মোল্যা বাদী হয়ে ভেদরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছিলেন। মামলায় ৩২ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ওই ৩২ জনের বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালের ৮ মার্চ পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়ে ১৯৯৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ৩২ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর শরীয়তপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে মামলাটি চলতে থাকে।

গত ৩৩ বছরে ওই ঘটনার দুজন ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম ও শরীফ সরদার মারা গেছেন। গত বছর মামলার বাদী নুরুল ইসলাম মোল্যাও মারা গেছেন। ৩২ আসামির মধ্যে বিভিন্ন সময় ১৩ জন মারা গেছেন। গত ৫ মে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক মহিবুল হাসান মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মামলার সব আসামি খালাস পেয়েছেন।

রায় ঘোষণার পর ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন মামলা লড়ার পর আসামিদের সঙ্গে তাঁদের একধরনের শত্রুতা তৈরি হয়েছে। রায়ে আসামিরা খালাস পাওয়ায় তাঁরা শঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। ফলে আসামিদের বিচারের দাবিতে ও নিরাপত্তার দাবিতে সোমবার বিকেলে মোল্যার বাজার এলাকায় শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কে মানববন্ধন করেন তাঁরা। ওই ঘটনায় দৃষ্টিহীন হওয়া মেজবা উদ্দিন ও জালাল উদ্দিন মাদবর মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।

শরীয়তপুরের ৬ ব্যক্তির চোখ তুলে ফেলার মামলার রায়ে সব আসামি খালাস পাওয়ায় মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। গতকাল সোমবার ভেদরগঞ্জ উপজেলার মোল্যার বাজার এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ দরগঞ জ র এল ক য় উপজ ল র ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহী কলেজে হোস্টেল ভাড়া কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ

রাজশাহী কলেজে হোস্টেলের সিট ভাড়া কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে কলেজের প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি, আগে হোস্টেলের নির্ধারিত সিট ভাড়া ছিল ৫০০ টাকা, এটি বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। বাড়তি এই ভাড়া কমিয়ে আনতে হবে।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ‘‘গত বছরের ৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগের সিট বাণিজ্যের কারণে হোস্টেলের বিদ্যুৎ বিলসহ নানাখাতে টাকা বকেয়া পড়ে। বর্তমান সময়ে হোস্টেল প্রশাসন পূর্বের সেই বকেয়া পরিশোধের জন্য আবাসিক শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত ভাড়া চাপিয়ে দিয়েছে।’’ 

এ সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘ঢাকা কলেজে সর্বোচ্চ খরচ হলেও ভাড়া নেয়া হয় ৪০০ টাকা। সেখানে দেশসেরা রাজশাহী কলেজে এমন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি চাপ। একটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে এমন অতিরিক্ত ভাড়া সিট ভাড়া অন্য আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আদায় করা হয় না।’’ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কলেজ প্রশাসনকে আগামী ২২ তারিখ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়।

আরো পড়ুন:

উগ্র আচরণ করায় কুবি শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার

সাম্য হত্যা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ ঢাবি উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি

রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, ‘‘৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা মুসলিম হোস্টেল সুন্দর করে সাজানোর জন্য সহযোগিতা করছিলাম। তখন প্রশাসন বলেছিল, হোস্টেলের বিদ্যুৎ বিল বাকি আছে এবং বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক খরচ দেখিয়ে তারা ভাড়া বৃদ্ধি করেছিল। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছিল, যে ১ বছর পরে এই ভাড়া কমানো হবে। তাহলে কেন ১ বছর পর আমাদের এই দাবি নিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে?’’ 

কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘এই অতিরিক্ত ভাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তাই হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থীরাসহ কলেজের সকল সাধারণ শিক্ষার্থী এই ভাড়া কমানোর দাবি জানাতে আজকে মানববন্ধনে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমর্থন জানিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কলেজ প্রশাসন যেন একটি পদক্ষেপ নেয়। তা না হলে প্রতিবাদ চলবেই।’’

মানববন্ধন চলাকালে সেখানে যান অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলী, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ইব্রাহিম আলী ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. সেরাজ উদ্দিন। শিক্ষার্থীরা তাদের কাছেও এ দাবি জানান।

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মু. যহুর আলী জানান, তারা কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী ২২ মে হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবেন। 

ঢাকা/কেয়া/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজশাহী কলেজ হোস্টেলের সিট ভাড়া কমানোর দাবিতে মানববন্ধন
  • রাজশাহী কলেজে হোস্টেল ভাড়া কমানোর দাবিতে বিক্ষোভ
  • মল্লিকা এক্সপ্রেস আটকে ঢাকাগামী ৪ ট্রেন চালুর দাবি
  • মাদকের বিরুদ্ধে সুহৃদের মানববন্ধন ও সমাবেশ
  • মাদকের বিরুদ্ধে তারুণ্যের প্রত্যয়
  • জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও এবং কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি শহীদ পরিবারের সদস্যদের
  • দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবি কুয়েট শিক্ষার্থীদের
  • নোয়াখালীতে সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, আহত ৫
  • ঝিনাইদহে রেললাইন স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি