ভরা মৌসুমেও চালের দাম বৃদ্ধি বিষয়ে সব অভিযোগ পুরোপুরি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। তিনি বলেছেন, দাম কিছুটা বেড়েছে বটে, তবে খুব বেশি নয়। বাজারে চালের দাম যেন আর না বাড়ে, সে বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারি আছে।

সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জবাবে এ কথা বলেন।

আগামী মাসে ওএমএস (উন্মুক্ত বাজারে বিক্রি) ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু হলে বাজারে চালের দাম আবারও স্থিতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন খাদ্য উপদেষ্টা।

সরকারি পর্যবেক্ষণের বাইরে দেশের খুচরা বাজারে চালের দাম হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে মোটা চালের দাম কেজিতে ৭ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকায় এবং মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৫ টাকায়।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে সরবরাহের ঘাটতি নেই। চাহিদাও বাড়েনি। পরিবহন ব্যয় বা শ্রমিক মজুরিও বাড়েনি। 

ডেমরার চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেছেন, ঈদের পর হঠাৎ দাম বাড়তে শুরু করেছে। অথচ, গুদামে যথেষ্ট সরবরাহ আছে।

আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, নাগরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে খাদ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে সক্ষমতা অর্জন। আমরা যদি খাদ্যের গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ বাড়বে এবং রপ্তানি আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি জানান, জাপান সরকারের সহায়তায় একটি ঋণচুক্তির আওতায় ঢাকায় একটি আধুনিক নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার নির্মিত হচ্ছে। এটি হবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) ‘জাতীয় রেফারেন্স পরীক্ষাগার’। একইসঙ্গে ঢাকায় গড়ে তোলা হবে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কার্যালয় ভবন। চট্টগ্রাম ও খুলনায় বিভাগীয় পর্যায়ে আরো দুটি পরীক্ষাগার ও কার্যালয় ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত শিনইচি সাইদা এবং জাইকা (জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা) বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি তোমোহিদে ইচিগুচি।

জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, জ্বালানি, সড়ক, সেতু, মেট্রোরেল, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে জাপান অনেক বছর ধরে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে। এখন নিরাপদ খাদ্য একটি নতুন ক্ষেত্র হিসেবে আমাদের সহযোগিতার পরিধিকে আরো বিস্তৃত করেছে। এটি অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।

তিনি আরো বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ কোনো একক সংস্থার কাজ নয়। এটি সমন্বিত প্রচেষ্টা, যেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন ও সমন্বয় প্রয়োজন। একক অনুমোদন ব্যবস্থা চালু হলে এ খাতে কার্যকর অগ্রগতি সম্ভব হবে।

রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্তসংখ্যক নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক ও পরীক্ষাগারে দক্ষ জনবল নিয়োগে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন খাদ্য সচিব মো.

মাসুদুল হাসান। তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদী ও আংশিক সমাধান যথেষ্ট না। আমাদের যা প্রয়োজন, তা হলো—একটি সম্পূর্ণ আধুনিক নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) এবং জাইকার ‘এস্টার্ক’ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সহযোগিতায় আধুনিক নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করছে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ।

স্বাগত বক্তব্যে বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, জাইকা আমাদের পাশে থেকে নিরাপদ খাদ্য খাতে যে নিরলস সহযোগিতা করছে, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তাদের সহযোগিতা আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির পথকে মসৃণ করেছে।

ঢাকা/এএএম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ন র পদ খ দ য পর ক ষ গ র সহয গ ত বল ছ ন আম দ র সরক র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি পানির লাইনে পোকা, শামুক, দুর্গন্ধ

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের যাত্রা সাত বছর আগে শুরু হলেও এখনো সুপেয় পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকেরা। প্রায় দেড় লাখ নিম্নআয়ের মানুষের চাহিদা থাকলেও সংযোগ আছে মাত্র সাত হাজার পরিবারের। বিকল্প উপায়ে বাসিন্দারা সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে পানি তুলছেন, যা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনা আল মজীদ বলেন, ‘পৌরসভা থাকার সময় যে সব পানির গ্রাহক ছিলেন, এখনো তাঁরাই আছেন। পানির সংযোগ ও পাম্পহাউসগুলো পৌরসভার সময়ের পুরোনো। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর জনগণ বেড়েছে, কিন্তু পানি সরবরাহের সক্ষমতা বাড়েনি। আমাদের রাজস্ব আয় খুব সামান্য, সরকার থেকে বিশেষ প্রকল্প দেওয়া না হলে বড় কোনো প্রকল্প নেওয়ার সক্ষমতা নেই।’

টাকায় কেনা দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানি

নগরের বাসিন্দাদের প্রতি মাসে পানি সংযোগের জন্য ১৫০ টাকা বিল দিতে হয়। এর সঙ্গে হোল্ডিং ট্যাক্সে যোগ হয় পানির রেইট খাতে মোট বিলের ৩ শতাংশ চার্জ। তবু সরকারি লাইনে আসে দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানি। এই পানি ব্যবহারে শরীরে চুলকানিসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের।

ময়মনসিংহ নগরের বাঁশবাড়ি কলোনিতে প্রায় তিন হাজার নিম্নআয়ের পরিবারের বসবাস। সেখানে আছে সিটি করপোরেশনের পানির সংযোগ। প্রতিদিন সকাল ৭টা, দুপুর ১২টা ও বিকেল ৪টায় লাইনে পানি আসে। পানি পেতে বাসিন্দারা আগেভাগেই বালতি-বোল পেতে রাখেন। ময়লা পানি আসায় পাইপ ও কলের মুখে কাপড় বা টিস্যু ব্যাগ বেঁধে রাখেন, যাতে কিছুটা ছেঁকে নেওয়া যায়।

ময়না বেগম নামের এক বাসিন্দা বলেন, পানিতে পোকা ও শামুক পর্যন্ত আসে। এ থেকে ভয়ানক দুর্গন্ধ বের হয়। এই পানি ব্যবহার করলে শরীরে চুলকানি হয়।
আম্বিয়া খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেড় শ টাকা বিল দিই, আবার পচা পানি পাই—এইডা আমরা চাই না। আমরা ভালা পানি চাই।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ‘বর্তমানে সিটি করপোরেশন বিষয়টিকে একেবারে অবহেলা করছে। দূষিত পানি ঘরে ঘরে যাচ্ছে। আমরা চাই, প্রতিটি ওয়ার্ডে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হোক।’

তুলনামূলক পরিষ্কার পানি পেতে পাইপের মুখে কাপড় বাঁধছেন এক নারী। সম্প্রতি নগরের বাঁশবাড়ি কলোনিতে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ রপ্তানি চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত
  • ৩ দিন বিদ্যুৎহীন মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
  • তেল চুরি শুরু জাহাজ থেকে
  • ২০০ বছর পর বন্ধ হচ্ছে ‘বেকার অ্যান্ড টেইলর’
  • পাকিস্তানের প্রতিটি ইঞ্চি এখন ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের নাগালে: রাজনাথ সিংয়ের হুমকি
  • রাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছেন না ট্রাম্প
  • হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি
  • সরকারি পানির লাইনে পোকা, শামুক, দুর্গন্ধ
  • হোয়াইট হাউজ থেকে খালি হাতে ফিরলেন জেলেনস্কি
  • দ্রুত বিদ্যুৎ-গ্যাস দিন, চালু করুন