নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের মানুষের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি কী? মানুষের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি করেন। বিএনপিকে যেন মানুষ ভালোবাসে। বলে, “হ্যাঁ, বিএনপি ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নাই।” এই জিনিসটাকে আমাদের তৈরি করতে হবে। সেই জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।’

আজ সোমবার দুপুরে সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও মহানগর বিএনপির ব্যবস্থাপনায় এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের উদ্যোগে দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফিরাত কামনায় এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় এ দোয়া মাহফিল হয়। পাশপাশি আলোচনা সভাও হয়েছে।

দোয়া ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু) ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে কথা বলে ছাব্বিশের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের একটা সময় ঠিক করেছেন।’ এরপর বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, সরকারকে বলতে চাই, অন্য রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, নির্বাচন যত দেরি হবে, তত বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে।’

দ্রুত নির্বাচন না হলে বিভিন্ন সংকট দেখা দেবে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিনিয়োগ আসবে না। ইনভেস্টমেন্ট (বিনিয়োগ) হবে না। আমার মায়েরা–মেয়েরা আরও বেশি নিরাপত্তা হারাবে। মবোক্রেসি আরও বাড়বে। জুডিশিয়াল সিস্টেম ভেঙে পড়বে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে। সে জন্য দরকার একটি নির্বাচিত সরকার। যে সরকারের পেছনে মানুষ আছে, সে সরকারের পেছনে জনসমর্থন আছে। নির্বাচিত সরকারের চাইতে শক্তিশালী কোনো সরকার হতে পারে না।’

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যেন খারাপ কথা কেউ বলতে না পারে। আমাদের দিকে আঙুল তুলে যাতে বলতে না পারে যে আমরা খারাপ কাজ করছি, কারও জমি দখল করেছি, রাস্তা দখল করেছি, চাঁদাবাজি করেছি। এ কথা যেন কেউ না বলতে পারে। সবাইকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’

২০২৪ এবং এর আগের ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য অনেকে বুকের রক্ত রাস্তায় ঢেলে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের নেতা যাঁরা এখানে বসে আছেন, তাঁদের অনেককে পায়ে-হাতে দড়ি লাগিয়ে মাসের পর মাস কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে এই সিলেটে। অনেককে পিটিয়ে পিটিয়ে শরীর জর্জর করেছে হাসিনা সরকার। হাতে-পায়ে বেড়ি দিয়ে আটকে রাখত। এই অত্যাচার–নির্যাতন সহ্য করে আমরা এখন এখানে।’

শেখ হাসিনা এমনি এমনি হঠাৎ পালাননি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বহুদিনের সংগ্রাম, বহু মানুষের ত্যাগ স্বীকার, বহু মানুষের রক্ত, বহু মাতার কান্না—সব মিলিয়ে এই ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছি। এখন ফ্যাসিবাদমুক্ত হলাম, ঠিক আছে। এখন করবটা কী? আমরা তো বলেছি, আমাদের এই লড়াইটা হচ্ছে গণতন্ত্রের লড়াই। অর্থাৎ আমরা বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে সবার অধিকার পূর্ণ করা হবে। ভোট দিতে পারবে মানুষ, যেখানে কথা বলতে পারবে, বাক্‌স্বাধীনতা থাকবে।’

বাংলাদেশ কি চিরকাল দরিদ্র দেশ হয়ে থাকবে? চিরকাল নিচে পড়ে থাকবে? এসব প্রশ্ন রেখে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সেই বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেখেছিলেন। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে তিনি খাল কেটেছিলেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে। সে বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই, যে বাংলাদেশের জন্য আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া গ্রামে-গ্রামান্তরে চারণকবির মতো গণতন্ত্রের গান গেয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন। আমরা সেই স্বপ্ন দেখতে চাই।’

সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান (হাবিব), খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, তাহাসিনা রুশদীর (লুনা), এনামুল হক চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এর আগে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি ফ্লাইটে মির্জা ফখরুল সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.

) ও হজরত শাহপরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত শেষে পাঠানটুলা এলাকার সভাস্থলে যান। এ সভা শেষে বিকেলে নগরের দরগাগেট এলাকার একটি হোটেলে সিলেট জেলা বিএনপি আয়োজিত জুলাই-আগস্টে সিলেট জেলায় শহীদ বীর সন্তানদের বিশেষ স্মরণ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু), এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব এনপ র ব এনপ র স সরক র র উপদ ষ ট র সদস য আম দ র রহম ন ফখর ল আবদ ল

এছাড়াও পড়ুন:

পর্যায়ক্রমে উপজেলায় আদালত সম্প্রসারণে একমত দলগুলো

অধস্তন আদালত পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করার বিষয়ে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে এ ক্ষেত্রে ছয়টি বিষয় বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়। এ ছাড়া জরুরি অবস্থা জারির বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক স্বার্থে এই বিধান ব্যবহার না করার বিষয়েও মতৈক্য হয়েছে। তবে এ–সংক্রান্ত নতুন বিধানে কী কী থাকবে, তা নিয়ে আরও আলোচনা হবে।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে গতকাল দিনব্যাপী এ দুটি বিষয়ে আলোচনা হয়। গতকাল ছিল দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার দশম দিন। এদিন ৩০টি দল আলোচনায় অংশ নেয়।

কিছু প্রেক্ষাপট বিবেচনা ও নিশ্চিত করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত স্থায়ী আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিল বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। এর আগে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল।

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত প্রকাশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা, দ্বীপ এলাকা ও চৌকি এলাকা বিবেচনায় কিছু উপজেলায় অধস্তন আদালত স্থানান্তর করা যেতে পারে। তবে উপজেলা পর্যায়ে অবকাঠামো নেই, কারাগার নেই।

বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টে বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে এ বিষয়ে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করা হবেআলী রীয়াজ, সহসভাপতি, ঐকমত্য কমিশন

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন প্রস্তাব করেন, প্রতিটি উপজেলায় না হলেও সংসদীয় আসনভিত্তিক আদালত সম্প্রসারণ করা যেতে পারে।

আলোচনায় কেউ কেউ উপজেলা পর্যায়ে আদালত নেওয়া হলে মামলা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এমন আশঙ্কার চেয়ে মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিতে হবে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, উপজেলায় আদালত স্থানান্তর হলে দুর্নীতি বাড়বে, এমন কেন ভাবা হচ্ছে। দুর্নীতি কোথায় হচ্ছে না। তিনি বলেন, সেবা সহজ করা, মামলার চাপ কমানো এবং দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিতে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ করতে হবে।

পরে উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থানান্তরের বিষয়ে ঐকমত্য হয়। আলোচনা শেষে বিকেলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, দলগুলো উপজেলা পর্যায়ে পর্যায়ক্রমে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে একমত পোষণ করেছে। তবে দল ও জোটগুলো এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে।

আলী রীয়াজ জানান, ছয়টি বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো—১. জেলা সদরে অবস্থিত সদর উপজেলা আদালত জেলা জজকোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত করা। ২. বিদ্যমান চৌকি আদালত ও উপজেলা আদালত প্রয়োজনীয় সংস্কার ও অবকাঠামো নির্মাণ করা। ৩. জেলা সদরের কাছাকাছি উপজেলায় নতুন আদালত স্থাপন না করা ও প্রয়োজনীয় জরিপ পরিচালনা করা। ৪. অবশিষ্ট উপজেলায় জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, যাতায়াতব্যবস্থা, দূরত্ব, অর্থনৈতিক অবস্থা ও মামলার সংখ্যা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে আদালত স্থাপন করা। ৫. অধস্তন আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা। ৬. আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক কর্মকর্তার তথ‍্য অনুসারে, দেশের ২৩টি জেলার ৪৩টি উপজেলায় ৭১টি চৌকি আদালত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছিল। গতকালের আলোচনায় বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আগের দিন তিনি বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করে হাইকোর্টের বেঞ্চ বিভাগীয় পর্যায়ে স্থানান্তর করতে হবে। কিন্তু সাংবাদিকদের সামনে সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় এটি উল্লেখ করা হয়নি।

গতকালের আলোচনা শেষে আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টে বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে এ বিষয়ে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

জরুরি অবস্থা জারির বিধান

বিদ্যমান সংবিধানে সর্বোচ্চ ১২০ দিনের জন্য রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। এ ঘোষণার বৈধতার জন্য আগেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। ঐকমত্য কমিশন গতকালের আলোচনায় এ বিধান–সংক্রান্ত একটি নতুন প্রস্তাব হাজির করে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ ৯০ দিনের জন্য রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আগেই মন্ত্রিসভার লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। তবে বেশ কিছু মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন বা স্থগিত করা যাবে না।

সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থার মেয়াদকালে আইনের চোখে সবার সমতার বিধান লঙ্ঘন করা যাবে না; ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী–পুরুষ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো বৈষম্য করা যাবে না; ধর্ম পালন বা প্রচারের অধিকার সীমিত করা যাবে না; জীবনের অধিকার রক্ষার বাধ্যবাধকতা থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না এবং কোনো ব্যক্তিকে যথেচ্ছভাবে তাঁর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না; কোনো ব্যক্তিকে নির্যাতন করা বা তাঁর সঙ্গে নিষ্ঠুর, অমানবিক বা মর্যাদাহানিকর আচরণ বা শাস্তি দেওয়া যাবে না; কোনো ব্যক্তির ওপর ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের সময় প্রযোজ্য অর্থদণ্ডের চেয়ে বেশি বড় ধরনের জরিমানা আরোপ করা যাবে না; চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার অধিকারের ওপর কোনো ধরনের বাধানিষেধ আরোপ করা যাবে না।

আলোচনায় প্রায় সব দল বিদ্যমান বিধান পরিবর্তনের পক্ষে মত দেয়। তবে জরুরি অবস্থা জারির পর মৌলিক অধিকার বলবৎ থাকবে কি না, জরুরি অবস্থার মেয়াদ সর্বোচ্চ কত দিন হবে, মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন হবে নাকি শুধু প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনে জরুরি অবস্থা ঘোষণা বৈধতা পাবে—এসব প্রশ্নে মতভিন্নতা দেখা দেয়।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচবার জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। প্রতিবারই হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। ক্ষমতা রক্ষার জন্য। তিনি প্রস্তাব করেন, সরকারি দল ও বিরোধী দলের সমন্বয়ে সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারি করবেন। মৌলিক অধিকার–সংক্রান্ত বিষয়ে আরও আলোচনার দরকার আছে।

এনসিপির জাবেদ রাসিন জরুরি অবস্থা জারির বিধানকে তিন ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব দেন। প্রথমত, যুদ্ধাবস্থা বা বহিঃ আক্রমণ, এটি হলে সংসদের অনুমোদন নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, মহামারি বা দুর্যোগ পরিস্থিতি, এটি হলে মন্ত্রিসভার মাধ্যমে ঘোষণা করা যায়। আর অভ্যন্তরীণ গোলযোগ—এ ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার স্থগিত করা যাবে না।

এই আলোচনার শেষ পর্যায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা সহজে শেষ হবে না। জরুরি অবস্থা জারির বিধান সংশোধনের বিষয়ে সবাই একমত। কী কী সংযোজন–বিয়োজন হবে, তা পরবর্তী সংসদে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যায়।

একপর্যায়ে এনসিপির জাবেদ রাসিন বলেন, প্রায়ই পরবর্তী সংসদে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন কীভাবে, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ঐকমত্য কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তাহলে আলোচনা ভেঙে দেন, আমরা চলে যাই।’

আলোচনার এক পর্যায়ে সালাহউদ্দিন আহমদ কমিশনের উদ্দেশে বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ে ছয়–সাত দিন আলোচনা হচ্ছে, আমার তো আপনাদের উদ্দেশ্য নিয়েই সন্দেহ হচ্ছে।’

আলোচনা শেষে বিকেলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা কোনো পরিস্থিতিতেই যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত না হয়, সেটা নিশ্চিত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত। বিদ্যমান সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদের (ক), (খ), (গ)–এর ক্ষেত্রে সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন করার ব্যাপারেও দলগুলো একমত। আগামী বৃহস্পতিবার আলোচনা শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ