পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত আরও আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের প্রকল্প এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক মো.

জাহেদুল হাছানের সই করা পৃথক দুটি চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়। আজ বুধবার চিঠি দুটি ই-মেইলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

সাময়িক বরখাস্ত আট কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন এনপিসিবিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক ইকতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিপ্লব, শামীম আহম্মেদ, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মো. গোলাম আজম, ঊর্ধ্বতন সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মনির, ঊর্ধ্বতন উপসহকারী ব্যবস্থাপক গোলাম আজম এবং টেকনিশিয়ান রিয়াজ উদ্দিন ও ইসমাইল হোসেন।

এর আগে গত ৮ মে একইভাবে দুটি চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির ১৮ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি ও প্রকল্প এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

সাময়িক বরখাস্তের নোটিশে উল্লেখ করা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা ও এনপিসিবিএলে তাঁরা শৃঙ্খলাবিরোধী বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছেন। কর্তব্যে অবহেলা করেছেন এবং করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী ১০ দিনের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

অন্যদিকে প্রকল্প এলাকায় প্রবেশাধিকার নিয়ে আরেকটি চিঠিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ ও আবাসিক এলাকা গ্রিনসিটিতে প্রবেশ বন্ধ করা হলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরখাস্ত একজন প্রকৌশলী বলেন, তাঁরা সবাই দক্ষতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানের ন্যায্য দাবি নিয়ে কথা বলায় তাঁদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

আরও পড়ুনরূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ১৮ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি, প্রকল্প এলাকায় নিষেধাজ্ঞা১১ মে ২০২৫

নতুন করে আটজনকে বরখাস্তের বিষয়ে যোগাযোগ করলে এনপিসিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহেদুল হাছানকে পাওয়া যায়নি। তবে ১৮ জনকে অব্যাহতির সময় তিনি বলেছিলেন, যথাযথ তদন্ত ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহেদুল হাছানের অপসারণসহ বিভিন্ন দাবিতে এনপিসিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেশ কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছিলেন। গত ৬ মে তাঁরা ঈশ্বরদী শহরে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেন। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

রঙ চটা ক‌্যাপে ২০ বছর, একশ টেস্টে অনন‌্য মুশফিকুরের শ্রেষ্ঠত্ব

গুনে গুনে ২০ বছর আগের দিনটি যেন ফিরে এলো। হাবিবুল বাশার তখন টেস্ট দলের অধিনায়ক। মুশফিকুর রহিম পা রাখলেন ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে। বাংলাদেশের ৪১তম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে যাত্রা শুরু হলো ১৬ বছর বয়সী মুশফিকুরের। লর্ডসে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ড।

সেই মুহূর্তটাই যেন ২০ বছর পর ফিরে এলো মিরপুর শের-ই-বাংলায়। মুশফিকুর রহিমের একশতম টেস্টে। হাবিবুল বাশার আবারো ক‌্যাপ দিলেন মুশফিকুরকে। ওই একই ক‌্যাপ নয়। মুশফিকুর রহিমের জন‌্য বিশেষ ১০০তম টেস্ট ক‌্যাপ।

আরো পড়ুন:

শততম টেস্টের মঞ্চে মুশফিকুরকে সম্মানজনক সংবর্ধনা

শতরানের আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে বাংলাদেশ

নতুন ক‌্যাপ, নতুন স্মৃতি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে হানড্রেড টেস্ট খেলা মুশফিকুরের পছন্দ সেই অভিষেকের ক‌্যাপ। ২০০৫ সালে যেটা পেয়েছিলেন।

যেই ক‌্যাপটির রয়েছে বিশেষত্ব। যে ক‌্যাপে মিশে আছে ভালোবাসা, গর্ব, সম্মান, ঐশ্বর্যসহ কতো কিছু। ক‌্যাপটার বর্ণনা দিতে গেলে স্রেফ দুটি শব্দ ব‌্যবহার করলেই হবে, রঙ চটা! সত্যিই তাই। 

ক‌্যাপটার রঙ একেবারে চটে গেছে। পুরোপুরি পুরোনো দেখায়। অথচ বছরের পর বছর এই ক্যাপটা টেস্ট ম‌্যাচে পরে যাচ্ছেন মুশফিকুর। ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে কিন্তু গর্ব কমেনি। ক‌্যাপের গাঢ় সবুজ রঙ এখন ধূসর। কিন্তু মুশফিকুরের কাছে সর্বদা চাকচিক‌্যময়। বাঘের ছবিসংবলিত বিসিবির লোগো অদৃশ‌্যই হয়ে গেছে। কিন্তু হৃদয়ে ধারণ করে রেখেছেন সব। 

স্রেফ ভালোবাসা, টান, ক‌্যাপটির প্রতি শ্রদ্ধার কারণেই মুশফিকুরের মাথায় থাকে তার টেস্ট ক‌্যাপ। ২০ বছর হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুশফিকুর রহিমের পথচলা। লম্বা সময় পেরিয়ে তার মাথায় আজও শোভা পায় সেই ক‌্যাপ। দিন দশেক আগে ক্যাপটির ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন মুশফিকুর রহিম। ক‌্যাপশন দিয়েছিলেন, ‘‘সকল উত্থান-পতনের সঙ্গী…।’’ 

সত‌্যিই কি তা-ই নয়। সময় বদলেছে। ভেন্যু থেকে ভেন্যুতে গিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৩৫টি। কতকত বোলারকে খেলেছেন। বল খেলেছেন, ১৩ হাজার ১৩৯। ছয় হাজারের বেশি রান করেছেন। তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি নামের পাশে। সব কিছুর সাক্ষী এই রঙচটা ক‌্যাপ। পরম যত্নে এখনও বহন করেন লর্ডসে পাওয়া গৌরবের টুকরো। যা তাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, এই ক‌্যাপটার জন‌্যই তো কতো পরিশ্রম করা। কতো ঘাম ঝরানো। কত ঘুম ত‌্যাগ, কতো আনন্দ সময় বিসর্জন। সেজন‌্যই তো মাইলফলক ছোঁয়া দিনটাতে তার এই ক‌্যাপটাই কেড়ে নেয় সব আলো।

মুশফিকুর তার টেস্ট অভিষেক করেছিলেন মাহেন্দ্র সিং ধোনি, কেভিন পিটারসেন, মাইকেল হাসি এবং অ্যালিস্টার কুকেরও আগে। দুই দশক পরে, তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ২০০৫ সালে অভিষেকের পর এখনও টেস্ট ক্রিকেটে সক্রিয়। অথচ বাকি যে তিনজনের কথা বলা হলো তাদের দুজন পিটারসেন ১০৫ ও কুক ১৬১ টেস্ট খেলে অবসর নিয়ে নিয়েছেন। ধোনি সমসাময়িক সময়ে।

মুশফিকের পুরো ক‌্যারিয়ারকে দুটি ভাগে ভাগ করতে হবে। যেখানে একটি ভাগে শুধু নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই। আরেকটিতে কেবল অর্জনের স্রোত।

২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩০ ম‌্যাচে মাত্র ১৫৮৭ রান করেছিলেন। ব‌্যাটিং গড় ২৮.৮৫। সেঞ্চুরি মাত্র ১টি। প্রথম ১৫টি টেস্ট ইনিংসে, যা প্রায় তিন বছর জুড়ে ছিল, মুশফিকুর মাত্র চারবার দুই অঙ্কের স্কোরে পৌঁছান। তার গড় ৩০ স্পর্শ করেনি ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত। ৩১তম টেস্ট ম্যাচ খেলার পর মুশফিকুর খুঁজে পান নিজেকে। পায়ের নিচের মাটি শক্ত হয়। গলে মুশফিকুর করেন তার ক‌্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি।

২০১৩ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত  ৬৯ ম‌্যাচে ৪৭৬৪ রান মুশফিকুরের নামের পাশে। ব‌্যাটিং গড় ৪২.৫৩। সেঞ্চুরি অবিশ্বাস‌্য। যে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি, প্রতিটি এই সময়টাতেই।

নিশ্চিতভাবেই মুশফিকুর বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে গণ্য হবেন, যার দেরিতে উত্থান তাকে তার সমসাময়িক সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে স্থান দিয়েছে। তিনি যা যা করেছেন এবং যত দিন টিকে আছেন, তা নিজস্বভাবেই এক শ্রেষ্ঠত্ব।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ