নির্বাচন যত দেরি হবে, তত বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে: মির্জা ফখরুল
Published: 7th, July 2025 GMT
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নেতা-কর্মীদের মানুষের কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন। সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি কী? মানুষের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি করেন। বিএনপিকে যেন মানুষ ভালোবাসে। বলে, “হ্যাঁ, বিএনপি ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নাই।” এই জিনিসটাকে আমাদের তৈরি করতে হবে। সেই জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।’
আজ সোমবার দুপুরে সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকার সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও মহানগর বিএনপির ব্যবস্থাপনায় এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের উদ্যোগে দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাগফিরাত কামনায় এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় এ দোয়া মাহফিল হয়। পাশপাশি আলোচনা সভাও হয়েছে।
দোয়া ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু) ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে কথা বলে ছাব্বিশের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের একটা সময় ঠিক করেছেন।’ এরপর বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, সরকারকে বলতে চাই, অন্য রাজনৈতিক দলকে বলতে চাই, নির্বাচন যত দেরি হবে, তত বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে।’
দ্রুত নির্বাচন না হলে বিভিন্ন সংকট দেখা দেবে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিনিয়োগ আসবে না। ইনভেস্টমেন্ট (বিনিয়োগ) হবে না। আমার মায়েরা–মেয়েরা আরও বেশি নিরাপত্তা হারাবে। মবোক্রেসি আরও বাড়বে। জুডিশিয়াল সিস্টেম ভেঙে পড়বে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে। সে জন্য দরকার একটি নির্বাচিত সরকার। যে সরকারের পেছনে মানুষ আছে, সে সরকারের পেছনে জনসমর্থন আছে। নির্বাচিত সরকারের চাইতে শক্তিশালী কোনো সরকার হতে পারে না।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যেন খারাপ কথা কেউ বলতে না পারে। আমাদের দিকে আঙুল তুলে যাতে বলতে না পারে যে আমরা খারাপ কাজ করছি, কারও জমি দখল করেছি, রাস্তা দখল করেছি, চাঁদাবাজি করেছি। এ কথা যেন কেউ না বলতে পারে। সবাইকে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’
২০২৪ এবং এর আগের ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য অনেকে বুকের রক্ত রাস্তায় ঢেলে দিয়েছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের নেতা যাঁরা এখানে বসে আছেন, তাঁদের অনেককে পায়ে-হাতে দড়ি লাগিয়ে মাসের পর মাস কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে এই সিলেটে। অনেককে পিটিয়ে পিটিয়ে শরীর জর্জর করেছে হাসিনা সরকার। হাতে-পায়ে বেড়ি দিয়ে আটকে রাখত। এই অত্যাচার–নির্যাতন সহ্য করে আমরা এখন এখানে।’
শেখ হাসিনা এমনি এমনি হঠাৎ পালাননি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বহুদিনের সংগ্রাম, বহু মানুষের ত্যাগ স্বীকার, বহু মানুষের রক্ত, বহু মাতার কান্না—সব মিলিয়ে এই ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছি। এখন ফ্যাসিবাদমুক্ত হলাম, ঠিক আছে। এখন করবটা কী? আমরা তো বলেছি, আমাদের এই লড়াইটা হচ্ছে গণতন্ত্রের লড়াই। অর্থাৎ আমরা বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে সবার অধিকার পূর্ণ করা হবে। ভোট দিতে পারবে মানুষ, যেখানে কথা বলতে পারবে, বাক্স্বাধীনতা থাকবে।’
বাংলাদেশ কি চিরকাল দরিদ্র দেশ হয়ে থাকবে? চিরকাল নিচে পড়ে থাকবে? এসব প্রশ্ন রেখে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সেই বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেখেছিলেন। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে তিনি খাল কেটেছিলেন গ্রামে গ্রামে গিয়ে। সে বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই, যে বাংলাদেশের জন্য আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া গ্রামে-গ্রামান্তরে চারণকবির মতো গণতন্ত্রের গান গেয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন। আমরা সেই স্বপ্ন দেখতে চাই।’
সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান (হাবিব), খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, তাহাসিনা রুশদীর (লুনা), এনামুল হক চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এর আগে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি ফ্লাইটে মির্জা ফখরুল সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.
সম্মাননা অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী। বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ (টুকু), এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ব এনপ র ব এনপ র স সরক র র উপদ ষ ট র সদস য আম দ র রহম ন ফখর ল আবদ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আ. লীগ নেতাদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণার দাবি এনডিএমের
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও আমজনগণ পার্টি নেতারা বৈঠক করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। বৈঠকে এনডিমের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন এই দুই দলের নেতারা। এনডিএমের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন দলটির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। আমজনগণ পার্টির আহ্বায়ক রফিকুল আমীনের নেতৃত্বে দলের কয়েকজন নেতা বৈঠকে অংশ নেন। উভয় বৈঠকে অন্য নির্বাচন কমিশনাররা এবং ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এনডিএমের চার দাবি
বৈঠকে লিখিতভাবে চারদফা দাবি জানান এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। এসব দাবির মধ্যে আছে– সরকারের নির্বাহী আদেশে কার্যক্রম বা নিবন্ধন স্থগিত থাকা রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় বা জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের কমিটির সদস্য ও অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির যেকোনো সদস্যকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আবেদনের নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে এতে আরও বলা হয়, আসন পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে জেলার মোট আসন অপরিবর্তিত রাখার পাশাপাশি এক জেলার আসন অন্য জেলায় স্থানান্তর করা যাবে না। সব উপজেলাকে অবিভাজিত রাখতে হবে। জনসংখ্যা, আসনওয়ারী ভোটার সংখ্যার তারতম্য, ভৌগোলিক সীমারেখা, যাতায়াত ব্যবস্থা, জনপ্রত্যাশা ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে। এছাড়া নির্বাচনী ব্যয়সীমা ৪০ লাখ টাকায় উন্নীত ও সুনির্দিষ্ট আচরণবিধিসহ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির দাবি করেছে এনডিএম।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ববি হাজ্জাজ বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যকরী পদধারী বড় নেতা যারা ছিলেন, তারা যেন ওই নাম লুকিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় না আসে, সেই ব্যবস্থা করার জন্য সিইসি’র কাছে দাবি করেছি। নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নিবন্ধিত সব দলের সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করার দাবি করেন এনডিএম চেয়ারম্যান।
উৎসবমুখর নির্বাচন চায় আমজনগণ পার্টি
সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে আমজনগণ পার্টির আহ্বায়ক রফিকুল আমীন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা ইসিতে নিবন্ধনের আবেদন করে আনারস প্রতীক চেয়েছি। আমরা একটি উৎসবমুখর নির্বাচন চাই।’
গত ১৭ এপ্রিল ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনের নেতৃত্বে আমজনগণ পার্টি আত্মপ্রকাশ করে। আত্মপ্রকাশের দিনই ইসিতে নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর আবেদন জমা দেয় তারা। এ খবর প্রচার হওয়ার পর একই দিন ডেসটিনির ক্ষতিগ্রস্ত অংশীদার ও গ্রাহকরা ইসি ভবনের সামনে এসে দলটিকে নিবন্ধন না দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেন। এর আগে অর্থপাচার ও ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা দু'টি মামলায় দীর্ঘ দিন কারাভোগ করেন রফিকুল আমীন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মুক্তি পান তিনি।