বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ইতিহাস গড়ে দেশে ফিরেছে। প্রথম বারের মতো এশিয়ান কাপ ফুটবলের মূল পর্বে খেলবে দক্ষিণ এশিয়ার চ্যাম্পিয়নরা। এরই মধ্যে দেশে ফিরেছেন ঋতুপর্ণা-রুপনারা, পেয়েছেন মধ্যরাতের সংবর্ধনা। কিন্তু এই সংবর্ধনার মঞ্চে ছিল না একটাও পুরস্কারের ঘোষণা, নেই কোনো প্রতীকী চেক কিংবা প্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি। ঝলমলে আয়োজনের আড়ালে তাই ফুটে উঠেছে এক অপূর্ণতার ছবি।
অন্যদিকে ভারতের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। একই বাছাইপর্বে দারুণ পারফর্ম করে মূলপর্ব নিশ্চিত করায় অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) মেয়েদের জন্য ৫০,০০০ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৬১ লাখ টাকার বেশি। শুধু তাই নয়, দেশে ফিরে ভারতের নারী ফুটবলাররাও পেয়েছেন উষ্ণ সংবর্ধনা।
আর বাংলাদেশ? বিমানবন্দর থেকে ঋতুপর্ণাদের সরাসরি হাতিরঝিলের অ্যাম্ফিথিয়েটারে নিয়ে এসে জাঁকজমকপূর্ণ সংবর্ধনা দেয় বাফুফে। উপস্থিত দর্শক, বিশিষ্টজনদের প্রশংসায় ভেসে যায় মেয়েরা। বিলবোর্ড, ডিজিটাল ব্যানার, মঞ্চের আলোকসজ্জা, সবই ছিল চোখধাঁধানো। কিন্তু ছিল না, স্বীকৃতির প্রতীক হিসেবে পুরস্কার ঘোষণা।
বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বক্তব্য দিলেও আর্থিক পুরস্কার সংক্রান্ত কোনো আশ্বাস দেননি। এমনিতেও সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাফুফে গত বছর ৯ নভেম্বর দেড় কোটি টাকা ঘোষণা করেছিল। সেই অর্থ এখনো দিতে পারেনি তারা। আর বেশির ভাগ নারী ফুটবলারই কোনো ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিতে নেই, নেই আয়-রোজগারের নিয়মিত উৎস। কয়েকজন মাত্র পান ৫৫ হাজার টাকার মাসিক সম্মানী। মাঠে জীবনপণ লড়াই করে এশিয়ার টিকিট এনে দেওয়া ফুটবলারদের হাতে এই মুহূর্তে নেই একটি ঘরোয়া লিগও। এমন বাস্তবতায় ফুটবলাররা শুধু ফুল আর করতালির ওপর কতদিন ভরসা করবেন?
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত ব থ আওয় ল প রস ক র ফ টবল র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় শরৎ উৎসব উদ্যাপন
নানা আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরৎ উৎসব-১৪৩২ উদ্যাপিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এ অনুষ্ঠান হয়। চারুকলা অনুষদের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত, নৃত্যকলা, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহযোগিতায় এ উৎসব হয়।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখের সভাপতিত্বে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শরৎ উৎসব। পরে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, ‘চারুকলার প্রাঙ্গণে যখনই আমরা আসি, যেকোনো উৎসবে বা অনুষ্ঠানে আমরা একত্র হই, তখন সব সময় একধরনের ভিন্ন আবহ সৃষ্টি হয়। এখানে আমরা আমাদের লোকজ ও বাঙালি সাহিত্য-সংস্কৃতির একটি সুন্দর প্রকাশ দেখতে পাই।’
অধ্যাপক সায়মা হক আরও বলেন, ‘আজকের শরৎ উৎসবের একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এ ধরনের উৎসব মানুষে-মানুষে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। প্রতিযোগিতামূলক ও ব্যস্ত জীবনে আমরা প্রায়ই একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাই। এই উৎসবগুলো আমাদের পুনরায় একত্র করে, পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে।’
এরপর চারুকলা অনুষদ, সংগীত, নৃত্যকলা এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে গান, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি করা হয়।
সাংস্কৃতিক আয়োজনের অংশ হিসেবে চিত্রকলা প্রদর্শনী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিনজন শিক্ষার্থীকে পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের ফারিয়া নওশিন আহমেদ ও সাজ্জাদুল ইসলাম এবং গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের ফরহাদ আলী।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘আমাদের বৈচিত্র্যময় ঋতুপ্রবাহ আমাদের মনোজগৎকে পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দুই এই চারুকলা অনুষদ। এখন দেখা যায়, ফাল্গুনে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র বাংলাদেশ ও বিশ্বের বাঙালিরা এই উৎসব উদ্যাপন করে।
চারুকলা অনুষদ ঐতিহ্যগতভাবেই সমৃদ্ধ। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এই তিনের সমন্বিত ধারাকে আমরা সব সময়ই স্বাগত জানাই। আমাদের চিত্রকলা যেমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে, তেমনি সংগীত, নৃত্য ও নাটকেরও একই দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃষ্টিশীল চেতনা রয়েছে।’
শরৎ উৎসব নিজস্ব উৎসব উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা বহু বছর ধরে দেখেছি চারুকলার প্রাঙ্গণকে অনেক সময় বিভিন্ন মানুষের খেয়ালখুশিমতো ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা মনে করি, এখন আর সেটা হতে দেওয়া যাবে না এবং আমরা সেটি হতে দিচ্ছি না।’
সাদা দলের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম সরকার দেশের ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে নিয়মিতভাবে উদ্যাপনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্কা গোপ ও নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান তামান্না রহমান।