ইবিতে স্নাতক পাসের ১ বছর পরও মিলছে না নম্বরপত্র
Published: 7th, July 2025 GMT
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০১৮-১৯ বর্ষের অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বছরখানেক আগেই স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু নম্বরপত্র না পেয়ে উচ্চশিক্ষার আবেদনসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।
সফটওয়্যার সিস্টেমে সমস্যা থাকার কারণে নম্বরপত্র উত্তোলনে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে কবে নাগাদ সমাধান হবে সে বিষয়েও নিশ্চিত বলতে পারেননি তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্বে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের সনদ ও নম্বরপত্র প্রদান করা হত। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে অনলাইনের মাধ্যমে এসব ডকুমেন্টস প্রদানে প্রিন্ট সেবা মাধ্যম চালু হয়। স্নাতক ২০১৮-১৯ বর্ষ থেকে পরবর্তী বর্ষের শিক্ষার্থীরা এই সেবা পাবেন বলে জানানো হয়। তবে বাস্তবে কেবল সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট প্রদান করা হলেও নম্বরপত্র পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
কুবি উপাচার্যের মেয়ের পোষ্য কোটায় ভর্তি নিয়ে বিতর্ক
গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠালেন জবি শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, “২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্নাতক শেষ করি। তবে ১ বছর পরও নম্বরপত্র হাতে পাইনি। চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারিতে মাস্টার্স শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়েছি। অন্য সব কাগজপত্র তুলতে পারলেও গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস নম্বরপত্র না নিয়েই ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে। কবে নাগাদ প্রদান করা হবে সেটাও আমাদের নিশ্চিত করা হয়নি।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হাসান বলেন, “আমাদের শিক্ষাবর্ষের অনেকেই ইতোমধ্যে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন। তবে দুঃখজনকভাবে বলতে হয়, এখনো অনেকেই নম্বরপত্র পাননি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “সফটওয়্যার সিস্টেমের অজুহাতে কাগজপত্র উত্তোলনে বারবার ভুল ও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। নিয়মমাফিক প্রয়োজনীয় নথি জমা দেওয়ার পরও নম্বরপত্র দেওয়া হচ্ছে না। দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করা জরুরি।”
বৈষম্যবিরোধী ইবির সমন্বয়ক এসএম সুইট বলেন, “কাগজপত্র উত্তোলনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা আগের মতোই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নতুন বাংলাদেশে এমন আচরণ লজ্জাজনক। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনে এবং দ্রুত নম্বরপত্র প্রাপ্তিতে প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা রাখছি।”
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর পরিচালক ওয়ালিউর রহমান বলেন, “সফটওয়্যারের সিস্টেমের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে মূলত পূর্বের কোম্পানির সঙ্গে কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নতুনভাবে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। তারপর তারা কাজ শুরু করবে। কিন্তু এখনো চুক্তিপত্র হয়নি কিংবা কোম্পানিও ঠিক হয়নি বলে জানি। কবে নাগাদ সমাধান হতে পারে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক ড.
তিনি বলেন, “নতুনভাবে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। নতুন করে সফটওয়্যার ডেভেলপ ও ডিজাইন করতে হবে। এটা সময় সাপেক্ষ এবং এর সঙ্গে আর্থিক বিষয়াদিও জড়িত। বিষয়টির সমাধানে অফিসিয়ালি কাজ চলছে। আশা করছি, দ্রুতই সমাধান আসবে।”
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সফটওয় য র ব ষয়ট সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী তালিকায় থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত এবং একই অভিযোগে ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার বা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার
ববির ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় থাকা ইবির ১৯ জন শিক্ষক, ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ‘শাস্তি নির্ধারণ কমিটি’ করবেন উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
এদিকে একই অপরাধে জড়িত থাকায় ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। যাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, সেই শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল করা হবে। আর যারা অধ্যয়নরত, তাদের বহিষ্কার করা হবে।
এর আগে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণে গত ১৫ মার্চ আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন।
এই কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবর পর্যালোচনা করে তালিকায় থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নিবর্তনমূলক কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পায়।
কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাময়িক বরখাস্তের তালিকায় থাকা শিক্ষকরা হলেন: ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ ও অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম আক্তারুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মিয়া রাশিদুজ্জামান।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিনসহ আরো রয়েছেন, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন।
সাসপেন্ড হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকায় রয়েছেন প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন খান ও আব্দুল হান্নান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ড. ইব্রাহীম হোসেন সোনা।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শাখা কর্মকর্তা উকীল উদ্দিনসহ তালিকায় নাম রয়েছে ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জে এম ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের শাখা কর্মকর্তা তোফাজ্জেল হোসেন, তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার (ফটোগ্রাফি) শেখ আবু সিদ্দিক রোকন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমানের।
বহিষ্কার ও সদন বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের বিপুল খান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের মেহেদী হাসান হাফিজ ও শাহীন আলম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের রতন রায়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের মুন্সি কামরুল হাসান অনিকসহ তালিকায় রয়েছেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের হুসাইন মজুমদার, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের তরিকুল ইসলাম।
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের মৃদুল রাব্বী, ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের ফজলে রাব্বী, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শাকিল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিমুল খান, আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের কামাল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মাসুদ রানা, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মেজবাহুল ইসলাম বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের তালিকায় রয়েছেন।
সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের অনিক কুমার, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আব্দুল আলিম, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বিজন রায়, শেখ সোহাগ ও শাওনও এই শাস্তি পেয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করায় শাস্তি পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের তানভীর ও শেখ সাদি, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মাজহারুল ইসলাম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মনিরুল ইসলাম আসিফ, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মারুফ ইসলাম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের পিয়াস, বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ফারহান লাবিব ধ্রুব, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের প্রাঞ্জল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের নাবিল আহমেদ ইমন।
ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের রাফিদ, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আদনান আলি পাটোয়ারি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের লিয়াফত ইসলাম রাকিব এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ইমামুল মুক্তাকী শিমুলও শাস্তির তালিকায় রয়েছেন।
এদিকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রকাশ্যে বিরোধিতাকারী হিসেবে এই ৬৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও তাদের উস্কানিদাতা এবং পেছন থেকে আন্দোলন দমনকারী অনেকেই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই অভিযোগ অভিযুক্তদেরও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা/তানিম/রাসেল