ক্যারিয়ারে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কাজল। তবে একটি সিনেমায় অভিনয় হয়ে উঠেছিল তাঁর জন্য অস্বস্তির কারণ। ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন তনুজা চন্দ্র। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে কাজল অভিনীত সিনেমা ‘মা’। ছবির প্রচারে প্রায় তিন দশক আগে অভিনয় করা ‘দুশমন’ সিনেমা প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি।

কাজল এই ছবিতে দুই বোনের চরিত্রে মানে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এক বোন ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যায়, অন্য বোন তার বোনের প্রতিশোধ নেয়। কাজল জানালেন, তিনি এই ছবি করতে চাননি, কিন্তু তখন পূজা ভাট তাঁকে রাজি করান।

লাল্লানটপের সঙ্গে আলাপ আলোচনার সময় কাজল জানান, ‘খুব কঠিন চরিত্র ছিল এটি। আমি সিনেমাটি করতে রাজি হইনি। পূজা ভাট ছবিটির জন্য আমার কাছে এসেছিলেন, কারণ তিনি এটি প্রযোজনা করছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন আমি ছবিটি করি। চিত্রনাট্যটা ভালো লেগেছিল। আইডিয়াটা দারুণ ছিল, কিন্তু আমি পর্দায় ধর্ষণের দৃশ্য করতে চাইনি, কারণ একজন অভিনেতা হিসেবে আপনাকে প্রতিটি দৃশ্য একই আবেগ নিয়ে করা উচিত। সেই জন্যই আমি এই চরিত্রে অভিনয় করতে চাইনি।’

‘দুশমন’ ছবিতে কাজল। আইএমডিবি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চর ত র

এছাড়াও পড়ুন:

গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না ৭৭ শতাংশ নারী

দেশের ৭৭ শতাংশ নারীর সন্তান নেওয়ার বিষয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। বিশ্বে এই হার ৬৬ শতাংশ। দারিদ্র্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা সংকট, সামাজিক চাপ নারীর প্রজনন স্বাধীনতাকেও সীমাবদ্ধ করেছে। 

এসব তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর বার্ষিক প্রতিবেদনে। 

সোমবার রাজধানীর গুলশান-২ এ অবস্থিত জাতিসংঘ ভবনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রতিবেদনটি অনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এ বছরের প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী প্রজননবিষয়ক সমস্যার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

ইউএনএফপিএ ১৪টি দেশের ১৪ হাজার মানুষের ওপর এ জরিপ চালিয়েছে। বাংলাদেশের অংশটি বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস) ২০২২ প্রতিবেদন থেকে তথ্য নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএ এ বাংলাদেশের প্রতিনিধি মিস ক্যাথরিন ব্রিন কামকং প্রতিবেদনটির গুরুত্বর্পূণ অংশ তুলে ধরেন। বৈশ্বিক ও জাতীয় জনসংখ্যা প্রবণতা ও উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ বিষয়ে মূল দিকনির্দেশনা উঠে আসে তার বক্তব্যে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ৪৫ শতাংশ মানুষ কাঙ্ক্ষিত পরিবারের আকার বা সন্তান সংখ্যা অর্জন করতে পারবেন কি না অনিশ্চয়তা রয়েছে। আর যাদের বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি, তাদের মধ্যে ৩১ শতাংশ মনে করেন, তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক সন্তানের তুলনায় কম সন্তান জন্ম দিয়েছেন।

এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই প্রায় ৩৭ থেকে ৩৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক সন্তান পেয়েছেন। একই ধরনের পারিবারিক আকাঙ্ক্ষা থাকলেও, বাস্তব জীবনের নানা প্রতিবন্ধকতা অনেকের পক্ষে সেই লক্ষ্য পূরণকে ব্যাহত করছে।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে প্রধানত চার বাধার কারণে এসব জনগোষ্ঠী সন্তান কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক সন্তান নিতে পাচ্ছে। এদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ মানুষ অর্থনীতি সংকটে থাকার কারণে সন্তান নিতে পাচ্ছেন না। ২৪ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে সন্তান নিতে পাচ্ছেন না। ২৪ শতাংশ ভালোসঙ্গীর কারণে সন্তান ধারণে পিছিয়ে রয়েছে। ১৯ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কারণে সন্তান নিতে চান না।

ইউএনএফপিএ প্রতিবেদনে বলা হয়, সমস্যা এখন অধিক জন্ম অথবা জনসংখ্যা হ্রাস নয়  আসল সংকট হচ্ছে সন্তান নেয়ার স্বাধীনতা ও প্রজনন অধিকার নিয়ে। বলছে, বিশ্বের অনেক মানুষ, বিশেষ করে নারী ও তরুণরা, এখনও তাদের প্রজনন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের স্বাধীনতা পান না।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সংকট আরও প্রকট। অনেক নারীই এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না কখন সন্তান নেবেন, কীভাবে নেবেন। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও কিশোরী মাতৃত্ব এখানকার বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে প্রতি তিন নারীর একজন কখনো না কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকার হন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১১ শতাংশ নারী এখনও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের বিষয়ে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ২৫ শতাংশ নারী নিজের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না এবং ২৪ শতাংশ নারী যৌন সম্পর্কে অসম্মতির অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না।

জাতিসংঘ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, ‘এ বছরের প্রতিবেদন প্রচলিত ‘অতিরিক্ত’ বা ‘অপর্যাপ্ত’ জন্মসংখ্যার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে। আসল সংকট হচ্ছে প্রজনন সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতার অভাব। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক জায়গায় নারী ও তরুণেরা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও কাঠামোগত বাধার কারণে নিজেদের প্রজনন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না।”

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বর্তমানে যেখানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ০ দশমিক ৭ শতাংশ এবং বাজেটের ২ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে, সেটি বাড়িয়ে যথাক্রমে ৫ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ করতে হবে। এতে করে প্রয়োজনীয় প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, দক্ষ মিডওয়াইফ ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধের সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

চলুন আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলি, যেখানে প্রজনন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোকে সমর্থন করা হবে, বিচার নয় আর প্রতিটি মানুষ যেন স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে নিজের জীবনের পরিকল্পনা করতে করতে পারবে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৫ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন। বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৫৭ লাখ, যার অর্ধেকই নারী। দুই-তৃতীয়াংশ (প্রায় ১১ দশমিক ৫ কোটি মানুষ কর্মক্ষম বয়সে রয়েছেন, যা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অর্জনের একটি সুযোগ। তবে একই সঙ্গে ৭ শতাংশ মানুষ (১ কোটি ২০ লাখ) ৬৫ বছরের বেশি বয়সী, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত চাপেরও ইঙ্গিত দেয়। 

বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরী (১০-১৯ বছর) জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৯ শতাংশ। আর ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি, যা ২৮ শতাংশ।

প্রতিবেদনটি আরও বলা হয়, বিশ্বজুড়ে মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত সন্তানসংখ্যা অর্জন করতে পারছেন না। কেউ সন্তান নিতে চেয়েও সময়মতো পারেননি, কেউ আবার অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মা হয়েছেন। এমনকি একই ব্যক্তি দুই ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন যা প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় কাঠামোগত দুর্বলতার দিকেই ইঙ্গিত করে। এই সংকট উচ্চ ও নিম্ন উভয় প্রজনন হারের দেশগুলোতেই বিদ্যমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ