রূপপুর প্রকল্পের আরও ৮ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত, প্রকল্প এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
Published: 14th, May 2025 GMT
পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত আরও আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের প্রকল্প এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক মো.
সাময়িক বরখাস্ত আট কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন এনপিসিবিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক ইকতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিপ্লব, শামীম আহম্মেদ, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মো. গোলাম আজম, ঊর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মনির, ঊর্ধ্বতন উপসহকারী ব্যবস্থাপক গোলাম আজম এবং টেকনিশিয়ান রিয়াজ উদ্দিন ও ইসমাইল হোসেন।
এর আগে গত ৮ মে একইভাবে দুটি চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির ১৮ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি ও প্রকল্প এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্তের নোটিশে উল্লেখ করা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা ও এনপিসিবিএলে তাঁরা শৃঙ্খলাবিরোধী বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। কর্তব্যে অবহেলা করেছেন এবং করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী ১০ দিনের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
অন্যদিকে প্রকল্প এলাকায় প্রবেশাধিকার নিয়ে আরেকটি চিঠিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ ও আবাসিক এলাকা গ্রিনসিটিতে প্রবেশ বন্ধ করা হলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরখাস্ত একজন প্রকৌশলী বলেন, তাঁরা সবাই দক্ষতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানের ন্যায্য দাবি নিয়ে কথা বলায় তাঁদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
আরও পড়ুনরূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ১৮ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি, প্রকল্প এলাকায় নিষেধাজ্ঞা১১ মে ২০২৫নতুন করে আটজনকে বরখাস্তের বিষয়ে যোগাযোগ করলে এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহেদুল হাছানকে পাওয়া যায়নি। তবে ১৮ জনকে অব্যাহতির সময় তিনি বলেছিলেন, যথাযথ তদন্ত ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহেদুল হাছানের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে এনপিসিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেশ কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছিলেন। গত ৬ মে তাঁরা ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য
হত্যাকাণ্ডের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর মরদেহ (২৫) দাফন করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সড়াতৈল গ্রামের জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে রাত ১০টায় সড়াতৈল মাদ্রাসা ও ঈদগাহ মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে সাম্যর মরদেহ বহনকারী গাড়ি গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
নিহতের মরদেহ পৌঁছার পর সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজন ও প্রতিবেশীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাকে এক নজর দেখতে ভিড় করেন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন স্বজনরা। এরপর রাত ১০টার পর সড়াতৈল মাদ্রাসা মাঠে সাম্যর জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজা পূর্ব সমাবেশে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ছত্রদল নেতা সাম্য মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, অন্তর্বর্তী সরকার ও পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। আমরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করছি। প্রশাসন এতে ব্যর্থ হলে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায় করতে বাধ্য হব।
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যদি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে সঠিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সিরাজগঞ্জ থেকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
জানাজা নামাজ ও দাফনকার্যে ঢাবির শিক্ষক মাহবুব মোর্শেদ, বায়েজিত সুমন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুল ইসলাম খান আল, ঢাবি শাখা ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আবুবক্কার সিদ্দিক, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম সেরাজ, বেলকুচি উপজেলা জামাতের সেক্রেটারি আরিফুল ইসলাম, বেলকুচি উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব রিজন আহমেদ, ঢাবিতে অধ্যয়নরত সাম্যর সহপাঠীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষজন অংশ নেন।
সাম্যের চাচা গ্রাম্যচিকিৎসক কাউসারুল আলম কায়েস জানান, ‘১০ বছর আগে সাম্যর মা মারা যাবার পর থেকে বাবা-ভাই মিলে সকলে ঢাকায় থাকে। গ্রামেও কম আসে। ঈদ বা সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়া সাধারণত গ্রামে তারা কেউই আসে না। এলাকায় কারও সঙ্গেই তাদের কোনো ঝামেলা নেই। সাম্যের বাবা ফকরুল আলম ফরহাদ ঢাকার মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন।’
ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, আত্মীয়-স্বজন থাকলেও নিয়মিত না আসার সেভাবে যোগাযোগ নেই। সাম্য হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘সাম্য উল্লাপাড়া মোমোনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের অত্যান্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। যে কারণে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।’
প্রসঙ্গত, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় মঙ্গলবার রাত ১১টার ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যের বাবা ফকরুল আলম ঢাকার মিরপুরে রুপনগর আবাসিক এলাকায় ১৮ নম্বর সড়কে একটি বহুতল ভবনের ৭ম তলায় নিজস্ব ফ্লাটে থাকেন। চার ভাইয়ের মধ্যে সাম্য সবার ছোট। সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। ঢাবির স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাম্য হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন।