ব্যস্ত জীবনে ঝামেলা এড়াতে অনেকেই সকালের নাশতা এড়িয়ে যান। শরীরের জন্য এই অভ্যাস মোটেও ভালো নয়। কেউ কেউ সহজ খাবার হিসেবে সকালে খেয়ে নেন ফলের রস কিংবা স্মুদি। কিন্তু ফলের রস ও স্মুদির মধ্যে কোনটা আসলে স্বাস্থ্যকর?

সকালের নাশতায় ফলের রস খাওয়া কি ঠিক?
আমেরিকা, কানাডা ও ইরানের বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কমলালেবু বা আপেলের রস দেহের প্রদাহ কমায় এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা ঠিক রাখে। তা ছাড়া ফলের রস ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। কিন্তু তারপর ফলের রস না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা। ভারতীয় পুষ্টিবিদ শ্রেয়সী ভৌমিক বলেন, সকালের নাশতায় কোনও মতেই ফলের রস খাওয়া ঠিক নয়। তা ছাড়া ফলের রস স্বাস্থ্যকরও নয়।’সাধারণত ফল বা সবজি থেকে রস বের করলে তার মধ্যে থাকা ফাইবার নষ্ট হয়ে যায়। এতে তখন থাকে কিছু মিনারেল এবং ফ্রুক্টোজ়। একে ‘ফ্রি সুগার’ও বলা হয়। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দৈনিক ক্যালোরির ১০%-এর কম ‘ফ্রি সুগার’ খাওয়া উচিত। অন্যদিকে, ১৫০ মিলি ফলের রসে প্রায় ১৪ গ্রাম চিনি থাকে। দিনের পর দিন এ ভাবে ফলের রস খেলে টাইপ-২ ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

ভারতীয় পুষ্টিবিদ ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, অনেকেই কেনা ফলের রস খায়। এতে ফলের গুণ কম, চিনি বেশি থাকে। প্যাকেটজাত ফলের রস আরও বিপজ্জনক। 

পুষ্টিবিদদের মতে, সকালের নাশত, মিড স্ন্যাকস হিসেবে ফলের রস কখনওই ভালো খাবার নয়। এতে শরীরে কোনও পুষ্টি পৌঁছয় না। উল্টে রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। পুষ্টিবিদ শ্রেয়সীর মতে,গোটা ফল খেলে অনেক বেশি উপকারিতা মেলে। পুষ্টিবিদ ঈশানী জানান, যাদের চিবিয়ে খাবার খেতে বা খাবার গিলতে কষ্ট হয়, তারা ফলের রস খেতে পারেন। তবে প্রতিদিন খাওয়াও ঠিক নয়। 

ফলের রসের চেয়ে কতটা উপকারী স্মুদি?
স্মুদি তৈরিতে দই, দুধ, বিভিন্ন ধরনের বাদাম, বীজ, ফল, এমনকী ওটসের মতো গোটা শস্যও ব্যবহার করা হয়। আবার শাকসবজি দিয়েও স্মুদি থেরি করা হয়। পুষ্টিবিদ শ্রেয়সীর মতে, ‘ফলের তুলনায় অনেক গুণ বেশি স্বাস্থ্যকর স্মুদি। এতে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ সব পাওয়া যায়।’ দিনের শুরুতে অনায়াসে একগ্লাস স্মুদি খাওয়া যায়। আর স্মুদিতে যদি ফল দেওয়া হয় তা আরও বেশি পুষ্টিকর হবে। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

জ্ঞানের আলোকযাত্রায় বিজ্ঞানচিন্তার ৯ বছর

বিজ্ঞানচিন্তার দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ম্যাগাজিনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মীকে আমি অভিনন্দন ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তাঁদের নিরলস প্রয়াসে এটি আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে অগ্রগণ্য বিজ্ঞান ম্যাগাজিন। নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে এটির ভূমিকা অনবদ্য। শুরু থেকেই এর সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে, এতে আমি গর্বিত। এ ম্যাগাজিনের মূল ভাবনা অজানাকে প্রশ্ন করা—এটাই আসলে বিজ্ঞানের মূলমন্ত্র।

বিজ্ঞান কঠিন প্রশ্ন করে, গভীরভাবে আমাদের ভাবতে বাধ্য করে। এই ভাবনার প্রক্রিয়া আমাদের সবার মধ্যেই আছে। এটি সহজাত। এর জন্য বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে হয় না। কিন্তু এখানে একটি শর্ত আছে। শর্তটি হলো, ভাবনার পদ্ধতিটি র‍্যান্ডম হওয়া যাবে না, অর্থাৎ আমাদের ইচ্ছেমতো যুক্তিশাস্ত্রের বাইরে গিয়ে মনগড়া কারণ দর্শানো যাবে না। সেই সঙ্গে ভাবনাটি আমাদের হাজার বছরের সম্মিলিত জ্ঞানের ওপর নির্ভর করতে হবে। গভীর ভাবনাগুলো কী?

বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে চান মহাবিশ্বের গঠনের আসল রূপ। কেন শূন্যতার বদলে ভর, শক্তি আর স্থান–কালের সমন্বয়ে এক মহাবিশ্ব গড়ে উঠল, কেন চারটি মৌলিক বল মহাবিশ্বের সব মিথস্ক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করে, কেন মহাবিশ্ব পদার্থ দিয়ে তৈরি, প্রতিপদার্থরা কোথায় গেল? এ অভিযানে বিজ্ঞান স্বীকার করে, সব উত্তর তার কাছে নেই। সে জানে না ডার্ক ম্যাটার কী অথবা ডার্ক এনার্জি কী। কিন্তু আগামীকাল নতুন প্রমাণিত তত্ত্ব এলে সে তার প্রচলিত স্বীকৃত ধারণা ফেলে দিতেও দ্বিধা করবে না। এ এক অন্তহীন অধ্যবসায়; নতুন জ্ঞানের দরজা খোলার এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা।

প্রভাবশালী অস্ট্রিয়ান দার্শনিক কার্ল পপার বলেছিলেন, বিজ্ঞানের দর্শনে ভুল প্রমাণের সুযোগ (Falsifiability) থাকতে হবে। অর্থাৎ একটি অনুকল্প বা হাইপোথিসিসকে তখনই বৈজ্ঞানিক বলা যাবে, যদি সেটি মিথ্যা প্রমাণ করার সুযোগ থাকে। বিজ্ঞানীরা এমনভাবেই কঠিন প্রশ্নগুলো করেন, যাতে সেগুলো পরীক্ষা করা যায়, ভুল প্রমাণের সুযোগ থাকে। যেমন ‘এই ঘর বিশেষ ধরনের অদৃশ্য কণা দিয়ে ভর্তি, যা কোনো পর্যবেক্ষণে দেখা যাবে না’—এটি বৈজ্ঞানিক অনুকল্প নয়। কারণ, এই প্রস্তাব প্রথমেই বলে দিয়েছে, কোনো পর্যবেক্ষণেই এই কণা দেখা যাবে না।

অর্থাৎ এই প্রস্তাবকে ভুল প্রমাণের কোনো উপায় নেই। এর মানে এই নয় যে ওই ঘরে ‘বিশেষ অদৃশ্য কণা’ নেই। কিন্তু ভুল প্রমাণের সুযোগ না থাকায় অনুকল্পটি বিজ্ঞানের

আওতায় পড়বে না। এ জন্য অনেক বিজ্ঞানীই ‘মাল্টিভার্স আইডিয়া’ বৈজ্ঞানিক অনুকল্প কি না, তা নিয়ে দ্বিধান্বিত। আবার একই কারণে তাত্ত্বিক বিজ্ঞানী পপারের এ সংজ্ঞা অনেকে বদলাতে চান। কিন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণাপদ্ধতির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা একমত।

বিজ্ঞানচিন্তার পাঠকেরা গবেষণাপদ্ধতির এ বিষয়টি মাথায় রাখবেন—এই আমার আশা। এ ভাবনাপ্রক্রিয়াই বিজ্ঞানের আসল সৌন্দর্য, ভুল স্বীকার করে এগিয়ে চলা।

অনেকে বিজ্ঞানকে ভয় পান, আবার অনেকে বিজ্ঞানের অবদানকে ছোট করার চেষ্টা করেন; অথচ আমাদের চারপাশে যা ঘটছে, সবই বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। অনেকে আবার দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রয়োগকে দেখেও না দেখার ভান করেন। তাঁরা ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন, কিন্তু চিন্তা করতে চান না আমাদের জীবনে বিজ্ঞানের উপহারগুলো নিয়ে। পৃথিবীর কক্ষপথে নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র অবলম্বনে কাজ করে যাচ্ছে স্যাটেলাইট। সেখান থেকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ব্যবহার করে আমরা পাচ্ছি জিপিএস সংকেত। সেটা আমাদের পথ চলতে সাহায্য করে। তরল ও গ্যাসপ্রবাহের তত্ত্ব মেনে হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার হচ্ছে, গ্যাসের চুলা জ্বলছে, টারবাইন ঘুরিয়ে তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। অর্থাৎ বিজ্ঞান আছে সবখানে। তাই একে যতটুকু সম্ভব জানা আমাদের কর্তব্য।

বিজ্ঞানচিন্তা গত ৯ বছর আমাদের এ শিক্ষাই দিয়ে চলেছে। সামনের বছরগুলোয় তাদের প্রকাশনা আরও উজ্জ্বল হোক, আরও জনপ্রিয় হোক—এ আমার কামনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ