এইচএসসি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রে বেশি নম্বর পেতে হলে
Published: 7th, July 2025 GMT
প্রিয় পরীক্ষার্থী, তোমরা যারা বিজ্ঞান বিভাগের আছ, বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটির পর এ বিভাগ থেকে প্রথমেই পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা। তাই এর প্রস্তুতি নিতে হবে সঠিকভাবে, যেন ভালো নম্বর পেতে পারো।
পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি ও কৌশল প্রয়োজন। পদার্থবিজ্ঞান প্রথম পত্রের প্রস্তুতির জন্য কিছু নিয়ম দেওয়া হলো।
অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বিগত সালগুলো দেখলেই অধ্যায়ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা যাবে। বইয়ের যেসব বিষয় থেকে সব সময় প্রশ্ন আসে, সেগুলোই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচিত। তাই টেস্ট পেপার, যেখানে বিগত সালের প্রশ্ন থাকে, সেটার সঙ্গে বই মিলিয়ে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সহজেই বের করে ফেলতে পারবে। বই থেকে এসব বিষয় বারবার পড়তে হবে, মৌলিক ধারণা পরিষ্কার করার জন্য।
সংজ্ঞা পড় ভালো করেতুমি যে বইটি অনুসরণ কর, সেই বইয়ের পেছনেই অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা দেওয়া থাকে। এ ছাড়া বইয়ের ভেতর থেকে কোনো বিষয় যখন পড়বে, সেই সঙ্গে সংজ্ঞাটিও পড়ে ফেলবে। কারণ, প্রতিটি অধ্যায়ের সব সংজ্ঞাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি সংজ্ঞায় নম্বর থাকে ১। ‘এ প্লাস’ পাওয়ার ক্ষেত্রে এই ১ নম্বর কখনো কখনো অনেক মূল্যবান হয়ে দাঁড়ায়।
অনুধাবনমূলক অংশএ ক্ষেত্রে বইয়ের চিত্র ও ব্যাখ্যাগুলো ভালো করে পড়তে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি বিষয়, বিভিন্ন ঘটনার কারণ ও ব্যাখ্যাগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলোপ্রতিটি অধ্যায়ের সূত্র জানা খুবই জরুরি। গাণিতিক সমস্যা সমাধানের বিকল্প নেই। আশা করি, তাই সূত্রগুলো নোট করে পড়ার টেবিলের সামনে লাগিয়ে রেখেছ। প্রতিদিন একবার করে হলেও সূত্রগুলো চোখের সামনে পড়ে। এভাবেই ধীরে ধীরে তা আয়ত্তে চলে আসবে।
গাণিতিক সমস্যা সমাধানপদার্থবিজ্ঞানের একটি বড় অংশজুড়েই রয়েছে গাণিতিক সমস্যা সমাধান। সৃজনশীলের প্রতিটি প্রশ্নের গ ও ঘ নম্বরে গাণিতিক সমস্যা থাকবে, যেখানে মোট ৭ নম্বর থাকে। অনুশীলনই একমাত্র গাণিতিক সমস্যা সমাধানের সহজ উপায়। যত বেশি অনুশীলন করতে পারবে, তত বেশি দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধানের চেষ্টা ও চর্চা করলে গাণিতিক সমস্যাগুলো ধরতে পারবে। সমাধান করাটাও অনেকটাই সহজ মনে হবে।
বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণবিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে যেমন ধারণা পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি প্রশ্ন কমন পড়ার সুযোগ বেড়ে যায়। তাই বোর্ড ভেদে গুরুত্ব বুঝে সাজেশন তৈরি করে বারবার পড়তে হবে।
প্রশ্নের মান বিভাজন ও সময় ব্যবস্থাপনাপ্রশ্নের মান বিভাজনের ওপর লক্ষ্য রেখে সময় নির্ধারণে মনোযোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তরের ক্ষেত্রে ২৫ মিনিটের মতো হাতে রাখতে হবে। প্রতিটি এমসিকিউয়ের জন্য এক মিনিট করে বরাদ্দ রাখতে হবে। বাকি সময় প্রশ্নপত্র ভালো করে পড়া ও উত্তর রিভিশনের জন্য হাতে রাখতে হবে। এভাবে অনুশীলন করলে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে পরীক্ষা হলে সময়ের মধ্যে লেখা শেষ ও রিভিশন করা সম্ভব হবে।
অধ্যায়ভিত্তিক প্রস্তুতি আলোচনা১.
২. নিউটনীয় বলবিদ্যা: এ অধ্যায় থেকে সংঘর্ষ, জড়তার ভ্রামক, কৌণিক ভরবেগ, টর্ক নির্ণয়, কেন্দ্রমুখী বল ও ব্যাংকিং থেকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। তাই এই বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে অনুশীলন করতে হবে।
৩. কাজ, ক্ষমতা ও শক্তি: এ অধ্যায় থেকে কর্মদক্ষতা, কুয়া ও পাম্পের গাণিতিক সমস্যা, হেলানো তল ও শক্তির নিত্যতা সূত্র অতি গুরুত্বের সঙ্গে পড়তে হবে।
৪. মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ: এ অধ্যায় থেকে অভিকর্ষজ ত্বরণের পরিবর্তন, মহাকর্ষ সূত্র, মুক্তি বেগ ও কৃত্রিম উপগ্রহসংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
৫. পদার্থের গাঠনিক ধর্ম: স্থিতিস্থাপক গুণাংক ও পয়সনের অনুপাতসংক্রান্ত অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৬. পর্যায় বৃত্ত গতি: বিভিন্ন উচ্চতায় সরল দোলক গতি ও পর্যায়কাল, স্প্রিং ও সরল নন্দিত গতি গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
৭. আদর্শ গ্যাস ও গ্যাসের গতিতত্ত্ব: আদর্শ গ্যাস সমীকরণ অধ্যায়টি ভালো করে পড়বে। এ অধ্যায়টি পরীক্ষা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: শাহরীন খান, প্রভাষক, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ণ ত ক সমস য প রস ত ত পদ র থ র জন য পর ক ষ বইয় র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)