প্রচণ্ড গরমে বড়দের চেয়ে অনেকটাই বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। তাপপ্রবাহে সহজেই পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে তাদের ছোট্ট দেহ। তৃষ্ণা পেলে অনেক সময় তারা তা ঠিকভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম না-ও হতে পারে। শিশুরা যদি বোঝার মতো বয়সী হয়, তাহলে গরমের সময় কী খাওয়া উচিত, কী খাওয়া উচিত নয়—এসব বিষয়ে শিশুকে জানিয়ে রাখা ভালো। পোশাক বা খেলাধুলার মতো রোজকার সাধারণ ব্যাপারেও যত্নবান হোন। নিত্যদিনের জীবনযাপনে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল হয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা.

তাসনুভা খান বলেন, ‘গরমে শিশুর পানির চাহিদা মেটানোর অর্থ কিন্তু এই না, তাকে বারবার জবরদস্তি পানি পান করাতে হবে। বরং তার দেহের চাহিদা বোঝার চেষ্টা করুন। শিশু প্রস্রাব করার সময় রং ও পরিমাণ খেয়াল করুন। শিশু যদি পর্যাপ্ত প্রস্রাব করে এবং প্রস্রাবের রং যদি হয় হালকা হলুদ খড়ের মতো, তাহলে বুঝতে হবে, তার পানির চাহিদা মিটছে। পানিশূন্যতার অন্যান্য লক্ষণও জানা থাকতে হবে।’

আরও পড়ুনশিশুর জন্য গ্রোথ হরমোন কেন, কখন২৭ এপ্রিল ২০২৫এই চিকিৎসকের কাছ থেকে এই সময়ে শিশুর যত্নে কিছু ভুল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

পানি নিয়ে জোরাজুরি

বয়স ছয় মাস পার হলে শিশুকে পানি পান করানো শুরু করতে হয়। দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ থেকেই পানির চাহিদা অনেকটা মিটে যায়। পানি, অন্যান্য তরল ও ফলমূল থেকেও সে পানি পায়। সারা দিনই মাঝেমধ্যে শিশুকে পানি বা তরল খাবার খেতে উৎসাহ দিন। ফলের রস বা স্মুদি করে দিতে পারেন। তবে খুব বেশি চিনি দেওয়া পানীয় দেবেন না। তার সঙ্গে নিজেও পানি পান করুন। স্কুলে গেলেও যাতে পর্যাপ্ত পানি পায়, সে ব্যবস্থা রাখুন। তবে পানিশূন্যতার লক্ষণ না থাকলে শিশুকে পানি পান করানোর ব্যাপারে জোর করবেন না। অকারণ বিরক্তি ভাব বা জেদ, খানিকটা নিস্তেজ ভাব, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, গাঢ় হলুদ বা কমলা রঙের প্রস্রাব হওয়া, মুখ বা জিব শুকিয়ে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া প্রভৃতি হতে পারে পানিশূন্যতার লক্ষণ।

যা খুশি তা–ই খাওয়া

গরমে পানি ও খাবারের মাধ্যমে বহু মারাত্মক রোগ ছড়ায়। অস্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি করা পানীয় ও খাবারের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয়। এগুলো এড়িয়ে চলার ব্যাপারে শিশুকে বুঝিয়ে বলুন, স্কুলের পথে একলা সুযোগ পেলেও যেন সে এসব খাবার না খায়। রসনার তৃপ্তি মেটাতে বাড়িতে তার পছন্দের খাবার ও পানীয় তৈরি করে দিন। আইসক্রিম খাওয়া নিয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি করবেন না, যদি না ঠান্ডায় তার খুব বেশি অ্যালার্জি থাকে। মাঝেমধ্যে আইসক্রিম বা হালকা ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার সুযোগ দিন, তবে তা যেন নিরাপদভাবে তৈরি করা হয়। তাকে এটাও বুঝিয়ে বলুন, কড়া রোদ থেকে ঘরে বা ক্লাসে ঢোকামাত্রই ঠান্ডা কিছু খাওয়া উচিত নয়। একটু রয়েসয়ে তারপর সে খেতে পারে হালকা ঠান্ডা পানীয় বা খাবার।

আরও পড়ুনদাবদাহের সময় শিশুর যত্ন২৮ এপ্রিল ২০২৪ফুলহাতা জামা-পায়জামা পরালে শিশু সুরক্ষিত থাকবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস র ব প ন কর

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি

ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’

২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।

মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।

অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’

জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখ

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’

রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’

রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়

রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।

জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’

২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ

আরও পড়ুননিউইয়র্কের এত ইহুদি কেন জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫

তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।  স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।

কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি৯ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ