কুবি উপাচার্যের মেয়ের পোষ্য কোটায় ভর্তি নিয়ে বিতর্ক
Published: 7th, July 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর মেয়ে পোষ্য কোটায় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা সমালোচনা।
উপাচার্যের পোষ্য কোটা ব্যবহার আইন অনুযায়িই হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান জানিয়েছেন, এই ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। তবে উপাচার্যের উচিত এসব বিষয় এড়িয়ে চলা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছর মেধায় কুবিতে যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের প্রাপ্ত নম্বর ১০০ এর মধ্যে ৬০ এর উপরে। কিন্তু কুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড.
আরো পড়ুন:
গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠালেন জবি শিক্ষার্থীরা
উপাচার্যরা দায়িত্ব চেয়ে নেননি, হাতে-পায়ে ধরে তাদের দায়িত্ব দিয়েছি: শিক্ষা উপদেষ্টা
বিগত সময়ে কুবিতে উপাচার্য হিসেবে আসা শিক্ষকরা পোষ্য কোটা ব্যবহার করেননি। এবার পোষ্য কোটা ব্যবহার করার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একেবারেই নতুন একটি ঘটনা। এই বিষয়টি অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে কিনা এবং ঘটলে কেমন প্র্যাকটিস রয়েছে জানতে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা হয়। তারাও বিষয়টি নতুন শুনছেন বলে জানান।
এছাড়া, নিয়ম রয়েছে ভর্তি পরীক্ষায় যদি কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিকটাত্মীয় কেউ অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তারা ভর্তি পরীক্ষার কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। কিন্তু জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “ডেপুটেশন অস্থায়ী একটি বিষয়। বাইরে থেকে কেউ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে সে ক্ষেত্রে এটি (পোষ্য কোটা) প্রযোজ্য হবে না। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিষয় নিয়ে আমি কনফিউজড।”
পরীক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি বলেন, “কারো সন্তান বা নিকটাত্মীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে তিনি পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন না। এটি সর্বত্রই আছে।”
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, “আমাদের এ রকম কোনো সমস্যা এখনো হয়নি। তাই বলতে পারছি না। তবে আমাদের এখানেও কোটার একটি কমিটি রয়েছে, এই কমিটি কোটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। যেহেতু এ রকম কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি, তাই কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি।”
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) রেজিস্ট্রার ড. মনজুরুল হক বলেন, “আমাদের এখানে পোষ্য কোটা বলতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরই বুঝি। তবে, আপনি (প্রতিবেদক) যে বিষয়টি বলছেন, এমন পরিস্থিতি আমাদের এখানে কখনো হয়নি।”
নিকটাত্মীয় পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “কারো নিকটাত্মীয় থাকলে তিনি আগে থেকেই অবগত করে দেন এবং তিনি পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “এখানে এ রকম কিছু লেখা নেই যে তিনি (উপাচার্য) এই কোটা পাবেন না। তিনি তো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু ব্যবহার করছেন। তিনি চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত এবং তিনিও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দিচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “কোথাও কী লেখা রয়েছে, তিনি (উপাচার্য) এই সুবিধা পাবেন, এটি পাবেন না? ভর্তি পরীক্ষার বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে আলোচনা হয়। এরপর সেটি একাডেমিক কাউন্সিলে ওঠে এবং তারপর সিন্ডিকেটে যায়। তখন কোনো সদস্য না করেননি যে এটি এমন হবে না। কোটার বিষয়টি স্পেসিফিক না।”
পরীক্ষা কমিটিতে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “উপাচার্য কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন। ইউনিট অনুযায়ী ভাগ করে দিয়েছেন। তবে ‘এ’ ইউনিটের কোনো দায়িত্ব তিনি পালন করেননি। কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটিতে পদাধিকারী বলে তিনি সভাপতি ছিলেন। এখানে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। তিনি দায়িত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির, কিন্তু তিনি যাননি। তিনি ‘এ’ ইউনিটের দায়িত্ব ‘এ’ ইউনিটের আহ্বায়ককে দিয়ে পালন করিয়েছেন।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, “আসলে এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট নীতিমালা নেই। তবে, নিয়মগুলো মেনেই করা হয়েছে। নিয়ম লঙ্ঘন করে কিছু হয়নি। আমরা বিবেচনা করেছি উনার (উপাচার্য) মেয়ে বাচ্চা। তিনি দূরে কোথাও দিতে চাচ্ছেন না। এটি বিবেচনা করা হয়েছে।”
সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটি কেন্দ্রীয় পরীক্ষা কমিটিতে আলোচনা হয়েছিল।”
নিকটাত্মীয় কেউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে পরীক্ষার কোনো দায়িত্বে থাকা যায় না, কিন্তু উপাচার্য থেকেছেন। এ নিয়ে ড. মাসুদা কামাল বলেন, “তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বে ছিলেন উপাচার্য হিসেবে। কিন্তু ‘এ’ ইউনিটে যেহেতু উনার মেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। তাই ‘এ’ ইউনিটের কোনো কার্যক্রমে তিনি যাননি।”
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, “যেহেতু উপাচার্য কোনো স্থায়ী পদ নয়, সরকার চাইলে যেকোনো সময় সরিয়ে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে এমন সুবিধাগুলো (পোষ্য কোটা) না নেওয়ায় ভালো। তিনি এখানে স্থায়ী কর্মকর্তা না, ডেপুটেশনে আসছেন। তাই এগুলো বড় বিতর্ক তৈরি করে। এখানে তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয় আছে। এছাড়া, কারো নিকটাত্মীয় যদি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তার ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রমে থাকার সুযোগ নেই।”
তিনি আরো বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই। তবে একজন উপাচার্যের উচিত এমন বিতর্কিত বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা। এসব বিতর্কিত বিষয়ে জড়িত হয়ে গেলে উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না।”
সার্বিক বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমি এখানে একা কিছু করিনি। একাডেমিক কাউন্সিল ও অন্যান্য জায়গা থেকে অনুমোদিত হয়েছে বিষয়টা। কোনো জায়গা থেকে আপত্তি জানানো হয়নি।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ন দ র য় কম ট র উপ চ র য র আম দ র এ পর ক ষ য় ম হ ম মদ ইউন ট র ব যবহ র ব তর ক ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
দুই অঙ্কে গড় মূল্যস্ফীতি
গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ১৩ বছর আগে দুই অঙ্কের ঘরে ছিল বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি। ২০১০-১১ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয় ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি গত কয়েক মাস ধরে কমছে। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এটি প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ প্রতিবেদনটি সোমবার প্রকাশ করেছে বিবিএস। প্রতি মাসে মাঠ পর্যায় হতে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দামের তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করে থাকে সংস্থাটি। প্রাপ্ত তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রণয়ন করা হয়। এ সূচক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কতটা বাড়ল তার শতকরা হারই পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি। এটির ১২ মাসের চলন্ত গড় হিসাব হচ্ছে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি।
বিবিএসের তথ্য অনুসারে, গত জুন মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে হয়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। মে মাসে এটি ছিল ৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বিবিএসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে দেখা যায়। তবে গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমে আসে। টানা তিন মাস কমার পর চলতি বছরের মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ফের বাড়ে মূল্যস্ফীতি। এপ্রিল থেকে আবারও কমার ধারার ফিরে মূল্যস্ফীতি। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একটি বড় অংশ জুড়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি থাকায় অর্থবছরটিতে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক অর্থবছর ধরেই দেশে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে বাস্তবতার আলোকে সে লক্ষ্যমাত্রায় সংশোধন আনা হয়। গড় মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯ শতাংশ।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। ওই অর্থবছরে ৯ শতাংশের কিছু বেশি হয় গড় মূল্যস্ফীতি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।