গরমে শিশুর যত্নে এসব ভুল করছেন না তো?
Published: 14th, May 2025 GMT
প্রচণ্ড গরমে বড়দের চেয়ে অনেকটাই বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। তাপপ্রবাহে সহজেই পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে তাদের ছোট্ট দেহ। তৃষ্ণা পেলে অনেক সময় তারা তা ঠিকভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম না-ও হতে পারে। শিশুরা যদি বোঝার মতো বয়সী হয়, তাহলে গরমের সময় কী খাওয়া উচিত, কী খাওয়া উচিত নয়—এসব বিষয়ে শিশুকে জানিয়ে রাখা ভালো। পোশাক বা খেলাধুলার মতো রোজকার সাধারণ ব্যাপারেও যত্নবান হোন। নিত্যদিনের জীবনযাপনে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা.
পানি নিয়ে জোরাজুরি
বয়স ছয় মাস পার হলে শিশুকে পানি পান করানো শুরু করতে হয়। দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ থেকেই পানির চাহিদা অনেকটা মিটে যায়। পানি, অন্যান্য তরল ও ফলমূল থেকেও সে পানি পায়। সারা দিনই মাঝেমধ্যে শিশুকে পানি বা তরল খাবার খেতে উৎসাহ দিন। ফলের রস বা স্মুদি করে দিতে পারেন। তবে খুব বেশি চিনি দেওয়া পানীয় দেবেন না। তার সঙ্গে নিজেও পানি পান করুন। স্কুলে গেলেও যাতে পর্যাপ্ত পানি পায়, সে ব্যবস্থা রাখুন। তবে পানিশূন্যতার লক্ষণ না থাকলে শিশুকে পানি পান করানোর ব্যাপারে জোর করবেন না। অকারণ বিরক্তি ভাব বা জেদ, খানিকটা নিস্তেজ ভাব, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, গাঢ় হলুদ বা কমলা রঙের প্রস্রাব হওয়া, মুখ বা জিব শুকিয়ে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া প্রভৃতি হতে পারে পানিশূন্যতার লক্ষণ।
যা খুশি তা–ই খাওয়া
গরমে পানি ও খাবারের মাধ্যমে বহু মারাত্মক রোগ ছড়ায়। অস্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি করা পানীয় ও খাবারের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয়। এগুলো এড়িয়ে চলার ব্যাপারে শিশুকে বুঝিয়ে বলুন, স্কুলের পথে একলা সুযোগ পেলেও যেন সে এসব খাবার না খায়। রসনার তৃপ্তি মেটাতে বাড়িতে তার পছন্দের খাবার ও পানীয় তৈরি করে দিন। আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করবেন না, যদি না ঠান্ডায় তার খুব বেশি অ্যালার্জি থাকে। মাঝেমধ্যে আইসক্রিম বা হালকা ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার সুযোগ দিন, তবে তা যেন নিরাপদভাবে তৈরি করা হয়। তাকে এটাও বুঝিয়ে বলুন, কড়া রোদ থেকে ঘরে বা ক্লাসে ঢোকামাত্রই ঠান্ডা কিছু খাওয়া উচিত নয়। একটু রয়েসয়ে তারপর সে খেতে পারে হালকা ঠান্ডা পানীয় বা খাবার।
আরও পড়ুনদাবদাহের সময় শিশুর যত্ন২৮ এপ্রিল ২০২৪ফুলহাতা জামা-পায়জামা পরালে শিশু সুরক্ষিত থাকবে।উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আশির দশকের ফেরিওয়ালারা
আশির দশকে গ্রামে-গ্রামে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফেরি করার প্রচলন ছিলো। কুমোর, মালাইওয়ালা, হিমানীওয়ালা থেকে শুরু করে শাড়িওয়ালারাও ফেরি করে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতো। সে সময় বিনিময় প্রথাও ছিল একটু ভিন্ন।
মোটামুটি সব কাজেই মাটির হাঁড়ি-পাতিলের একটা ব্যবহার ছিল। কুমোরেরা তাদের নিজেদের বানানো মাটির তৈজসপত্র নিয়ে আসতো। সেগুলোর মধ্যে থাকতো ভাতের হাঁড়ি, ডালের হাঁড়ি, দুধের হাঁড়ি, মুড়ি ভাজার ঝাঁঝর, বড় বড় কোলা, কলস, ঠিলা নিয়ে আসতো। কলস একটু বড়, ঠিলা একটু ছোট। এগুলোতে তখন খাবার পানি সংরক্ষণ ও পানি পরিবহন করা হতো। কলসে পানি ঠান্ডা থাকতো। বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত তিন ধরণের বিনিয়ম হতো। নগদ টাকা, ধান এবং ধানের চিটা বিনিময় করে মাটির তৈসজ কেনা হতো। চিটা নিয়ে ওরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতো।
অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি বিভিন্ন রকমের হাঁড়ি-পাতিল, তামা-কাঁসার হাঁড়ি-পাতিল বিশেষত জগ, গ্লাসের তখন অনেক চাহিদা ছিল। এগুলোর আলাদা ফেরিওয়ালা ছিল। নগদ টাকা, ধান অথবা পুরনো কাপড়ের বিনিময় করে অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিল কেনা যেত। এই ফেরিওয়ালারা আবার কুমোরদের মতো চিটা নিতো না।
আরো পড়ুন:
পাঁচ বছরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে ২২৮ শতাংশ
সমকামীকে দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রিভিউ দাবি
এরপরে আসতো আইসক্রিমওয়ালা। তারা মালাইওয়ালা নামেও পরিচিত। এসেই একটা হাঁক ছাড়তো। কাঠের তৈরি বিশেষ বাক্সে নিয়ে আসতো মালাই। সাধারণত বাক্সটা সাইকেলের পেছনে বেঁধে নিয়ে আসতো। হাতে একটা ঘণ্টি থাকতো। যেটা বাজালেই ছোট ছোট বাচ্চারা দৌড়ে মালাইওয়ালার কাছে হাজির হতো। এবং মালাইওয়ালাও ততক্ষণে তার ধুমধাম আরও বাড়িয়ে দিতো। তখন খুবই সস্তা দামে মালাই পাওয়া যেত। বরফ আর স্যাকারিন দিয়ে তৈরি হতো সেই মালাই। তখনকার বিবেচনায় মালাই ছিল মহা আকাঙিক্ষত খাবার। অন্যরকম স্বাদ। সারা গ্রাম ঘুরে ঘুরে আইসক্রিমওয়ালা আইসক্রিম বিক্রি করতো।
গ্রামে আসতো লেইস-ফিতাওয়ালারা। সাধারণত ফরিদপুর এবং মাদারিপুর এলাকার লোকজন লেইস ফিতা ফেরি করতো। তাদের হাতে কাচের ঢাকনাওয়ালা কাঠের এক ধরণের বাক্সের মতো থাকতো। কারও কাছে একটা থাকতো আবার কারও কাছে দুইটা থাকতো। তারা লেইস ফিতা, লেইস ফিতা বলে হাঁক-ডাক করতো। এই ফেরিওয়ালারা সাধারণত বাইর বাড়িতে দাঁড়াতো। এরপর বাড়ির নারীরা আসতো। এসে চুলের ফিতা, ক্লিপ, সেফটিফিন, টিপসহ সাজগোজের নানা অনুসঙ্গ থেকে যার যেটা পছন্দ, সেটা কিনে নিতো। যেহেতু তখন দোকান খুব একটা ছিল না, তাই এসব ফেরিওয়ালাদের বেচা-বিক্রিও খুব ভালো হতো।
কিছু মানুষ নিজেদের হাতে তৈরি স্নোকে হিমানী নামে বিক্রি করতো। তাদেরকে বলা হতো হিমানীওয়ালা। এই হিমানী বা স্নো মুখে ব্যবহার করা হতো। শুধুমাত্র শীতকালে হিমানীওয়ালারা আসতো। তার মাথায় একটি ডিব্বা বা পাত্রে হিমানী থকাতো। দেখা যেত যে, যার কাছে যেমন কৌটা থাকতো, সে সেই অনুযায়ী দাম দিয়ে হিামনী কিনতো। হিমানীওয়ালা তার বড় ডিব্বা চামচ ভরে স্নো তুলে কৌটায় দিয়ে দিতো।
ভাঙ্গারিওয়ালা এসে বাড়ি বাড়ি থেকে পুরনো টর্চ লাইট, পুরনো অ্যালুমিয়ামের হাঁড়ি পাতিল কিনে নিতো, পুরনো-অব্যবহৃত হারিকেন কিংবা অব্যবহৃত কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্রও অল্প টাকায় কিনে নিয়ে যেত। ভাঙ্গারিওয়ালাদের কাছে কিছু খাদ্যদ্রব্য থাকতো। যেগুলো বাচ্চাদের উপযোগী। যেমন—মদন কটকটি, বাতাসা, টানা, তিলের খাজা, শন পাপড়ি ইত্যাদি। অনেক সময় দেখা যেত যে, কেউ একটা টিনের ভাঙা অংশ বা পুরনো ব্যাটারী নিয়ে আসছে ভাঙারিওয়ারা ওই টিন নিয়ে একটু টানা বা তিলের খাজা দিয়ে দিত। ওইটাই তখন ছিল বিনিময়ের একটি রীতি।
গ্রামে আরও আসতো শাড়িওয়ালারা। শাড়ি ভাঁজ করে-করে বড় গাইট করে মাথায় বা ঘাড়ে করে নিয়ে আসতো। অনেক সময় একা বা দুইজন আসতো। বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি ঘুরে তারা শাড়ি বিক্রি করতো। তখন শুধুমাত্র যারা শাড়ি তৈরি করতো সেই বসাকবাড়িতে, জেলা শহরে অথবা হাটের দিনে হাটে গিয়ে শাড়ি কেনা যেত। তাই সবচেয়ে বেশি কদর ছিলো ফেরিওয়ালাদের শাড়ির। এদের ব্যবসাটাও বেশ ভালো ছিল। এই ফেরিওয়ালারা শুধু টাকার বিনিয়মে শাড়ি বিক্রি করতো।
কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন জায়গায় মার্কেট এবং দোকান হওয়াতে এসব পেশা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
ঢাকা/লিপি